আমরা ‘সাংবাদিক’ না ‘রিপোর্টার’?

Uncategorized অন্যান্য

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ‘সাংবাদিক’ আর ‘রিপোর্টার’ শব্দ দুটি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কোন পত্রিকায় মফস্বলে বা উপজেলা পর্যায়ে কাজ করলে কেউ কেউ তাকে সাংবাদিক মানতে চান না। তারা বলেন ‘রিপোর্টার’ বা ‘সংবাদদাতা’ হবে। তারা সাংবাদিক নয়। সাংবাদিক কেবল তারাই যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্নালিজম পাস করেছেন। ঢাকায় বড় মিডিয়া হাউজে কাজ করেন।

বাকী সবাই রিপোর্টার। আমরা প্রায়ই এধরণের কথা শুনি। এ বিষয় নিয়ে আমি নামিদামী কয়েকজন সাংবাদিকের মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আবার গুগল ইন্টারনেট থেকেও কিছু তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।

এক্ষেত্রে প্রথমেই আমি বলে নিতে চাই, সাংবাদিক বা সংবাদকর্মী হতে গেলে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্নালিজম পাস করে আসতে হবে তার কোন শর্ত নেই। জার্নালিজম একটি ডিগ্রি মাত্র। জার্নালিজম পাস করে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছে এমন সংখ্যা খুবই কম।

বাংলাদেশে বড় বড় টিভি ও পত্রিকা অফিসে কাজ করে তারা প্রত্যেকেই জার্নালিজম করা নয়। তাদের বেশির ভাগই সেখানে স্থান পেয়েছে তার কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার আলোকে। অর্থাৎ যার যত বেশি অভিজ্ঞতা তার মূল্যায়ন তত বেশি। এই অভিজ্ঞতাটা যে জার্নালিজম পাস করে অর্জন করতে হবে তার কোন শর্ত নেই।

একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক হতে হলে জার্নালিজম পাস করারও কোন প্রয়োজন নেই। তবে হ্যাঁ একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক হতে গেলে অবশ্যই শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন আছে। শিক্ষাগত যোত্যতা না থাকলে কোথাও মূল্যায়ন পাওয়া যায় না।

এনিয়ে আমি আমার কাকুর মতামত জানতে চেয়েছিলাম জিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিবির) সাবেক উপস্থাপক রাবেন্দ মজুমদার। তিনি বলেন, যারা রিপোর্টারকে সাংবাদিক মানেননা এটা তাদের ভুল ধারণা। রিপোর্টারও সাংবাদিকতার একটি অংশ। সাংবাদিকতা একটি সমন্বিত শব্দ। এখানে সম্পাদক থেকে শুরু করে, বার্তা সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক, সাবএডিটর, প্রতিবেদক, প্রতিনিধি, কার্টুনিস্ট, উপস্থাপক, ক্যামেরাম্যান সবই এর অংশ। অর্থাৎ যিনি সম্পাদক তিনিও সাংবাদিক। আবার যিনি ক্যামেরা চালান তিনিও সাংবাদিক। তবে যিনি কম্পিউটারে সাংবাদিকের লেখা টাইপ করেন তিনি সাংবাদিক নন।

একই রকম মন্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশের সিনিয়ার সাংবাদিকরাও । তবে অনেকে অপসাংবাদিকতার সাথেও যুক্ত , সাংবাদিকতার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে টাউট বাটপারির সাথে জড়িত থাকেন। তাদের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা সাংবাদিক হিসেবে মর্যাদা পান না।
সাংবাদিকতা একটি খুব বিস্তৃত শব্দ। আমরা নিরাপদভাবে বলতে পারি যে সাংবাদিকতা সর্বজনীন শব্দ, রিপোর্টিং এর একটি অধ্যায়। সুতরাং, এই সংজ্ঞা দ্বারা রিপোর্টিং, অবশ্যই অবশ্যই সাংবাদিকতার একটি অংশ।

সাধারণত রিপোর্টাররা সংবাদ প্রদান করতে পারে এবং টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপকও হতে পারে। এটি সম্ভব যে একজন সাংবাদিক একজন রিপোর্টার হিসেবেও কাজ করতে পারে।

উইকিপিডিয়ায় সাংবাদিকের সংজ্ঞা দেওয়া আছে, ‘সাংবাদিকতা হল বিভিন্ন ঘটনাবলী, বিষয়, ধারণা, ও মানুষ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি ও পরিবেশন, যা উক্ত দিনের প্রধান সংবাদ এবং তা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। এই পেশায় শব্দটি দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও সাহিত্যিক উপায় অবলম্বনকে বোঝায়। মুদ্রিত, টেলিভিশন, বেতার, ইন্টারনেট এবং পূর্বে ব্যবহৃত নিউজরিল সংবাদ মাধ্যমের অন্তর্গত।’

আমার মতে, ‘সাধারণভাবে যিনি সংবাদপত্রের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করেন ও লিখেন তাকেই সাংবাদিক বলে অভিহিত করা হয়। তবে বর্তমান সময়ের আধুনিক সাংবাদিকতার বিশাল পরিসরে সাংবাদিককে নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞায় বেঁধে দেওয়া কষ্টসাধ্য বিষয়। এখন সংবাদপত্রের ধরনে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি সাংবাদিকদের কাজের পরিধিতেও পরিবর্তন এসেছে। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক।

শতভাগ সঠিক সংবাদ প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। মানুষ ঘটনার সঠিক সংবাদ জানতে চায়। সত্য লুকানোর মধ্যে ঘটনার প্রতিকার হয় না। সঠিক ও সৎ সাংবাদিকতা সমাজ বদলে দিতে পারে।’

সংবাদদাতা বা সাংবাদিক (ইংরেজি: Journalist) বিভিন্ন স্থান, ক্ষেত্র, বিষয় ইত্যাদিকে ঘিরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংবাদ সংগ্রহসহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য সংগ্রহপূর্বক সংবাদ কিংবা প্রতিবেদন রচনা করে সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরণ করে থাকেন এটাই সাংবাদিক বা সংবাদদাতার কর্ম।
একজন প্রতিবেদক তৃণমূল পর্যায় থেকে তথ্যের উৎসমূল অনুসন্ধান করেন, প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার পর্ব গ্রহণ করেন, গবেষণায় সংশ্লিষ্ট থাকেন এবং অবশেষে প্রতিবেদন প্রণয়নে অগ্রসর হন। তথ্যের একীকরণ সাংবাদিকের কাজেরই অংশ, যা কখনো কখনো রিপোর্টিং বা প্রতিবেদন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।

সাংবাদিক বলেন আর রিপোর্টার বলেন, এরা খবরের সন্ধান করেন, খবরের পেছনে ছোটেন, খবর নির্বাচন করেন, সম্পাদনা করেন, সংশোধন করেন। সাংবাদিকরা যা করেন, তা হচ্ছে সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা হচ্ছে কাজ।

এদের কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করা, প্রতিবেদন লেখা এবং সম্পাদনা করা। সততা একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় গুণ। অনেক যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলেও সততার অভাবে সাংবাদিকদের অর্জিত সম্মান ধুলোয় মিশে যেতে পারে।

সাংবাদিকতা যতোটা না পেশা তার চেয়ে অনেক বেশি নেশা, ভালোলাগা। এই নেশাটা হচ্ছে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করার নেশা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *