ঢাকা নগর পরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে

রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি দূরীকরণ, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে ব্যক্তি মালিকানা বাসগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ঢাকা নগর পরিবহন। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই নগরবাসীর কাছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ আস্থা অর্জন করেছে। ফলে দিনে দিনে বাসে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড, মেডিকেল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, সাইন্সল্যাব হয়ে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটারের এ রুটে ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা নগর পরিবহন চালু হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা নগর পরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা কম। কাঁচপুর কাউন্টার থেকে ১০ মিনিট পরপর বাস হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পরবর্তী কাউন্টারগুলোতে দু-এক মিনিটের ব্যবধানে আরেকটি বাস কাউন্টারে পৌঁছায়। এতে বেশিরভাগ বাস অর্ধেকের চেয়ে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। এ ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানা বাসগুলো সড়কের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠালেও নগর পরিবহনে সঠিক জায়গায় কাউন্টার না বসানোর কারণে যাত্রী কম হচ্ছে।
যেসব জায়গায় ঢাকা নগর পরিবহনের কাউন্টারগুলো বসানো হয়েছে, এর অধিকাংশ জায়গায় যাত্রী যাচ্ছে বলে জানান কাঁচপুরের কাউন্টারের ইনচার্জ মোহাম্মদ।
জানা গেছে, প্রাথমিক পরিকল্পনায় ১৫৫টি বাস চালুর কথা রয়েছে। তবে এখন ট্রান্স সিলভা কোম্পানির ২০টি এবং বিআরটিসির ৩০টি দোতলা বাস নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে ঢাকা নগর পরিবহনের। এ বাসে শিক্ষার্থী ছাড়া রুটের সর্বনি¤œ ভাড়া ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫৯ টাকা। এখানে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া দুই টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নগর পরিবহন নিয়ে যাত্রীদের সন্তুষ্টির মধ্যেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যাত্রীরা বলছেন, সড়কে ভোগান্তি কমানো ও সিটিং সার্ভিস বাস মালিকদের জিম্মি থেকে রেহাই দিতে সরকার বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করেছে। কিন্তু বিআরটিসির বাসগুলোর সার্ভিস অসন্তোষ। পাশাপাশি বছরে পর বছর লোকসানে বিআরটিসির বাসগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন করে নগর পরিবহন চালু হয়েছে। এই পরিবহনের সার্ভিস নিয়ে যাত্রীরা সন্তোষ। কিন্তু দীর্ঘসময় পর কিছু লোকের কারণে বিআরটিসি’র মতো যেন নগর পরিবহন মুখ থুবড়ে না পড়ে।
সাইনবোর্ড থেকে ঢাকা নগর পরিবহনে মতিঝিলে আসেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিআরটিসির পুরোনো দোতলা বাসগুলো দিয়ে নগর পরিবহন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বাসগুলো পুরোনো হলেও সার্ভিস ভালো। কারণ যাত্রীদের এক কাউন্টার থেকে উঠিয়ে অন্য কাউন্টারে নামানো হচ্ছে। সড়কের মাঝপথে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ। এতে যাত্রীরা সুনির্দিষ্ট সময়ে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারবেন।
ঢাকা নগর পরিবহনের সার্ভিসের বিষয়ে মোশাররফ হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, নগর পরিবহন সার্ভিস শুরুর দিন থেকেই মাতুয়াইল কাউন্টার থেকে শাহবাগ যাচ্ছি। অন্যান্য বাসে মাতুয়াইল থেকে শাহবাগ যাতায়াতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা লাগতো। ঢাকা নগর পরিবহনে ২৫ টাকায় যাচ্ছি। এখানে অন্য বাসের তুলনায় নগর পরিবহনে ভাড়া কম। সার্ভিস ভালো।
ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিসের প্রশংসা করে আলী আহম্মেদ, লিটন সরকার, সুজন মিয়াসহ কয়েকজন যাত্রী বলেন, নতুন হিসেবে অন্য সব গণপরিবহনের চেয়ে সার্ভিস ভালো। লোক যতই হোক কাউন্টার ছাড়া কোথাও বাস থামায় না। ভাড়াও অন্যদের চেয়ে কম। নগরবাসীর সুবিধার্থে সার্ভিসটি যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সে জন্য আগেভাগেই পরিকল্পনা নিতে হবে কর্তৃপক্ষের। বিআরটিসির বাস সার্ভিসের মতো যেন যাত্রী ভোগান্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
দিনে দিনে যাত্রীর চাপ বাড়ছে বলে জানান শাহবাগ কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা বিক্রয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন টিকিট বিক্রি বেড়েছে। নতুন বলে যাত্রীরা সেভাবে জানে না। আশা করা হচ্ছে আগামীতে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়বে।
ঢাকা নগর পরিবহন মাতুয়াইল কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা নাঈম বলেন, প্রথম দিনে প্রায় ৫ শ’ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় দিন টিকিট আরও বেশি বিক্রি হয়। সপ্তাহ দিনে এসে এই কাউন্টারে প্রায় ২ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে।
ঢাকা নগর পরিবহনের চালক মামুন মিয়া বলেন, সড়কে চলাচল করা অন্য গণপরিবহনের তুলনায় এ পরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা কম। সংখ্যা কম থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্টার থেকে বাসা ছাড়া হচ্ছে। প্রতিটি কাউন্টারে এক মিনিট করে বাস দাঁড়ানোর নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী কাউন্টার থেকে বাস ছাড়ছে। কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানো হয় না। তাই অনেকটা ফাঁকাই থাকে বাসগুলো।
প্রসঙ্গত, সদ্য বিদায়ী বছরের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাস ডিপো থেকে ঢাকা নগর পরিবহন পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করেন সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।


বিজ্ঞাপন