বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিজয়ের ঊষালগ্নে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় এ দেশের যে মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল, সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর গভীর ভালোবাসায় স্মরণ করেছে জাতি।
রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে সর্বস্তরের মানুষ। একইসঙ্গে এবারও জাতির প্রত্যাশা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যারা হত্যা করেছে তাদের মধ্যে যারা বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে আছে অথবা পলাতক আছে তাদের বিচারের রায় কার্যকর করা।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্মম আঘাত হানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস। সেদিন বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের অগ্রগণ্য মানুষকে বাড়ি থেকে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
পাকিস্তানি ঘাতকেরা চেয়েছিল বাঙালিকে মেধা-মননশূন্য করতে। সেজন্য তারা বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিকসহ বিশিষ্টজনদের হত্যা করে। তাদের শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবারের মতো এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
শহীদদের স্মরণে ভোর থেকেই মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। সেখানে শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর গভীর ভালোবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছেন তারা। সকাল ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলেন মানুষ।
করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে গতবারের মতো এবারও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা ও পুষ্পস্তবক সরাসরি জানাতে উপস্থিত হননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তবে তাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকীব আহমেদ চৌধুরী শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শহীদ বেদিতে জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। একে একে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ, বিএনপি, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।
মিরপুরের মতো রায়েরবাজার বধ্যভূমিতর শহীদ বেদিতে ভোর থেকে একে একে পড়তে থাকে পুষ্পস্তবক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের দেয়া ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে উঠেছে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ এলাকা। স্মরণ করছে ভয়াল সেই হত্যাযজ্ঞের ঘটনা।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও কালোপতাকা অর্ধনমিতকরণ, মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। দিবসটি উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
এছাড়া নানা আয়োজনে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় পালন করা হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।


বিজ্ঞাপন