“আই লাভ ইউ এন্ড আই হেট ইউ অলসো” —প্রসঙ্গ বাংলাদেশ – ভারত কুটনৈতিক সম্পর্ক

Uncategorized আন্তর্জাতিক

কুটনৈতিক বিশ্লেষক ঃ সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্মরণকালের চরম শিখায় উন্নীত হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।কূটনীতি, বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়,খাদ্য নিরাপত্তা,রোহিঙ্গা সমস্যা, সামরিক সম্পর্ক প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এবং ভারত অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ভারতের মানচিত্র আকতে গেলে সেখান থেকে যেমন বাংলাদেশকে মুছে ফেলা যায়না তেমনি বাংলাদেশের মানচিত্র আকলেও ভারতকে মুছে ফেলা যায়না। বিগত এপ্রিল মাসেই জয়শংকর বাংলাদেশ সফরে এলেন,একই সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকেও ভারত সফরে যেতে বললেন।তিস্তা চুক্তি এবং গংগা/পদ্মা চুক্তি নিয়ে অনেক আশা থাকলেও বাংলাদেশ এখনো পানির নায্য হিস্যা পাইনি, অন্যদিকে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ মিটলেও সীমান্তে চোরাচালান নিয়ে ভারতের ‘এক্ট ফাস্ট’ নীতি বাংলাদেশীদের ক্ষতির কারন হয়েছে।
যদিও সীমান্তে হত্যা কমেছে তা সত্বেও এ ক্ষেত্রে বিএসএফ-বিজিবি উভয়েরই আরো অগ্রসর হবার ক্ষেত্র রয়েছে।বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কিংবা বহিবির্শ্বে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।ভারতের ইউক্রেন নীতি যেমন আমেরিকান প্রভাব থেকে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ নীতি বজায় রাখতে সাহায্য করেছে তেমনি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম অর্থনৈতিক পার্টনার হিসেবেও সামনে এসেছে ভারত।
তবে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশ নিয়ে এখনো শংকা বিদ্যমান।অশুল্ক বাধা এবং শুল্ক বাধা,নেপাল থেকে বিদ্যুত আনা,কিংবা বাংলাদেশী পন্য ভারতে পাঠানোর সময় কাস্টোমস এ হয়রানি সহ নানা অভিযোগ আছে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে.
ভারতের ধর্মের রাজনীতি বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলেছে। ভারতে রাজনীতির বাইরে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা বেশ কম হলেও সরকারী মন্ত্রী,রাজনীতিকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশীদের ইদূর কিংবা তেলাপোকার সাথে তুলনা দেয়া কিংবা এন আর সি এবং সি এ এ এর পক্ষে খুলনা থেকে সিলেট পর্যন্ত দাগ টেনে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার হুমকী আজো বাংলাদেশীদের কানে বাজে। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কে ভিত্তি পুর্ব পাকিস্তান কিংবা ব্রিটিশ কোন আমলেই খন্ডন করা সম্ভব না,একই আবহাওয়া,একই পরিবেশ,একই মানুষ হওয়া গ্রেটার বেংগল গড়ার স্বপ্ন ১৯৪৭ সালে ভেংগে যাওয়ার পর বাংগালী জাতি পুর্ণ স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশী জাতীয়তা লাভ করে ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অকৃত্রিম সহায়তা,১ কোটি শরনার্থী গ্রহন,বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের দাবী উত্থাপন এ কাজগুলোর জন্য আমরা ভারত এবং শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ-ভারতের অনেক অমিমাংসিত ইস্যু বাংলাদেশ আগেই নিস্পত্তি করেছে অথচ ভারত তা নিস্পত্তি করে ৪০ কিংবা ৫০ বছর পর।ভারত উজানের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ ভাটির দেশ হিসেবে শীত,গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে।বাংলাদেশে কাংখিত বিনিয়োগ না করে চীনা বিনিয়োগ বন্ধ করতে বলা কিংবা করোনার সমগ ভ্যাক্সিন সরবরাহ বন্ধ করা,না জানিয়ে পিয়াজ রপ্তানী বন্ধের মত অনেক ইস্যুই আছে দু-দেশের মধ্যে। বাংলাদেশের বন্যা ইস্যুতে ভারতের যেমন বাধ খুলে দেয়ার দায় রয়েছে তেমনি বাংলাদেশের নিজের ও সায় রয়েছে।তবে গ্রীষ্মে বাধ বন্ধ করে ”বাংলাদেশের উপর ওয়াটার পলিটিক্স” চালাচ্ছে ভারত।
ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্য এবং চিকেনস নেক করিডোর কে বাংলাদেশ শান্ত রেখেছে এবং তার বিনিময়ে ভারত থেকেই অনেক কিছু প্রাপ্য বাংলাদেশের। যদিও বাংলাদেশীদের ভারত যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে এবং আগের চাইতে অনেক বেশী ভারতীয়ই এখন বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন।বাংলাদেশ এখন ভারতের রেভিনিউ অর্জনের অন্যতম ক্ষেত্র,তেমনি বাংলাদেশ ও ভারতের তুলা,খাদ্যপণ্য আমদানীর সুযোগ পাচ্ছে।তাও উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করবার আরো সুযোগ রয়েছে।
বন্ধ কিংবা ভাইয়ের সম্পর্ক হবে মধুর, চলার পথে ভাইয়ে ভাইয়েও ঝগড়া হয়।এক সময় পাকিস্তানীরাও বাংলাদেশীদের পাশের ঘর ছিল,আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দুরত্ব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই দুরত্বের কারনে।ঠিক এমনি ভাবে আপনি পৃথিবী পরিবর্তন করতে পারলেও প্রতিবেশীকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। ভারতের অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশীরা বিজনেস এক্সপান্ড করছে,এক্ষেত্রে আর এফএল, ওয়ালটন, প্রাণ, পারটেক্স গ্রুপ ভাল করছে তবে ভারত এখনো বাংলাদেশীদের পন্য ভারতে প্রচার,বাংলাদেশি চ্যানেল টেলিকাস্টের মত বিষয়গুলোতে পজিটিভ না।
অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ বাংলাদেশ হয়ে আসাম গেলেও আসাম বর্তমানে বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তিত,মমতা আজো তিস্তার নায্য হিস্যা নিয়ে আশার কিছু বলছেনা। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক আরো মজবুত হবে,রেল,আকাশ,স্থল কিংবা জল সব ক্ষেত্রেই যোগাযোগ বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই।কিন্তু তা সত্বেও যে ভাই বিপদে ভাইয়ের পাশে দাঁড়ায় না,কিংবা যে বন্ধুকে আরেক বন্ধু মনের কথা বলতে পারেনা,সে বন্ধুত্ব কতটা সত্য তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যায়। ভারতের প্রতি বাংলাদেশ যা দিয়েছে ভারতের উচিত ভাই কিংবা বন্ধু হয়ে তার প্রতিদান দেয়া। একথাও আমরা বিশ্বাস করি বন্ধুত্ব তে প্রতিদান দেয়া অসম্ভব। কিংবা ভালবাসা, সম্মান এবং নায্য বিনিময় দেয়া অবশ্যই সম্ভব।


বিজ্ঞাপন