রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘে ৪ প্রস্তাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয়

আজকের দেশ ডেস্ক : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে চারদফা প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের একটি অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।


বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সেক্রেটারিয়েট যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রস্তাবগুলো আমি জাতিসংঘের চলতি ৭৪তম অধিবেশনে উত্থাপন করবো সেগুলো উল্লেখ করছি। যেগুলো হচ্ছে-

১) রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছে সুস্পষ্ট করতে হবে। এজন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী করছে সেটাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে।

২) বৈষম্যমূলক আইন ও চর্চা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘যাও এবং দেখ’ এই নীতিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।

৩) রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

৪) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্য নিশ্চিত করতে হবে যে, রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা দূর করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা প্রদান করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সেক্রেটারিয়েট যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অতীতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনেও তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সেই প্রস্তাবে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ সমূহের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নসহ রাখাইন রাজ্যে একটি বেসামরিক নিরাপদ পর্যবেক্ষণ এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও ছিলো। রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর মূল মিয়ানমারে গভীর প্রথিত। সুতরাং এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই খুঁজে পেতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর মূল মিয়ানমারে গভীর প্রথিত। সুতরাং এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই খুঁজে পাওয়া যাবে।

এতদিনেও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়াকে দুঃখজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা রোহিঙ্গা সংকটের কোনো রকম সমাধান ছাড়াই আরও একটি বছর পার করে দিয়েছি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে রোহিঙ্গারা নৃশংস অপরাধের শিকার হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আবারও বলছি, রোহিঙ্গা সংকটের মূল মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সেখানে খুঁজে বের করতে হবে। মানবিক সহায়তা এবং অন্যান্য সহযোগিতা তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনগুলো সমাধান করে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এর স্থায়ী সমাধান গুরুত্বপূর্ণ।

আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা অবশ্যই তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সক্ষম হবে, যেখানে তারা শতাব্দির পর শতাব্দি বসবাস করেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান কার্যক্রম অনুসরণ করছে।

মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক নির্বাসিত ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিলাম যা ইসলামের নৈতিক শিক্ষা।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে, তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে আমাদের সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে, চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। রোহিঙ্গারা ৮০০ একরের বেশি বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে, যাতে বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হিসেন লং, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আর্ডেন ছাড়াও অনুষ্ঠানে সাতটি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *