ভবিষ্যতে মানব জাতির চন্দ্র বিজয় অভিযান বাস্তবতা নাকি মরীচিকা?

Uncategorized অন্যান্য

মন্তব্য প্রতিবেদন ঃ কোল্ড ওয়ার যুগে সভিয়েত ইউনিয়নের হাত ধরে মানব জাতির পাঠানো কোন বস্তু প্রথম চাঁদের মাটি স্পর্শ করে ১৯৫৯ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর। মুলত লুনা-২ মিশনের মাধম্যে ততকালীন সময়ে সভিয়েত ইউনিয়ন এই অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করে দেখিয়েছিল সারা বিশ্বকে। যদিও অবশ্য চন্দ্র অভিযানের এই সাফল্যের যাত্রা আরো অনেক আগেই শুরু হয়ে যায়। ১৯৫৯ সালের ২রা জানুয়ারি মানব জাতির প্রথম কোন উপগ্রহ বা স্যাটালাইট পৃথিবীর অভিকর্ষের প্রবল বাধা অতিক্রম করে চাঁদের দিকে ছুটে গিয়ে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। আর সেই স্যাটালাইট সিস্টেমটি ছিল সভিয়েত ইউনিয়নের কাল জয়ী লুনা-১ স্পেস মিশন।

১৯৫৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সভিয়েত ইউনিয়ন বা বর্তমান হালের পুতিনের দেশ রাশিয়া এককভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক চন্দ্র জয় অভিযানে মোট ৫০টি মিশন পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে ২১টি ছিল সফল, ২৫টি ব্যর্থ এবং ৪টি মিশন আংশিক সফল হয়।

এদিকে বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক সুপার পাওয়ার আমেরিকা বিগত পঞ্চাশ বছরে চন্দ্র জয়ের উদ্দেশ্যে মোট ৪৭টি মিশন পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে ২৮টি মিশন ছিল সফল, ৪টি মিশন আংশিকভাবে সফল হয় এবং ১৫টি মিশন একেবারে ব্যর্থ হয়ে যায়।

তবে এটা ঠিক যে, চন্দ্র বিজয়ের প্রতিযোগিতায় সাম্প্রতিক অবদান বিবেচনা করা হলে এ অভিযানে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে রেড জায়ান্ট চীন। চীন এ পর্যন্ত কোন রকম ত্রুটি ও ব্যর্থতা ছাড়াই একাই ৭-৮টি সফল মিশন পরিচালনা করে রকেট ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড স্যাটালাইট ডেভলপমেন্টে বিশ্বের বুকে নিজের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরেছে।

চীন তার প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে চাঁদের ঠিক বিপরীত অন্ধকার অংশে সরাসরি ল্যাণ্ডার অবতরণ করে আরেক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এদিকে ভারতও কিন্তু বসে নেই। তারা এ পর্যন্ত চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২ নামে দুটি পৃথক মিশন চাঁদের অভিমুখে প্রেরণ করেছে বছর খানেক আগেই।

তবে ভারতের চন্দ্রযান-১ মিশন পুরো মাত্রায় সফল হলেও গত ২০১৯ সালের ৭ই সেপ্টেম্ব চন্দ্রযান-২ মিশনে চাঁদের বুকে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক বিক্রম ল্যান্ডার অবতরণ করতে ব্যর্থ হয় বা এটি ক্রাস করে। তবে ল্যান্ডার বিক্রমের সাথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও চাঁদের কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার স্যাটালাইট বেশ ভালো ভাবেই তার মিশন পরিচালনা করে।

ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি ও জাপানও কিন্তু তাদের নিজস্ব অর্থায়নে এবং প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে চাঁদের বুকে এককভাবে ১টি করে সফল মিশন পরিচালনা করেছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের মিনি সুপার পাওয়ার খ্যাত ছোট্ট দেশ ইসরাইলও কিন্তু তার নিজস্ব প্রযুক্তিগত যোগ্যতাকে ব্যবহার করে চন্দ্র অভিযান মিশন পরিচালনা করে। যদিও ইসরায়েলের চন্দ্র বিজয় অভিযানটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যায়।

১৯৭৬ সালের পর থেকে চন্দ্র জয়ের অভিযানে ব্যাপক ভাটা পড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে চার দশকের হিমশীতল নিদ্রা ভেঙ্গে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা জানিয়েছে, তারা আগামী ২০২৪-২৫ সালের দিকে চাঁদের বুকে আবারো নতুন করে মানুষ পাঠাবে। এজন্য তারা গত আগস্ট মাসে মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে চাঁদে পর্যবেক্ষণ স্যাটালাইট মিশন পাঠানোর শিডিউল ঠিক করেছিল। তবে রকেটে কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়ায় মিশনটি আপাতত স্থগিত করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’।

এদিকে চীনের পাশাপাশি রাশিয়াও কিন্তু ভবিষ্যতে আমেরিকার আগেই চাঁদের বুকে নভোচারীসহ স্পেস মিশন পাঠানোর জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে। এমনও হতে পারে, এই দুটি দেশ আমেরিকাকে টেক্কা দেওয়ার জন্য সমন্বিত ভাবে চন্দ্র অভিযান বা মিশন পরিচালনা করতে পারে।

ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা চাঁদের বুকে একটি স্থায়ী মুন ভিলেজ তৈরি করবে। যা হয়ত ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে গবেষণার পাশাপাশি ব্যবসা বানিজ্য এবং পর্যটনে সহায়তা প্রদান করবে। তবে হলিউডের মহাকাশ ভ্রমণের উপর সিনেমা দেখে আমরা মানব নিজেদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় যতটা বেশি এগিয়ে গিয়েছি বলে মনে করছি, বাস্তবে তা কিন্তু খুবই কমই অর্জিত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *