ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

জাতীয়

দোলেশ্বর হানিফিয়া জামে মসজিদ


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেড়শ’ বছরের বেশি সময় ধরে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানিফিয়া জামে মসজিদ। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের দোলেশ্বর গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদ। মসজিদটির পুরনো স্থাপনা সম্পূর্ণ ঠিক রেখে সংস্কারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি ঐতিহ্যের বৈচিত্র্য সঠিক সংরক্ষণ হয়েছে। তাই জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে দোলেশ্বর হানিফিয়া জামে মসজিদকে।
গত বুধবার (১ ডিসেম্বর) ইউনেস্কার এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক অফিস এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। ইউনেস্কোর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল অফিস (ফিজি থেকে কাজাখিস্তান পর্যন্ত) বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ কাজগুলোকে প্রতিবছর স্বীকৃতি দেয়। সেজন্য এ পুরস্কারের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ফর কালচারাল হেরিটেজ কনসারভেশন’।
ইউনেস্কো জানিয়েছে, ২০২১ সালে ছয়টি দেশের নয়টি স্থাপনাকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট’ ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি পেয়েছে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানিফিয়া জামে মসজিদ। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মালেশিয়া, চীন, জাপান ও থাই্যান্ডের বিভিন্ন স্থাপনা এবছর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের দোলেশ্বর গ্রামে ১৮৬৮ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। পরে কয়েক দফায় মসজিদটির সম্প্রসারণ করা হয়। কালের বিবর্তনে মসজিদের অবকাঠামো ক্ষয়ে যাচ্ছিল। কয়েক বছর আগে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন স্থানীয় সাংসদ ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। স্থপতি আবু সাঈদ মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে সংস্কার কাজ শুরু হয় এবং ২০১৮ সালে কাজ শেষ হয়। পুরনো মসজিদের পাশেই নির্মাণ করা হয় নতুন আরেকটি মসজিদ। পুরনো মসজিদটি এখন লাইব্রেরি এবং মক্তবে রূপান্তরিত করা হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি জন্য আবেদন করেন স্থপতি আবু সাঈদ মোস্তাক আহমেদ।
ইউনেস্কো বলেছে, ‘টেকসই উন্নয়নের নানান দিক রয়েছে এতে পাশাপাশি পুরনো স্থাপনার ঐতিহ্যের বৈচিত্র সঠিক সংরক্ষণ হয়েছে। এসব স্থাপনার মাধ্যমে ঐতিহ্যের যে বৈচিত্র ধরে রাখা হয়েছে সেটি প্রশংসার।’
স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, ‘দেড়শ বছর আগে চুন-সুরকি দিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদকে পুরনো রূপ দেবার জন্য এবারও চুন-সুরকি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। সাধারনত বাংলাদেশে পুরনো মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে নতুন একটা তৈরি হয়েছে ঠিকই পুরনোকে একেবারে আদি রূপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোক্তা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইউনেস্কোর পুরস্কার পাওয়ার খবর নিজের ফেসবুকে আনন্দ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমাদের পরিবার দীর্ঘ দেড়শ বছর ধরে এ মসজিদ দেখাশোনা করছে। ১৮৬৮ সালে আমার দাদীর বাবা ও দাদার বাবার হাতে এর গোড়াপত্তন। এর একশ বছর পর ১৯৬৮ তে আমার বাবা (প্রয়াত অধ্যাপক হামিদুর রহমান) তৈরি করেন মসজিদের মিনার। বংশ পরম্পরায় দায়িত্ব নেই আমি। ততদিনে এলাকার লোকসংখ্যা বেড়ে গেছে। মুসল্লিদের জায়গা হচ্ছিল না। কেউ বললেন মসজিদ ভেঙ্গে বড় করতে, কেউ বললেন নতুন জায়গায় নতুন মসজিদ বানাতে। আমি চাচ্ছিলাম ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রেখেই নতুন কিছু করার। সেই চ্যালেঞ্জে যুক্ত হন গুণি আর্কিটেক্ট সাঈদ মোস্তাক আহমেদ। তারই ফসল এই পুরস্কার।’