মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী ঃ ‘কুরবানি’র আভিধানিক অর্থ, নৈকট্য লাভ, সান্নিধ্য অর্জন, উৎসর্গ বা প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা।
পরিভাষায়, নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে তাঁর নামে জবেহ করাই হলো কুরবানি। এ ঈদকে বলে কুরবানির ঈদ। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর কুরবানির অনুসরণে মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর ১০ই জিলহজ তারিখে পশু কুরবানি করে।
কুরবানি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
‘এবং আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানির নিয়ম নির্ধারণ করেছি যাতে তারা সেই সব গবাদি পশুর ওপর আল্লাহর নাম নেয়, যেগুলো তিনি তাদেরকে দান করেছেন’ (সুরা হাজ : ৩৩)
আসলে পশু কুরবানি প্রতীকী বিষয়। আল্লাহতায়ালা চান, মানুষ যেন তার পশুসূলভ হৃদয়, তার আমিত্ব ও নিজের চাওয়া পাওয়াকে আল্লাহর জন্য কুরবানি করবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন,
‘তোরা ভোগের পাত্র ফেলরে ছুঁড়ে,
ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ’।
বাহ্যিকভাবে যে যত বড় পশুই জবাহ করুন, সেটা মহান আল্লাহপাকের কাছে মূল্যহীন। আল্লাহতায়ালা মানুষের হৃদয় দেখেন। আমাদের নিয়ত জানেন।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন: ‘এগুলোর মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং তার নিকট তোমাদের তাকওয়া অর্থাৎ খোদাভীতি পৌঁছে’ (সুরা হাজ : ৩৬)। আসলে কুরবানি প্রদানকারী ব্যক্তির তাকওয়া আল্লাহতায়ালার কাছে পৌঁছে। তাই আমাদের এ কুরবানি তাকওয়াশূন্য হলে গতানুগতিক হয়ে পড়বে। কিছু মানুষ কুরবানীর মূল স্পিরিট থেকে সরে গেছে। কুরবানী ভোগের উপলক্ষ্য তাদের কাছে। কুরবানীর আসল মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে হবে। বাহ্যিক নয়, সত্যিকার আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
করোনায়, বন্যায়, সর্বনাসা নানাবিপদে বিপর্যস্ত মানুষ। এসবের মধ্যেও আমরা বেঁচে আছি। সুস্থ আছি। আল্লাহ আমাদের ইবাদত, কুরবানী ও ত্যাগ কবুল করুন। আমাদের ক্ষমা করুন। ঈদ মুবারক!
