হঠাৎ একটি প্রচ্ছদে চোখ আটকে গেলো, “ আমার গত জীবন ”একজন গোয়েন্দা পুলিশের একটি মামলার রহস্য উন্মোচনের গল্প- বনজ কুমার মজুমদার

Uncategorized অন্যান্য

আজকের দেশ রিপোর্ট ঃ নেটে বইয়ের প্রচ্ছদ দেখতে দেখতে হঠাৎ একটি প্রচ্ছদে চোখ আটকে গেলো। “ আমার গত জীবন ” – খান বাহাদুর মৌলভী শরাফত আলী চৌধুরী। একজন গোয়েন্দা পুলিশের একটি মামলার রহস্য উন্মোচনের গল্প। প্রথম প্রকাশ ২৪ এপ্রিল, ১৯৪৭ খ্রিঃ। বইটি খুঁজে না পেয়ে সিলেট থেকে আনিয়ে নিই।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম আমুড়ার শিলাঘাট গ্রামের শরাফত আলী চৌধুরী ১৮৮৪ সালে “ রাইটার কনস্টেবল ” হিসেবে আসাম পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন এবং ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি, এ পদটি এখন অবলুপ্ত) পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর পুনরায় ১১ বছর বৃটিশ সরকারের উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। বৃটিশ সরকার সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে ‘খান সাহেব’, ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেয় এবং কিংস পুলিশ মেডেল-এ ভূষিত করে। একসময় তিনি আসাম বিধান সভার সদস্যও ছিলেন।

“আমার গত জীবন” বইটিতে শরাফত আলী চৌধুরী আসামের তেজপুর সেন্ট্রাল জেল-এ ১৮৮৭ সালে আগুন লাগার বিখ্যাত মামলার রহস্য উন্মোচনের ঘটনা বিবৃত করেছেন।

বইটি মাত্র ৮০ পৃষ্ঠার, প্রতি পাতা রহস্য ঘেরা। মামলার রহস্যভেদের জন্য আইজিপি তাকে বাসায় গোপনে ডেকে নিয়ে দায়িত্ব দেন। মামলার কারনে তিনি প্রায় এক বছর ছদ্মবেশে ছিলেন, রোগাক্রান্ত হয়েছেন এবং চাহিদামতো বেশ ধরেছেন।

লেংগুটি পড়া গাজীপুরি সন্ন্যাসি হয়ে গায়ে ভূষি মেখে বটতলায় গাঁজা খেয়ে ঘুমিয়েছেন, ফকির হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করেছেন, চাকর সেজে ব্রাক্ষণ দারোগার বাসায় থালা-বাসন ধুয়েছেন, রাখাল হয়ে জেল খানার পাশে গরু চড়ানোর চাকুরি করেছেন।

জেলের বাহিরের তদন্ত শেষ করে জেলভাংগা দুর্ধর্ষ ও বিপদজনক কয়েদি রুপে তেজপুর জেলে ঢুকেছেন এবং যোগ্যতা দেখিয়ে কয়েদিদের সর্দার নির্বাচিত হয়েছেন প্রায় একবছরের চেষ্টায় মামলার রহস্য উন্মোচন করেছেন।

তিনি যেদিন আদালতে পুলিশ অফিসার হিসেবে এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে গেছেন হাজার হাজার লোক রাস্তার পাশে জড়ো হয়েছিল তাঁকে ও আসামীদের দেখার জন্য। মামলার রায়ের দিনও দেশ-বিদেশ হতে বহু লোকের সমাগম হয়েছিল।

খান বাহাদুর মৌলভী শরাফত আলী চৌধুরী খান সাহেব তাঁর পুলিশি জীবনে শত শত মামলার রহস্য উন্মোচন করেছেন।
সেই শত রহস্যের শুধুমাত্র একটি গল্প – যার জন্ম হয়েছিল প্রায় ১৩৫ বছর আগে – পাঠ করে আমি নতুন কিছু শিখছি, এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে! আমার বিশ্বাস – কর্মরত
প্রতিটি পুলিশ সদস্য অবশ্যই কিছু না কিছু শিখবেন। আমি পিবিআই’র ট্রেনিং সেশনগুলোতে যখন ক্লাস নেই তখন এসআই ও ইন্সপেক্টরদের অঙ্গীকার করাই তারা যেন অবসর গ্রহণের পর লেখার অভ্যাস গড়ে তোলেন। কর্মজীবনে তাদের প্রত্যেককেই কমবেশি সম্মুখিন হতে হয় বহুমাত্রিক লোমহর্ষক ও কৌতুহলউদ্দীপক অজানা কাহিনীর।

এজন্য এখন থেকেই নোট লিখে রাখতে হবে। আমার উদ্দেশ্য – নোট নেয়া শুরু করলেই তদন্তাধীন মামলায় মনোযোগ বাড়বে এবং তাদের লাভ – অবসরের পর লেখাগুলো সমৃদ্ধ হবে। খান সাহেব প্রমাণ করেছেন- রহস্য উন্মোচনের কাহিনী কখনো পুরানো হয় না – সবসময় তরতাজা – হার মানায় কিরিটি, ফেলুদা, ব্যোমকেশ কিংবা মাসুদ রানাদের।

ধন্যবাদ জানাই গোলাপগঞ্জ হিস্ট্রি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার ও আনোয়ার শাহজাহানকে যারা প্রায় ৭৫ বছর পর এ বইটির ২য় মুদ্রণ প্রকাশ করেছেন।
(সুত্রঃ- বনজ কুমার মজুমদার এডিশনাল আইজিপি পিবিআই, এর টাইম লাইন থেকে নেওয়া)


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *