শাহ কামাল সবুজ : (১) ছেলেঃ মা, আমি সাতার জানিনা। তুমি তো জানো। লাফিয়ে পড়ে জীবন বাঁচাও।
মাঃ আয় বুকে আয়। তোকে রেখে আমি একা বাঁচতে পারিনা। দুজনে একসাথে মরি। (তারপর অজ্ঞাত ধাক্কায় মা, ছেলে পানিতে পরে গেল এবং বেঁচে গেল)
(২)
স্ত্রীঃ তুমি যদি সত্যিকার আমার স্বামী হও মেয়েটাকে নিয়ে লাফ দাও। মন থেকে বলছি আমি। আমার কথা একটু শোনো। আমি মারা গেলে কিছু হবে না। মামনিটাকে বাঁচাও। আমি সাতার জানিনা। একসাথে তুমি দুজনকে নিয়ে সাতার কাটতে পারবেনা। শেষে তিনজনেই মারা যাবো। প্লিজ লাফ দাও প্লিজ। আল্লাহ চাইলে কিয়ামতের মাঠে আমাদের দেখা হবে।
( স্ত্রীর এমন জোরাজুরিতে অগত্যা লঞ্চের ৩ তলা থেকে লাফিয়ে পরল বেচারা স্বামী। পানিতে পড়েই প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে হাত থেকে ছুটে গেল মেয়েটা। আজ দুদিন। লাশের খোঁজ মেলেনি। তিনি এখন হাসপাতালে, বাকরুদ্ধ।)
(৩)
কেবিনে জেগে থাকা ছেলে মেয়ে ও মা, ঘুমিয়ে থাকা কর্তাকে উঠালো দেখোতো নীচে এতো চিল্লাপাল্লা কেন?
তিনি যাওয়ার সময় বাইরে থেকে কেবিন লক করে গেল। যেন অযাচিত কেউ ভিতরে ঢুকতে না পারে।
তিনি নীচে নেমেই দেখেন আগুন ছড়িয়ে পড়ছে দাউ দাউ করে। দ্রুত উপরে উঠতে চাইলেন কিন্তু আগুনে দগ্ধ হলেন। ধোঁয়ায় সিঁড়ির হারিয়ে ফেললেন, শুধু বুকফাটা চিৎকার মা, ও মা,,(দুই মেয়ে) ও সাবিনা (স্ত্রী) তোরা কোথায়? তোদের লক করে এসেছি। হায় আল্লাহ চাবি আমার হাতে,,কি হবে ওদের এখন। আল্লাহ! ও আল্লাহ গো!,,,,,,
(অজ্ঞাত একজন তাকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিল। হাসপাতালে সে এখন মুমূর্ষু)
এমন কিছু সংলাপ দৈবাৎ বেঁচে গেছে। আর শত শত সংলাপ লেলিহান আগুনে পুড়ে গেছে। যা হয়তো কোনোদিন আমরা জানব না।
এমন দূর্ঘটনার কথা ভাবতেই হৃদয় শিহরে ওঠে। রক্ত হিম হয়ে যায়। এদের অনেকেই হয়তো আমাদের এফবি বন্ধু, অথবা আত্মীয় অথবা স্বজন। একবার ভাবুন, ওখানে তো আপনি, আমিও থাকতে পারতাম। অথবা আমাদের বাবা, মা, ভাই, বোন অথবা আত্মীয় স্বজনও থাকতে পারত। কিংবা প্রাণাধিক ছেলে মেয়ে,,, উহ আর ভাবা যায় না!
আল্লাহ, এই অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যারা প্রাণ হারিয়েছে তুমি তাদের জান্নাত দান করো। আর আহতদের দ্রুত সুস্থ্য করে দাও।
আসুন, আমরা যে যেখানে থাকি পরম করুণাময়ের কাছে হাত তুলে দোয়া করি। আর নিজেদের জন্য এইটুকু বলি, হে আল্লাহ, তুমি দয়াময়। আমাদের উপর দয়া করো। আমরা তোমার পাপী বান্দা। কখনো আমাদের পরীক্ষায় ফেলোনা। জন্মমৃত্যু তোমারই হাতে। আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যু দিও।