নিজস্ব প্রতিবেদক : আসি আসি করে অবশেষে শীতকাল চলেই আসার মুখে। শীতের পরশ পাওয়ার ঠিক আগ দিয়েই অগ্রহায়নের শেষে এ দেশের বুকে যেন বর্ষার আঁচড় রেখে গেলো প্রকৃতি। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বর্ষার প্রভাবে মাথায় হাত দেশের কৃষকদের।
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে গত তিন থেকে চারদিন ধরে আকাশ থেকে ঝরেছে বৃষ্টি। আর এই বৃষ্টিতেই সারাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলের পাকা ধানের জমিতে পানি জমে ফসল বিনষ্ট হওয়ার মুখে।
সারাদেশের প্রায় সব এলাকার ফসলি জমিতে চাষ হয়েছিলো আমন ধানের। ফলনও হয়েছিলো এ বছর অনেক ভালো। কিন্তু কষ্টের সেই সোনালী ধান ঘরে তোলার ঠিক আগেই বৃষ্টির জলে নষ্ট হওয়ার জোগাড়। কৃষকদের কপালেও দুশ্চিন্তার রেখা। অনেকেই কিছু ফসল ঘরে তুলেছে, বাকি জমির ফসল পানিতে নষ্ট হওয়ার মুখে। কেউ কেউ এখনও শুরুই করেননি ফসল কাটা, যতেœ বড় করা ফসলের দিকে তাকিয়ে তাদের এখন শুধুই চোখের পানি ফেলার অবস্থা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার দেশের প্রায় ৩২টি জেলায় কৃষকদের ফসল বিনষ্ট হয়েছে অসময়ের এই বৃষ্টিতে। প্রায় ২৫ লাখ ২০ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছিলো রোপা আমনসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসলের। বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল। প্রায় সারাদেশ ব্যাপী চাষ হওয়া এসব ফসলের ভেতর ছিলো রোপা আমন, মিষ্টি আলু, বোরো ফসলের বীজতলা, খেঁসারি, মসুর, পেঁয়াজ, রসুন এবং মৌসুমী বিভিন্ন সবজি।
বরিশাল, ভোলা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পিরোজপুরসহ আরও অনেক জেলাতেই কৃষকদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদের’ ফলে সৃষ্ট এই অসময়ী বৃষ্টি।
কৃষকরা বলছেন, অসময়ের এই বৃষ্টি তাদের যে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে, তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। সরকারের কাছে সাহায্যের আকুতিও জানান তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এখনও সর্বোপরি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে নিরীক্ষা করে যাচ্ছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, দেশে এবার আমন ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছিলো। নিজেদের লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন তারা। তবে অগ্রহায়নের এই বৃষ্টি তাদেরকেও এখন নতুন করে হিসাবের খাতা খুলে বসতে বাধ্য করিয়েছে।