জতিসংঘ জনসেবা পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ভূমি মন্ত্রণালয়

আন্তর্জাতিক জাতীয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ গ্রহণ করেছেন। ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত যেকোনো পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রথম সংস্থা/প্রতিষ্ঠান।


বিজ্ঞাপন

সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০ টায় মদিনাত জুমেইরাহ সম্মেলন কেন্দ্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগ কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। এই সময় ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের পর এক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন জাতিসংঘ পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ ও জাতির সম্মিলিত অর্জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর অধীনে ই-নামজারি ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, “ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড বাংলাদেশের সমগ্র ভূমি ব্যবস্থাপনাকে অটোমেটশন করার উদ্যোগকে আরও প্রাণবন্তভাবে সম্পন্ন করতে উৎসাহিত করবে”।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ভূমিসেবা গ্রহীতাদের সহজে সেবা প্রদানে, নারী ও প্রতিবন্ধীদের ভূমি ব্যবস্থাপনায় অধিকতর অন্তর্ভুক্ত করতে, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট বাস্তবায়নে, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহীত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে ই-নামজারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানটি ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ‘আগামীর জনসেবা উদ্ভাবন: টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে নব যুগের জন্য নতুন সরকারী মডেল’ (Innovating the Future Public Service: New Government Models for a New Era to Reach the Sustainable Development Goals) প্রতিপাদ্যে ৩দিন ব্যাপী আয়োজিত ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস ফোরাম’-এর একটি অংশ।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল গেরগাওয়ি, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রতিমন্ত্রী ওহুদ আল রুমি, জাতিসংঘের ম্যানেজমেন্ট, পলিসি, স্ট্র্যাটেজি ও কমপ্লায়েন্স বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথরিন পোলার্ড সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক, বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার প্রতিনিধিরা এবং পুরস্কার বিজয়ী বিভিন্ন উদ্যোগের উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন, ২০২০ তারিখে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ বিজয়ী উদ্যোগের নাম ঘোষণা করে। বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিকাশ’ (Developing Transparent and Accountable Public Institutions) ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ (United Nations Public Service Award 2020/ জাতিসংঘ জনসেবা পুরস্কার ২০২০) অর্জন করে।

২৩ জুন ২০২০ তারিখে ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস দিবস ভার্চুয়াল ইভেন্টে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল লিউ জেনমিন ‘ইউএন পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করার জন্য বাংলাদেশ সহ বিজয়ী দেশসমূহকে অভিনন্দন জানান। ২০২০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস ফোরাম’ ও ‘পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, যা বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছিল জাতিসংঘ। এই বছর ২০২১ সালে জাতিসংঘ ২০২০ ও ২০২১ সালের ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান একই সাথে দুবাইয়ে আয়োজন করল। এবার এই দুই বছরের জন্য ১৫টি দেশের ১৭টি উদ্যোগকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

ই-নামজারি সহ অন্যান্য সব ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর একটি অংশ। ই-নামজারি কার্যক্রম ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখ বাংলাদেশের ৭টি উপজেলায় পাইলট আকারে শুরু করা হয়েছিল।

ভূমিসেবা সহজিকরণের লক্ষ্যে ২৫ জুলাই ২০১৭ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলমান উদ্যোগসমূহ পর্যালোচনা করা হয়। ওই সভায় পাইলট আকারে গৃহীত ই-নামজারি সিস্টেমটি পর্যবেক্ষণ-পূর্বক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ দ্রুত সারা দেশে ই-নামজারি বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন। সে অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ভূমি সংস্কার বোর্ড উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হার্ডওয়্যার সরবরাহসহ কানেক্টিভটি নিশ্চিত করে এবং এটুআই প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারকারী প্রশিক্ষণে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী সার্বিক দিকনির্দেশনায় গত ১ জুলাই ২০১৯ হতে সারাদেশে একযোগে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে, বর্তমানে উপজেলা ভূমি অফিস ও সার্কেল অফিসে এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিস ই-নামজারি চালু রয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ১৭ মার্চ ২০২০ হতে ম্যানুয়াল আবেদন গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগ এবং এটুআই প্রকল্পের সার্বিক সহায়তায় ভূমি সংস্কার বোর্ডের মাধ্যমে অন্যান্য ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের সাথে ই-নামজারিও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এ বছরের ডিসেম্বর নাগাদ প্রক্রিয়াধীন আবেদন সহ সর্বমোট ৫৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৩৪টি আবেদন অনলাইনে পাওয়া যায় এবং ৪৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৩১৯টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রায় ২২ লক্ষ ই -নাজারি আবেদনের মধ্যে ১৯ লক্ষ আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে।