নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রও আজ হুমকির সম্মুখীন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘যাদের দেশে নির্বাচনের ফলাফলকে ভ-ুল করার জন্য সংসদে হামলা হয়, সেখানে ঘেরাও করে পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়, তাদের স্পিকারের চেয়ারে বসে ছবি তোলা হয়। যে দেশে এই ধরনের ঘটনায় গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন, তারা অন্য দেশকে গণতন্ত্রের ছবক দেওয়ার অধিকার রাখে কি-না, প্রশ্ন রয়েছে।’
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয় দিন আগে গণতন্ত্র সম্মেলন হয়েছিল, সেখানে পাকিস্তানসহ অনেককে দাওয়াত করা হলো। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রও আজ হুমকির সম্মুখীন। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে যেভাবে হামলা ও কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছিল এমন ঘটনা কখনও বাংলাদেশে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনেও তাদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা রয়েছে। তাই আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানাবো, যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, এ দেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধি নিয়ে ঈর্ষান্বিত তাদের কথায় যেন তারা প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত না হয়। সেটিই থাকবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে মুজিববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক উন্নত রাষ্ট্রের চেয়েও জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ র্যাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আজকে তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা, এটি আসলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছে, উৎসাহিত করছে। আজকে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই অগ্রগতি অনেকের পছন্দ হয় না। আজকে বাংলাদেশ একটি গর্বিত দেশ, স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বর্ষে বঙ্গবন্ধুর দেশ রচনা ও শেখ হাসিনার সার্থকতা সেখানে। আজকে পাকিস্তান আমাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।’
তিনি বলেন, ‘যে পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জনের পর বলেছিল, বোকা বাঙালি চলে গেছে, ভালো হয়েছে। আমাদের খাটো করে তারা অহংকার করেছে, সেই পাকিস্তান সংশয়ে ছিল আদৌ বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে কি-না। সেই পাকিস্তান আজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সব সূচকে পাকিস্তানকে আমরা পেছনে ফেলেছি।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশ রচনা করে যাননি, বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরের চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু তাকে সময় দেওয়া হয়নি। তাকে যখন হত্যা করা হয়, ১৯৭৪-৭৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৫৪ শতাংশ। আজ পর্যন্ত আমরা সেই রেকর্ড ভাঙতে পারিনি। আমরা আট শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি, কিন্তু ৯ শতাংশের বেশি পারিনি। সেই হারে যদি প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত থাকতো, স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুর যদি বেঁচে থাকতেন তবে ১০/১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হতো একটি উন্নত দেশ।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ’র সঞ্চালনায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন- সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, আবুল কাশেম চিশতি, এ টি এম পিয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।