নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রই ব্যাকফুটে

আন্তর্জাতিক জাতীয়

আমেরিকায় এ ধরনের রিপোর্ট বিভিন্ন কারণে হয়। এর মধ্যে অন্যতম কারণ- ঢাকার লবিং শক্তিশালী না হওয়া। এ কারণে যারা এসব (রিপোর্ট) নিয়ে কাজ করেন তারা হয়তো বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনে এগুলো করেছেন।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ
কুটনৈতিক বিশ্লেষক


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে বাংলাদেশের খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দুই শিক্ষক। ঢাকার লবিং দুর্বলতা দেখলেও তারা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রকেই ব্যাকফুটে ফেলে দেবে।
গত ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব এবং সংস্থাটির বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই নিষেধাজ্ঞার পরই দেশের বিভিন্ন মহল তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দেশের জনগণ ভালোভাবে নেয়নি বলেও মার্কিন সরকারকে জানানো হয় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে।
‘বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। কারণ আজকে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যেখানে বাংলাদেশে সন্ত্রাস কমানোর ক্ষেত্রে র‌্যাবের প্রশংসা করা হয়েছে।’ বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেরোরিজম ২০২০’-এ বলা হয়েছে— বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ কমার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত তদন্ত ও গ্রেফতার বেড়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ড. ইমতিয়াজ আহমেদের পর্যবেক্ষণ আমেরিকায় এ ধরনের রিপোর্ট বিভিন্ন কারণে হয়। এর মধ্যে অন্যতম কারণ- ঢাকার লবিং শক্তিশালী না হওয়া। এ কারণে যারা এসব (রিপোর্ট) নিয়ে কাজ করেন তারা হয়তো বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনে এগুলো করেছেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাঁচ দিনের মাথায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন। আলাপে তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর জোর দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রে কতটা প্রভাব পড়বে সেটা চিন্তা করা উচিত।
তিনি বলছেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটা ব্যাকফুটে ফেলে দেবে। এগুলো নিয়ে ইতোমধ্যেই তাদের ভেতর সমালোচনা শুরু হয়েছে। তারা বরং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও জোরালো করার চেষ্টা করবেন। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেছেন। তাদের প্রকাশিত রিপোর্টেও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমনে জিরো টলারেন্সের জন্য র‌্যাবের প্রশংসাও করা হয়েছে।’
‘তারা এটা (নিষেধাজ্ঞা) করেছে বাংলাদেশের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করার জন্য’ জানান অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
তার মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ রাষ্ট্রগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাদের রিপোর্টে তারা পাকিস্তানকে বলেছে সেফ হ্যাভেন ফর টেররিজম। সেই পাকিস্তানকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে বিষয়টা তাদের কূটনৈতিক কৌশল।’
‘আমেরিকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক ভালো। বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে’ জানিয়ে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই।’
ইমতিয়াজ আহমেদ প্রশ্ন রাখেন, ‘তারা এগুলো কেন করে বুঝি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ওরা।’