তারুণ্যের মেধা-জ্ঞানেই আগামীর বাংলাদেশ গড়বো
বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর এই নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। তাছাড়া আমরা বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অবদান রেখে যাচ্ছি।’ সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ডিপ্লোম্যাটিক এক্সিলেন্স পুরস্কার-২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম (অব.) এবার পদক পান। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন পদক তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। আমি আশা করি, বিশ্বের সব মানুষের শান্তি ও মানবাধিকার যেন রক্ষা পায়, এ ক্ষেত্রে সবাই আমাদের সহযোগিতা করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধ ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। এটা আমাদের নীতি ও আদর্শ। জাতির পিতা আমাদের যে আদর্শ ও সংবিধান দিয়ে গেছেন, সেখানে আমাদের যে চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, সেই নীতি মেনেই দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের দরিদ্র মানুষকে আর দরিদ্র থাকতে দেবো না। মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হবে। উন্নত, সমৃদ্ধ জীবন পাবে। জাতির পিতার সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আদর্শ ধারণ করছি। স্বাধীনতার লক্ষ্য ও আদর্শ অর্জন করার জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ফসল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাবে। দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ও উন্নত জীবন পাবে। এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাই আমাদের বড় অর্জন। আমরা বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি আমরা অর্জন করবো ২০৩০ সালের মধ্যে। পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ।’
তিনি বলেন, ‘আমার জন্মদিনে কোনও বই কিংবা চাওয়া পাওয়া নেই। আমি কিছুই চাই না। আমার জন্য কিছু করা হোক এটাও কামনা করি না। কারণ, আমি জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছি। আমার কোনও চাওয়া পাওয়া নেই। কারণ, আমি তো আমার বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যত কষ্ট, আঘাত, বাধা আসুক না কেন, যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছে, তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত। দারিদ্র্য ও মঙ্গা বলতে দেশে কিছু থাকবে না। দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং উন্নত জীবন পাবে, সেটাই আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য স্থির রেখেই আমার পথচলা। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। ইনশাআল্লাহ একদিন উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে মেরিটাইম বাউন্ডারি নিয়ে আইন করে যান। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে সমুদ্রসীমা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত দিয়ে যান। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে যেসব সরকার এসেছিল, তারা এই ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে কীভাবে এই সমুদ্রসীমা বাস্তবায়ন করতে পারি তার ব্যবস্থা নিই। আমরা আনক্লজ সই করি। দ্বিতীয়বার সরকারের আসার পরে আমাদের প্রচেষ্টা শুরু হয় এই সমস্যা সমাধানের। ঠিক যেভাবে ভারতের সঙ্গে আমরা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি, যেটা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি। সেই সঙ্গে সঙ্গে মেরিটাইম বাউন্ডারি নিয়েও উদ্যোগ গ্রহণ করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেও আমরা মেরিটাইম বাউন্ডারি সমস্যার সমাধান করেছি। এটা আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই।’
পদক বিজয়ী দুই জনকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রতি বছর এই পদক প্রদানের মাধ্যমে আমাদের কূটনীতিকরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে অনুপ্রাণিত হবেন। পাশাপাশি আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কূটনীতিকরাও তাদের স্ব-স্ব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন শিখরে উন্নীত করতে উৎসাহিত হবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকুক। আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা, যেখানে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থাকবে না। মানুষের দুঃখ, কষ্ট দূর হবে। উন্নত জীবন পাবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তারুণ্যের মেধা-জ্ঞানেই আগামীর বাংলাদেশ গড়বো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুবসমাজই আমাদের মূল শক্তি। তরুণদের মেধা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই আমরা আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই। সোমবার বিকেলে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ অনুষ্ঠানের শুরুতে ধারণকৃত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের স্বাধীনতার পেছনেও তারুণ্যের শক্তি কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু তরুণ বয়স থেকে নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম শরু করেন। ব্র্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সংগ্রাম করেছেন। তাকে হারানোর পর বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণরাই মেধাবী। তারাই পারে সমাজটা গড়ে তুলতে। এজন্য প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে পা ফেলে চলতে হবে। নইলে আমরা পিছিয়ে যাবো। তরুণরাই কিন্তু যে কোনো পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের তরুণ সমাজ যেভাবে ঝাপিয়ে পড়েছে, তারা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তা প্রশংসনীয়। আসলে তরুণরাই সব পারে। আমি বলবো তরুণদের যে মেধা, জ্ঞান তা বিকশিত করতে হবে। তরুণদের মেধা-জ্ঞান দিয়েই আগামীর বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।
তরুণদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে প্রদান করা এ অ্যাওয়ার্ডের প্রাথমিক বাছাইয়ে ৩১ সংগঠনের নাম ছিল। সেই নাম থেকে যাচাই–বাছাই শেষে ১৫ সংগঠন এ অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে।
১৫ সংগঠনের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেবেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ধারণকৃত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ও সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়।
বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী : পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের কূটনৈতিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করায় প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ পেলেন ঢাকায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাঈদ মোহাম্মদ আল মেহরি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। গতকাল সোমবার এ পুরস্কার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ দেওয়ার অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এসময় পদক জয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দু’জন কূটনীতিক আজকের পদক বিজয়ী। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসাধারণ কূটনৈতিক নৈপূণ্য প্রদর্শন করেছেন। আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাঈদ মোহাম্মদ আল মেহরি বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে দু’দেশ এবং জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাছাড়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের সরকারের আমলে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের অভিযাত্রায় তিনি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, প্রতি বছর এ পদক দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের কূটনীতিকরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে অনুপ্রাণিত হবেন। পাশাপাশি আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর কূটনীতিকরাও তাদের স্ব স্ব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নতির শিখড়ে নিতে উৎসাহিত হবেনÑ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশপ্রেমকে গভীরভাবে হৃদয়ে ধারণ ও দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে কূটনীতিকদের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আমাদের কূটনীতির একটি বড় অংশই হলো অর্থনৈতিক কূটনীতি। তাছাড়া বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও দক্ষ জনসম্পদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কূটনীতিকরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। তারা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি এমডিজি, এসডিজি, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, ভালো কূটনীতিক হতে হলে দেশপ্রেমকে গভীরভাবে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিবর্তনশীল বিশ্ব-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শান্তি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়। বিশ্বশান্তি ও সংহতি স্থাপনে তার দর্শন ও অর্জন বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে স্থান-কাল নির্বিশেষে বিশ্বের সব কূটনীতিক ও শান্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। যা বিশ্ব-দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতেও প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই আমাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো বিশেষ দেশ বা জোটের দিকে না ঝুঁকে বিশ্বের সব শান্তিকামী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে নিরলসভাবে কাজ করছি। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আমরা ভারসাম্যের কূটনীতি পরিচালনা করছি। জাতির পিতার আদর্শে শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীসহ সব বহুপাক্ষিক ফোরামে আমরা কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করছি। এ মাসেই ঢাকায় বিশ্বের শান্তিকামী বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নেতাদের অংশগ্রহণে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন’ সফলভাবে আয়োজন করেছি। সেখানে আমরা সুদূরপ্রসারী ‘ঢাকা ঘোষণা’ গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, জাতির পিতা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য দাবির সঙ্গে সর্বদা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। প্রতিবেশী মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকরা যখন হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, আমরা তাদের দিকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা মিয়ানমারকে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার ও আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান সবারই কাম্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে মেরিটাইম বাউন্ডারি নিয়ে আইন করে যান। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে সমুদ্রসীমা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত দিয়ে যান। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর যেসব সরকারগুলো এসেছিলো, তারা এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা কীভাবে এই সমুদ্রসীমা বাস্তবায়ন করতে পারি তার ব্যবস্থা নিই। আমরা আবার উদ্যেগ নিই এবং দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আমাদের প্রচেষ্টা ছিল এই সমস্যা সমাধানের। ঠিক যেভাবে ভারতের সঙ্গে আমরা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি। যেটা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নামে পরিচিত ছিল, সেই সঙ্গে সমুদ্র সীমা নিয়েও উদ্যোগ গ্রহণ করি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাঁর লক্ষ্য ও আদর্শ ছিলো ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে আমরা এই নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছি। আমাদের সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, ঠিক তেমনি প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। তা ছাড়া আমরা সমগ্র বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অবদান রেখে যাচ্ছি। তিনি এই বিজয়ের মাসে দেশে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, মিয়ানমারের নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরকেও তাঁর সরকার আশ্রয় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশাকরি বিশ্বের সকল মানুষের শান্তি ও মানবাধিকার যেন রক্ষা পায়। এ ক্ষেত্রে আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করি। বাংলাদেশ সমৃদ্ধ ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। এটা আমাদের নীতি ও আদর্শ। জাতির পিতা আমাদের যে আদর্শ ও সংবিধান দিয়ে গেছেন, সেখানে আমাদের চার মূলনীতি ছিল-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। সেই নীতি মেনেই দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষকে আর দরিদ্র থাকতে দেব না। দেশের মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত হবে। উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন পাবে। জাতির পিতার সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আদর্শ ধারণ করছি। স্বাধীনতার লক্ষ্য ও আদর্শ অর্জন করার জন্য আমরা ব্যাপকভাবে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারি বিজয়ী জাঁতি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয়ের ফসল প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাবে। দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ও উন্নত জীবন পাবে। এটাই ছিলো জাতির পিতার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। আমরা বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করবো ২০৩০ সালের মধ্যে। পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ উল্লেখ করে এই ব-দ্বীপের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশের প্রসঙ্গে বলেন, আমার জন্মদিনে কোনো বই কিংবা আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নাই। আমি কিছুই চাই না। আমার জন্য কিছু করা হোক এটাও আমার কাম্য নয়। কারণ, আমি জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাবার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছি। আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। কারণ আমি তো আমার বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি। তিনি বলেন, আমি একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যত কষ্ট, আঘাত, বাধা আসুক না কেন, যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন, তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত। দারিদ্র ও মঙ্গা বলতে দেশে কিছু থাকবে না। দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং উন্নত জীবন পাবে। সেটাই আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য স্থির রেখেই আমার পথ চলা। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। ইনশাআল্লাহ, একদিন উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ,বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বক্তব্য দেন। পাশাপাশি পদকপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি ও সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম (অব.) অনুভূতি ব্যক্ত করেন।