বনানীত র‌্যাব কর্তৃক ভুয়া কোভিড-১৯ এর সার্টিফিকেট দিয়ে বিদেশগামীদের সাথে প্রতারণাকারী প্রতারক চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় ব্যক্তি সাধারণ বিদেশীগামী যাত্রীদের ভূয়া কোভিড-১৯ এর সার্টিফিকেট প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকজন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১ এর একটি চৌকস টিম।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদেশগামী সাধারণ যাত্রীদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট একটি আবশ্যিক বিষয়। যে সকল বিদেশগামী যাত্রী কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে পারবেনা তারা বিদেশ যাত্রা করতে পারে না।

বাংলাদেশ হতে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বিদেশগামী সাধারণ যাত্রীদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটি প্রতারক চক্র বেশ কিছুদিন যাবৎ বিদেশগামী যাত্রীদের জিম্মি করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।

বিদেশগামী যাত্রীদের জিম্মি করে কোভিড-১৯ সার্টিফিকেট সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে সমাধান করার কথা বলে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে প্রতারনামূলকভাবে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। এই প্রতারক চক্রটি গত কয়েক মাস যাবৎ সাধারণ বিদেশগামী যাত্রীদের হয়রানি করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়।

এতদ্সংকান্তে র‌্যাব-১ প্রতারণার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সাথে ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার ১৫ মে, আনুমানিক সাড়ে ১০ টার সময় র‌্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ডিএমপি ঢাকার বনানী থানাধীন মহাখালী কোভিড-১৯ হাসপাতালের সামনে বিদেশগামী যাত্রীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রতারক চক্রের কতিপয় সদস্যরা অবস্থান করছে।

প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি ডিএমপি ঢাকার বনানী থানাধীন মহাখালী কোভিড-১৯ হাসপাতালের সামনে পাকা রাস্তার উপর অভিযান পরিচালনা করে।

উক্ত অভিযান পরিচালনা কালে কোভিড-১৯ এর সার্টিফিকেট নিয়ে প্রতারণাকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য জসিম উদ্দিন (২৮), পিতা-ফজলুল করিম, জেলা-সুনামগঞ্জ, মোঃ তারেকুল ইসলাম (২৬), পিতা-মৃত আবুল কাশেম, জেলা-নোয়াখালী, মোঃ আলমগীর হোসেন (২০), পিতা-মোঃ শরীফ মিয়া, জেলা-মৌলভীবাজার, মোঃ রিপন মিয়া (২৮), পিতা-আব্দুল মান্নান, জেলা-কুড়িগ্রাম, মোঃ আরিফুল ইসলাম (২০), পিতা-শহিদুল ইসলাম, জেলা-বান্দরবন, আহম্মেদ হোসেন শাহাদাৎ (১৮), পিতা-রফিকুল ইসলাম, জেলা-মৌলভীবাজার এবং মোঃ শামীম হোসেন (৩০), পিতা-মোঃ ফরিদ মিয়া, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া’দের গ্রেফতার করে।

এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ৬ পাতা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া ভূয়া কোভিড-১৯ টেষ্টের পজেটিভ এবং নেগেটিভ সার্টিফিকেটের ফটোকপি, ২টি বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদান প্রদানে ব্যবহৃত সিম কার্ড, ৩টি প্রবাসীদের মোবাইল নম্বর সম্বলিত টোকেন, ১টি পেনড্রাইভ (যার মধ্যে আসামীদের ডাক্তার, স্টাফ ও নার্স হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারনামূলক কতোপকথোন রেকর্ডিং সংরক্ষিত রয়েছে), প্রতারনামূলকভাবে অর্জিত বিভিন্ন মূল্যমানের নগদ ৪১,৮৬৯ টাকা, ১ টি ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড, ০৮ টি মোবাইল ফোন, ২টি হাতঘড়ি ও ২টি চশমা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার কৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের সদস্যরা বিদেশগামী যাত্রীদের নিকট নিজেদের কোভিড-১৯ হাসপাতালের ডাক্তার, স্টাফ ও নার্স পরিচয় দিয়ে তাদের বিশ্বস্থতা অর্জন করত। পরবর্তীতে যাত্রীদের কোভিড-১৯ এর ভূয়া সার্টিফিকেট প্রদান করতঃ বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত।

এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত পরস্পর যোগশাজশে একে অপরের সহযোগীতায় রাজধানীর বনানী সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ এর সার্টিফিকেট সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে সমাধান করার কথা বলে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে লোকজনের নিকট হতে প্রতারনামূলকভাবে টাকা হাতিয়ে নেয় মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতার কৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।


বিজ্ঞাপন