নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিহারীর সন্তান হাইব্রিড আওয়ামী লীগার আজগর নস্কর! আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ স্বীকৃতি পাওয়া তিন বছর চললেও আজগর ২ বছর বলে প্রচার করছে তারা। জানা গেছে, সহযোগী সংগঠনের স্বীকৃতি জন্য ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক কাউন্সিল করে মৎস্যজীবী লীগ। এরপর একই বছরের ২০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১ তম জাতীয় সম্মেলনে মৎস্যজীবী লীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেয়া হয়। জাতীয় সম্মেলনের প্রায় ১ বছর পর ২০২০ সালে ২০ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে লায়ন শেখ আজগর নস্কর। কমিটির মেয়াদ তিন বছর হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সময় থেকেই তালবাহানা করছে সংগঠনের সাধারন সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আগে সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের কথা রয়েছে। মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন যাতে এ বছর না হয় সেজন্য স্বীকৃতির ১ বছর কমিয়ে এনেছে চতুর এই বিএনপি পন্থী সংগঠনের সাধারন সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর । গেল ২২ অক্টোবর ২ বছরপূর্তি উৎযাপন করেছে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। জেলেদের ভাগ্য উন্নয়নে কোনো কাজই করতে পারেনি এই কমিটি। মৎস্যজীবীদের জন্য কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেনি। কমিটি বাণিজ্য করে শুধু নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যস্ত ছিল সংগঠনের সাধারন সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর। সারাদেশে সংগঠনের শক্তিশালী কাঠামো দাড় করাতে পারেনি তারা। বিভিন্নস্থানে বিতর্কিত ও হাইব্রিডদের কমিটিতে স্থানও দেওয়া অভিযোগ রয়েছে।আজগর নস্কর নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে সংগঠনের দফতর সম্পাদককে অব্যাহতি আর ৩ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সহ উপপ্রচার সম্পাদককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে।সংগঠনে আর কোনো যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নেই। ভবিষ্যতে কেউ যাতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হতে না পারে সে রাস্তা পরিস্কার করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আজগর নস্করের। আজগর নস্করের একক কর্তৃত্বে সায় দিয়ে যাচ্ছেন সভাপতি সাইদুর রহমান সাইদ, কার্যকরী সভাপতি সাইফুল আলম মানিক সহ তার অনুসারীরা। সংগঠনের কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে চোখ রাঙাচ্ছে, মৎস্যজীবী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও ভয় দেখাচ্ছে।আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর একজন বিহারী সন্তান। ঠাঁকুরগাঁও জেলার রানী শংকৈল উপজেলার নেকমোরদ ইউনিয়নের গাজীগর বিহারী কলোনীর মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে আজগর আলী। নিজ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ স্থানীয় লোকজন তেমন কেউ তাকে চিনেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আজগর আলী নস্কর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে দিনাজপুরে একটি মটর গ্যারেজের হেল্পার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কিছুদিন ট্রাক ড্রাইভারের কাজ করেন। ১৯৯০ সালে একটি হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দিনাজপুর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় অন্য আসামীকে দেখতে আসা দর্শনার্থী দিনাজপুরের মেহের সুলতানার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক ঘটে। মাঝে মধ্যেই মেহের সুলতানা তার সাথে জেলখানায় দেখা করতেন। ১৯৯২ সালে জেল থেকে ছাড়া পান আজগর আলী। ১৯৯৬ সালে প্রেমিকা মেহের সুলতানাকে বিয়ে করে রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি ছোট্র বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করেন। বাসার পাশেই একটি স’মিলে সামান্য বেতনে (করাতকল) কিছু দিন চাকুরী করেন। কোন মতে সংসার চালিয়ে জীবন পার করছিলেন। এক পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কিনে করাতকলে ভাঙ্গিয়ে তা খুচরা বাজারে বিক্রি করেন। সে সময় তার সাথে এক আদম ব্যাপারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তার সঙ্গে এক পর্যায়ে আদম ব্যবসা শুরু করেন। আস্তে আস্তে আদম ব্যবসার অন্তরালে শুরু করেন হুন্ডি ব্যবসা। ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা, পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি আজগর নস্করকে। বিদেশে নারী পাচার ও হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে কয়েক বছরেই কামিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ভাড়া বাসা পরিবর্তন করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজের ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন। অবৈধ অর্থ রক্ষায় সব সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে রাখতেন সুসম্পর্ক। দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
ইতিমধ্যে একটি নিউজ পোর্টালে তার আপন বড় ভাই সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘বিএনপির জিয়া পরিবারের সাথে ছিল আমাদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার শ্বশুর আমার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আজগর আমার সঙ্গে তাদের বাড়ীতে অনেকবারই গিয়েছে।’ সেই সূত্রে বড় ভাইয়ের হাত ধরেই বিএনপির বড় নেতাদের বাসায় যাতায়াত ছিল আজগর নস্করের। অনসন্ধানে আরও জানাযায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে তার নাম লেখান এই শেখ আজগর আলী নস্কর। সে সময় দলীয় কর্মসূচিতে তেমন তার উপস্থিতি ছিলনা বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা। মৎস্যজীবী লীগের পদ বাগিয়ে নেবার পরই সুকৌশলে তার নামের পরিবর্তন আনেন সুচতুর এই শেখ আজগর আলী নস্কর।
অর্থাৎ তার পুরা পরিবারই ঠাঁকুরগাঁও জেলার রানী শংকৈল উপজেলার নেকমোরদ ইউনিয়নের গাজীগর বিহারী ক্যাম্পের সদস্য। তার পিতা মৃত ইদ্রিস আলী, ভাই কুদ্দুস আলী, ভাই আব্বাস আলী, ভাই আশরাফ আলী, ভাই আক্কাস আলী, বিহারী পরিবারের সদস্য। তার পিতা ও ভাইদের নামের পূর্বে বংশীয় পদবি হিসেবে ‘শেখ’ না থাকলেও তিনি লায়ন শেখ আজগর আলী নস্কর হিসাবে নিজকে জাহির করেন।
২০১৬ সালে মৎস্যজীবী লীগের কাউন্সিলে নেতৃত্বের স্বাধ নিতে উঠে পড়ে লাগেন। নিজস্ব মালিকানায় রাজধানীর ফকিরাপুলে আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন কৌশলে কর্মীদের ডেকে, নেতাদের সান্নিধ্য পেতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন। ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বরে জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন আজগর আলী। উক্ত পদ পেতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮/১০ কোটি টাকা, যা তিনি প্রায়ই নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছেন।