নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা
জীশান মীর্জা নামটি এখন আর কোনো অচেনা মানুষের নাম নয়। মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোয় নামটি হয়ে উঠেছে সবার পরিচিত। এই নাম উচ্চারিত হলে সবার আগে মনে আসে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) কথা। নামটি যেন পুনাকেরই সমার্থক হয়ে গেছে। তিনি পুনাকের সভানেত্রী। মানবসেবায় তিনি যেন অক্লান্ত। কখনো দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, কখনো অসুস্থকে সেবা দিয়ে, আবার কখনো সহায়-সম্বলহীনকে কাজের সুযোগ করে দিয়ে জীশান মীর্জা পুনাকের কার্যক্রমকে দিয়েছেন অন্য রকম মাত্রা। ১৯৮৬ সালে পুনাকের যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই সংগঠন নানাভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। নানা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলছে। পুনাকের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর নেতৃত্বে থাকেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশের (আইজিপি) সহধর্মিণী। সংগঠনটির ২২তম সভাপতি হিসেবে বর্তমানে এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)-এর সহধর্মিণী জীশান মির্জা। পুনাকের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ রংপুর ও লালমনির হাটে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও ছাগল বিতরণ। অনুষ্ঠানে পুনাক সভানেত্রী সুবিধাবঞ্চিত ৩৫ জন নারী-পুরুষের প্রত্যেককে একটি ছাগলসহ চাল, ডাল, সরিষার তেল, শুকনা মরিচ, শাড়ি, লুঙ্গি, টর্চলাইট এবং মৌসুমি সবজির বীজ বিতরণ করেন। এ ছাড়া রংপুরে পুলিশ লাইনস মাঠে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে পুনাক সভানেত্রী বলেন, ‘পুনাক বাংলাদেশ পুলিশ পরিবারের নারীদের একটি সংগঠন। আমরা আমাদের নিজেদের গণ্ডি পেরিয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি। মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করার জন্য তাদের মাঝে গরু, ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। করোনায় মারা যাওয়া মানুষকে যখন আপনজনেরা ফেলে চলে গেছে, তখন মৃতের গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করেছি।’সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ ও আগুনে আহতদের জন্য উপহারসামগ্রী নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পুনাক সভানেত্রী।এর আগে গত জুনে পুনাক সভানেত্রীর উদ্যোগে চিকিৎসা ও থাকার জায়গা পান সত্তরোর্ধ্ব এক অসহায় বৃদ্ধ। শাহজালাল নামের ওই ব্যক্তি যশোর শহরের রেলগেট এলাকায় সড়কের পাশের ফুটপাতে পাঁচ দিন ধরে পড়ে ছিলেন। শরীরে পচন ধরেছিল, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল। এই খবর সংবাদ মাধ্যমে জেনে জীশান মীর্জা ওই বৃদ্ধকে পুনর্বাসনে উদ্যোগী হন। তারই ধারাবাহিকতায় শাহজালালকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পুলিশ। ঢাকায় দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর তাঁর অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। তবে নিজের ঠিকানা মনে করতে পারেন না তিনি। এ কারণে তাঁকে চিকিৎসা শেষে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পঙ্গু হাসপাতালে শিশু জান্নাতকে দেখতে যান পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা।শাহজালালকে পুনর্বাসনের কয়েক দিন আগেই জীশান মীর্জা ছুটে যান চট্টগ্রামে। সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে আহতদের পাশে দাঁড়াতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন তিনি। এ সময় পুনাক সভানেত্রী আহতদের জন্য তিন লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেন। এ ছাড়া তিনি আহতদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের ফল এবং দেড় হাজার বোতল পানি বিতরণ করেন।
প্রতিবন্ধকতাজয়ী শাহিদার হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা। সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো শিশু জান্নাতের পাশে দাঁড়িয়েও সবার নজর কেড়েছেন জীশান মীর্জা। ৮ বছরের শিশুটির যে বয়সে উচ্ছলতায় দিন কাটানোর কথা, সেই বয়সে তার দিন কাটছিল হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে পা হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে। খবর পেয়েই ছুটে যান পুনাক সভানেত্রী। সিলেটের জৈন্তাপুর থানার চিকনাগুল গ্রামের অধিবাসী দিনমজুর কয়েস আহমেদের মেয়ে জান্নাতের জন্য ব্যবস্থা করেছেন কৃত্রিম পায়ের। জীশান মীর্জার ঐকান্তিক চেষ্টায় জান্নাত এখন কৃত্রিম পায়ে ভর করে হাঁটতে পারছে। পাশের বাড়ির গোয়ালঘরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়েকে নিয়ে থাকতেন গৃহহীন মকবুল হাওলাদার (৭৫)। তবে এখন আর তাঁকে এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে না। কারণ, বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা ও বরগুনার বেতাগী পৌরসভার মেয়র এ বি এম গোলাম কবিরের উদ্যোগে পাকা ঘর পেয়েছেন মকবুল। গত মার্চে ঘরটি মকবুলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁকে ঘরটি দেওয়া হয়েছে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে।রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্টাফ কোয়ার্টারে শিশুদের খেলার জায়গা ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কর্নার’ উদ্বোধন করেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না কিশোরগঞ্জের আনিছুর। চলতে হয় ক্রাচে ভর দিয়ে। বোনও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঘরে অসুস্থ মা। বাবার ঝালমুড়ি বিক্রিতে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনোরকমে চলে সংসার। এরপরও দমে যাননি মো. আনিছুর রহমান। মাস্টার্স শেষ করেছেন। কিন্তু একটা চাকরি যেন সোনার হরিণের চেয়েও দুর্লভ হয়ে উঠেছিল। পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা এ খবর পেয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, ব্যবস্থা করেছেন চাকরির।রাজশাহীর চারঘাটের গৃহহীন ও বিধবা ভানু বিবি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কাজ করতে না পারায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছিল। প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটার ওপর জরাজীর্ণ ঘরে কোনোরকমে দিন কাটছিল তাঁর। তাঁর এই অবস্থার কথা জানতে পেরে পাশে দাঁড়িয়েছেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা। তাঁর নির্দেশে ভানু বিবি উপহার হিসেবে পেয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই স্বপ্ননীড়। তাই সারা দেশের অসহায়, হত-দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে অক্লান্ত কাজ করে যাওয়া একমাত্র আস্থার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে মহীয়সী এক নারী জীশান মির্জা ও তার সংগঠন পুনাক।
