রেলের টিকেট কালোবাজারী চক্রের মূলহোতা সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার সহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যার

Uncategorized অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ রেলওয়ে টিকেট কালোবাজারী চক্রের শিকড়ের খোঁজে র‌্যাবের অনুসন্ধানে টিকেট কালোবাজারী চক্রের মূলহোতা সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রেজাউল করিম (৩৮)সহ ০২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যার -১, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।

জানা গেছে বিগত বছরগুলোতে করোনা মহামারীর কারণে ঈদ যাত্রা বন্ধ থাকায় এবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অধিক সংখ্যক মানুষ ঘরে ফিরছে।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। অধিকাংশ সাধারণ মানুষ রেলওয়ে টিকেট অনলাইনে ক্রয় করছে। ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকেট ছাড়ার সাথে সাথে টিকেট শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও রাতভর স্টেশনে অপেক্ষা করেও সকালে টিকেট বিক্রির শুরুতেই টিকেট না পাওয়ার বিভিন্ন অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এতদ্সংক্রান্তে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন হতে টিকেট বিক্রয়কারীদের মাধ্যমে এই চক্রের শিকড়ের অনুসন্ধানে তৎপর হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১, উত্তরা, ঢাকার একটি আভিযানিক দল এই চক্রের সাথে জড়িত অপরাধী চিহ্নিতকরণ ও তথ্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে কমলাপুর স্টেশনের ২য় তলায় সার্ভার রুম হতে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য সহজ কম এর সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রেজাউল করিম (৩৮), পিতা- মৃত মোবারক হোসেন, জেলা- চাঁদপুর’কে র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে মোঃ রেজাউল করিম’কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তিনি রেলওয়ে টিকেট কালোবাজারীর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন।

কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে সন্দেহ হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং টিকেট কালোবাজারী চক্রের সাথে মোঃ রেজাউল করিম এর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে গত বুধবার ২৭ এপ্রিল, আনুমানিক ১০ টার সময় মোঃ রেজাউল করিম’কে এবং তার দেয়া তথ্যমতে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে তার কালোবাজারী টিকেট বিক্রয়ের সহযোগী মোঃ এমরানুল আলম সম্্রাট (২৮), পিতা- আবু আলম হেলাল, জেলা- পঞ্চগড়’কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় উভয়ের ব্যবহৃত স্মার্টফোন হতে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ রেলওয়ে ই-টিকেট জব্দ করা হয়।

মোঃ রেজাউল করিম’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি বিগত ৬ বছর যাবত রেলওয়ে টিকেটিং এর সাথে জড়িত রয়েছে। সহজ কম এর পূর্বে সিএনএস ডট বিডি তেও তিনি কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে রেলওয়ের টিকেট এর দায়িত্ব সহজ কম পেলে, অভিজ্ঞ কর্মী হিসাবে তাকে চাকুরিতে পূনঃবহাল করা হয়।

মোঃ রেজাউল করিমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তিনি প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ে টিকেট অবৈধ উপায়ে সরিয়ে নিতেন। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার মত অবৈধভাবে আয় করতেন বলে র্যাব-১ এর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

অভিযুক্ত মোঃ রেজাউল করিম’র বেশকিছু সেলসম্যান রয়েছে, যারা বিভিন্ন রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি টিকেট বিক্রয়ের সাথে জড়িত বলে তিনি জানান।

অভিযুক্ত মোঃ রেজাউল করিম’কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ব্যক্তিগত পরিচিতদের নিকট টিকেট প্রতি প্রায় ৫০০ টাকার মত অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে থাকেন।

অন্যদিকে, কালোবাজারি টিকেট বিক্রেতার মাধ্যমে বিক্রির ক্ষেত্রে ১০০০/১৫০০ টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। অভিযুক্ত’র দাবী রেলওয়েতে বিভিন্ন ‘ভিআইপিদের টিকেট’ এর ‘আবদার মেটানো’র কারনে তিনি নির্বিঘ্নে এই কাজ করে আসছিলেন। রেলওয়ে টিকেটিং সংক্রান্ত অন্য কেউ টিকেট কালোবাজারীর সাথে জড়িত আছে কি না এ ব্যাপারে র্যাবের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

অভিযুক্ত মোঃ রেজাউল করিম’র নিজস্ব পরিচিত লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকেট প্রত্যাশীদের একটি বড় ক্রেতা শ্রেনী গড়ে তুলেছেন।

এছাড়াও তার নিজস্ব বেশ কিছু কালোবাজারি টিকেট বিক্রেতা রয়েছে। রেলওয়ে ই-টিকেটিং সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবিধা নিয়ে তিনি ই-টিকেটিং সার্ভার হতে অবৈধ উপায়ে টিকেট বুক ও ক্রয় করতেন। প্রধান অভিযুক্ত রেজা একজন প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিতে বিভিন্ন মোবাইল এ্যাপ ব্যবহার করে টিকেট সংক্রান্ত যোগাযোগ করে আসছিলেন।

একই সাথে ব্যাংক বা মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস এর বদলে তিনি মূলত নগদ অর্থের মাধ্যমে লেনদেন করতেন। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন