ফলোআপ
নিজস্ব প্রতিনিধি : গাজীপুরের কোনাবাড়ি বিসিকের ইমা ইউনানি ল্যাবরেটারিজে কি হচ্ছে?” শিরোনামে অবৈধ ঔষধের ছবি সংবলিত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যা এক প্রকারান্তরে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতো। তথাপি রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইমা ইউনানি ল্যাবরেটারিজ এর বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সকল কর্মকান্ড। গাজীপুর কোনাবাড়ি বিসিক ইমা ইউনানি ল্যাবরেটরীজ এর দূরত্ব চেরাগ আলী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গাজীপুর অফিস থেকে কতো কিলোমিটার? এই প্রশ্ন টা-ই এখন মস্তবোড় একটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সচেতন মহলের নজরে।
জানা গেছে, ইমা ইউনানি ল্যাবরেটারীজ এর মালিক ইকবাল হোসেন লেখাপড়া না জানলেও কবিরাজঘর নামে কোনা বাড়ি আমবাগ রাস্তার বাম পাশে ই আছে তার একটি ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল চিকিৎসা কেন্দ্র। লেখাপড়া না জানা স্বঘোষিত হেকিম/কবিরাজ বা চিকিৎসক স্থানীয় জনগণকে কি ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন সে বিষয় টা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগ ছিলো, ইমা ইউনানি ল্যাবরেটরিতে যে সকল ঔষধ তৈরি ও বাজারজাত করা হচ্ছে সেসব ঔষধ সামগ্রীর লেবেল কার্টনের খসড়া ও চুড়ান্ত অনুমোদন নেই।
উক্ত কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধ সমুহের মধ্যে ইমাফল ৪৫০ এম.এল সিরাপ, ইমাটন ৪৫০ এম.এল সিরাপ, ইমোফিট (শরবত জিনসিন) এই যৌন উত্তেজক সিরাপ টি একই ডি.এ.আর নাম্বার ব্যাবহার করা হচ্ছে, ইমোফিট (শরবত জিনসিন) এটার লেবেল কার্টন কালো রংয়ের যা ৪৫০ এম.এল, ১০০ এম.এল এবং ৫০ এম.এল তিন প্রকারের ইমোফিট তৈরি ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
আবার একই শরবত জিনসিন সিরাপ জিনসিন (শরবত জিনসিন) নাম দিয়ে টকটকে লাল রংয়ে ১০০ এম.এল ও ৫০ এম.এল যৌন উত্তেজক জিনসিন সিরাপ তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একটি সুত্র জানায়, ইমা ইউনানি ল্যাবরেটারীজ এর তৈরি ও বাজারজাত কৃত ইমাফল, ইমাটন সিরাপ তৈরিকালে মাত্রা অতিরিক্ত ডেক্সামিথাসন গ্রুপের কেমিক্যাল এবং সিপ্রোহেপ্টাডিন গ্রুপের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া ইমোফিট (শরবত জিনসিন) ও সিরাপ জিনসিন (শরবত জিনসিন) তৈরিকালেও ভায়াগ্রার কাচামাল ও মাত্রাতিরিক্ত কেফেইন ব্যবহার করা হয়েছে। আর মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল যুক্ত পাওয়ার ফুল এসব ঔষধ সেবন করলে মানবদেহের লিভার কিডনি ও হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি রয়েছে শতভাগ। সাম্প্রতিক কালে কাশিমপুরে স্বামী-স্ত্রী যৌন উত্তেজক ঔষধ খেয়ে মৃত্যুবরণ করায় দেশের জনস্বাস্থ্য আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
এবিষয়ে ইমা ইউনানি ল্যাবরেটারীজ এর মালিক ইকবাল হোসেন এর বক্তব্য পুনরায় জানতে চাইলে তিনি জানান তার কোম্পানির ঔষধের লেবেল কার্টন এর অনুমোদন এর জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এতো মাতামাতির কি আছে? ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লোকজন তো আছে তার তো কিছু ই বলছে না। কোম্পানি ইন্সপেকশন শেষ হলেই উক্ত পদসমূহের লেবেল কার্টন এর অনুমোদন হবে। বর্তমানে তার কোম্পানির ফাইলটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী মোবারক হোসেন গাজীর কাছে আছে বলেও তিনি জানান।
তার কোম্পানির ঔষধ সমুহের মধ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টা এড়িয়ে যান। তিনি আরও বলেন আগেও তো রিপোর্ট হয়েছিল তাতে ইমা ল্যাবরেটরীজ ইউনানীর বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কি ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছে? তিনি পড়াশোনা না জানা স্বঘোষিত হেকিম বা কবিরাজীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোনা বাড়ির কবিরাজ ঘর তার নিজের বসার জন্য, সেখানে তিনি রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, তবে কোন স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ডিগ্রি নিয়েছেন সে বিষয়ে ও তিনি একপর্যায়ে ব্যাস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন এর সাথে কথা বললে তিনি গাজীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন, পরবর্তী সময়ে পুনরায় তার বক্তব্য জানতে মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।
উপ-পরিচালক মির্জা আনোয়ারুল বাসেদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান কোম্পানির ফাইল পত্র দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তবে কবে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তা আজও অজানা রয়েই গেছে। ব্যবস্থা গ্রহণ করা তো দুরের কথা সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরও উক্ত কোম্পানিকে কোন প্রকার কারণ দর্শানো নোটিশ পর্যন্ত পাঠান নাই, এটাই হলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ এর নমুনা।
গাজীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক হারুন আর রশিদ এর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান ওরা খুবই দুষ্ট প্রকৃতির লোক দেখি সরেজমিনে প্রত্যক্ষভাবে তদন্ত করে দেখবো কিন্তু এতো দিন পার হলেও উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই, তিনি সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর জানান, যে ইমা ল্যাবরেটরীজ ইউনানীর বিষয়ে সহকারী পরিচালক আহসান হাবীবকে ব্যবস্থা নিতে বলবেন ।
গাজীপুরের অপর কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক আহসান হাবীবের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান এসব অভিযোগ তার জানা নেই তবে ইমা ইউনানি ল্যাবরেটারীজের এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হলে উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেন তবে সে প্রতিশ্রুতি এখনো কার্যকর না হওয়ায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে চলছে। এ বিষয়ে আহসান হাবীব এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি এবং তার পরিবার অসুস্থ থাকায় ইমা ল্যাবরেটরীজ ইউনাীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণে দেরি হয়েছে তিনি উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করবেন বলে পুনরায় প্রতিশ্রুতি দেন ।