জাবি প্রতিনিধি ঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত এক সাংবাদিককে অতিথিকক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ২৪ ঘন্টার ভিতর বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার সংলগ্ন রাস্তায় সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারের দাবিসহ ৪ দফা দাবি নিয়ে আয়োজিত মানববন্ধনে এ হুশিয়ারি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে ২৪ ঘন্টার ভিতর অভিযুক্তদের বিচার করা, বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ, তদন্ত কমিটির গাফিলতি খতিয়ে দেখা এবং আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক জহির ফয়সাল বলেন, ‘ছাত্রলীগ যদি হলের সীট দেয় তাহলে প্রশাসনের দায়িত্ব কি? ছাত্রলীগ যদি হল চালায় তাহলে প্রশাসনের হাতে চুড়ি পরা উচিত।
এই প্রশাসন গন্ডারের চামড়ার মতো বধির হয়ে গেছে। জাতির বিবেক সাংবাদিক তাদেরও বিচারের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে হয় এটা লজ্জাজনক।
সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, ‘বাংলাদেশে যে বিচার হীনতার যে সাংস্কৃতি চর্চা আছে সাংবাদিক নির্যাতনের এই ঘটনার বিচার না হওয়া তারই বহিঃপ্রকাশ। হলগূলো চালাচ্ছে মূলত ছাত্রলীগ।
প্রশাসনকে দাপ্তরিক কাজ ছাড়া কোনো কিছুতেই পাওয়া যায় না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি বন্ধ করা হোক।’
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, ‘আজকে সাংবাদিকেরা যে দাবি গুলো নিয়ে দাঁড়িয়েছে তা আমাদের সকলের।
সাংবাদিকেরাই যুগের পর যুগ কলম ধরেচহে লেখনির মাধ্যমে এই দাবি গুলোই করে আসছে। আজ তারা রাস্তায় নেমেছে। তারা প্রশাসনের বা ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের অপকর্ম তুলে ধরে বলেই তাদের উপর প্রশাসনের বা ক্ষমতাসীন সংগঠনদের ক্ষোভ।
তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সেখানে স্পষ্টত সাংবাদিকের দোষ খোজা হয়েছে যা ন্যাক্কারজনক। অভিযুক্ত প্রত্যেককে বহিষ্কার করতে হবে। সাংবাদিকদের মুক্ত সাংবাদিকতা এবং মুক্তমত প্রচারের অধিকার দিতে হবে।’
সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি বেলাল হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিক সমিতি ৫০ বছর পার করেছে। তারপরও যদি সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয় তবে এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ছাড়া কিছুই না। ১৯৭২ এর বাকশাল থেকে সাংবাদিকেরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। সেদিন ঘটনায় প্রশাসনের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আমরা পাইনি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এর কাছে প্রশ্ন করার কারণে তার উপর এই পরিকল্পিত হামলা করা হয়েছিল।
প্রশাসন র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে সেটা ফাকা বুলি। সাংবাদিক নির্যাতনেরই বিচার হয়না সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থী বিচার পাবে কল্পনাতীত। তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট প্রদান করেছে তা হাস্যকর রিপোর্ট। সেখানে ভুক্তভোগীর কোনো বক্তব্য নেই।
পক্ষপাতিত্বমূলক একটা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে৷ এই ঘটনায় হল প্রশাসন যে গাফিলতি দেখিয়েছে এতে আমরা প্রোভোস্টের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। তদন্ত কমিটি প্রহসন করেছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যত শিক্ষার্থী হত্যা করা হয়েছে তার কোনোটির বিচার হয়নি। এই অগ্রহণযোগ্য প্রশাসন যেভাবে কাজ করছে তা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনা। ২৪ ঘনটার ভিতত বিচার না হলে আমরা আগামী রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অবরোধ করব।’
সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদের উপস্থাপনায় আরও বক্তব্যে রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কালের কন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি শুভ আনোয়ার, নিউ এইজের প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনৌজ কান্তি রায় প্রমুখ।
