ডিএনসি’র ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) কর্তৃক ১১,০০০ পিস ইয়াবা ও ১১০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস সহ কথিত সাংবাদিক ও টিভি আর্টিস্ট গ্রেফতার

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) কর্তৃক ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার কক্সবাজার ভিত্তিক মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা মোঃ শফিক এবং তার প্রাক্তন স্ত্রী ‘ক্রাইম রিপোর্টার ও টিভি আর্টিস্ট পরিচয় প্রদানকারী’ মরিয়ম বেগম ওরফে সুমি সহ ৩ জন গ্রেপ্তার এবং ১১০০০ (এগার হাজার) ইয়াবা ও ১১০ (একশত দশ) গ্রাম আইস সহ (ক্রিস্টাল মেথ) উদ্ধার করেছে, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।

জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ‘মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

এর ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) এর উপ-পরিচালক মোঃ মাসুদ হোসেন সার্বিক নির্দেশনায় মতিঝিল সার্কেলের পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও সূত্রাপুর সার্কেলের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে দুটি টিম ঢাকা মেট্রোপলিটনের ডেমরা এলাকায় রবিবার ১৩ নভেম্বর, দুপুর থেকে অভিযান চালায়।
উক্ত অভিযান পরিচালনা কালে ডেমরা থানার পশ্চিম বক্সনগর ও স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে ১১০০০ (এগার হাজার) ইয়াবা ও ১১০ (একশত দশ) গ্রাম আইসসহ (ক্রিস্টাল মেথ) কক্সবাজার ভিত্তিক মাদক পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য কে গ্রেফতার করা হয়।

আসামীদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, মোঃ শফিক (৩৬), পিতা- মৃত আব্দুল হাকিম, মাতা- মৃত রাবেয়া খাতুন, ঠিকানাঃ গ্রামঃ দক্ষিণ তারাবুনিয়ারছড়া, কক্সবাজার পৌরসভা, জেলাঃ কক্সবাজার, মরিয়ম বেগম ওরফে সুমি (৩২), পিতাঃ মজিবর রহমান, মাতাঃ সেলিমা রহমান, ঠিকানাঃ গ্রামঃ কান্দিপাড়া খাঁবাড়ি, থানাঃ লৌহজং, জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ, বর্তমান ঠিকানাঃ পশ্চিম বক্সনগর, সারুলিয়া, ডেমরা, ঢাকা। মোঃ সুমন ফকির (৩৮), পিতাঃ আলেফ ফকির, মাতাঃ মৃত ফাতেমা বেগম, ঠিকানাঃ গ্রামঃ আলিমাবাদ ফকিরবাড়ী, থানাঃ মুলাদী, জেলাঃ বরিশাল, বর্তমান ঠিকানাঃ ৩২/১২ বি, সুলতানগঞ্জ, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

যেভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়ঃ ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (দক্ষিণ) সাম্প্রতিক কালে ব্যবহৃত বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের উৎস অনুসন্ধানে তৎপর হয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইয়াবা-আইস-এল.এস.ডি সহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করেছে। গত সপ্তাহে আইস পাচারকারী চক্রের মূল হোতা চন্দন রায়কে আটক করার পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার কেন্দ্রিক একটি ইয়াবা-আইস পাচারকারী নেটওয়ার্কের সন্ধান পাওয়া যায়। এই নেটওয়ার্কের মূল হোতা মোঃ শফিক (৩৬) ইতোপূর্বে ১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ধরা পড়ে।
গত আগস্ট মাসে জামিনে বের হয়ে তার প্রাক্তন স্ত্রী ‘অনলাইন জেএননিউজ ডটকম এর সাংবাদিক, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটির সদস্য এবং বাংলাদেশ টিভি ও ফ্লিম আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পরিচয় প্রদানকারী’ মরিয়ম বেগম ওরফে সুমি (৩২)কে সাথে নিয়ে পুনরায় চক্রকে সক্রিয় করে।
গোপন সংবাদদাতাদের তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার ১৩ নভেম্বর প্রথমে ক্রেতা সেজে এই চক্রের এক সদস্য মোঃ সুমন ফকির (৩৮) কে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মোঃ শফিক (৩৬) ও মরিয়ম বেগম ওরফে সুমি (৩২)র অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।

পরে সূত্রাপুর সার্কেলের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ও মতিঝিল সার্কেলের পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দুটি টিম পৃথকভাবে ডেমরা থানাধীন স্টাফ কোয়ার্টার ও সারুলিয়া এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযান পরিচালনা কালে পাচারকারী চক্রটির দুই হোতাকে ১০৫০০ (দশ হাজার পাঁচশত) পিস ইয়াবা ও ১১০ (একশত দশ) গ্রাম আইসসহ গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার কৃত শফিক ও সুমীর পরিচয়ঃ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ শফিক (৩৬) জানায়, ২০১৭ সালের দিকে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ইয়াবা পৌঁছানোর কাজ করতো। ২০২০ সালে মরিয়ম বেগম ওরফে সুমি (৩২) কে ২য় বিয়ে করার পর তাকে নিয়ে ডেমরা এলাকায় ইয়াবা-আইসের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। ইয়াবা পাচার ও বিক্রির জন্য প্রাক্তন স্ত্রীর সাংবাদিক ও টিভি আর্টিস্ট পরিচয় ব্যবহার করতো তারা। ইতোপূর্বে ২০২১ সালের প্রথমদিকে ১০ হাজার ইয়াবাসহ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের হাতে গ্রেপ্তার হয়। ২০২২ এর আগস্টে জামিনে বের হয়ে পুনরায় সক্রিয় হয়। গ্রেপ্তারকৃত মোঃ শফিক (৩৬) জানায়, ইয়াবা ও অত্যন্ত উচ্চমূল্যের মাদক আইস (ক্রিস্টাল মেথ) তার স্ত্রীর মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতো। জিজ্ঞাসাবাদে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া এলাকার মাদকের গডফাদারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
ইয়াবা ও আইস (ক্রিস্টাল মেথ) এর মূল্য উল্লেখ করা হলো,
সেবনকারী পর্যায়ে প্রতি পিস ইয়াবার মূল্য ৩০০-৫০০ টাকা এবং প্রতি গ্রাম আইস (ক্রিস্টাল মেথ) ৪০০০-৫০০০ টাকা।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানায় পৃথক পৃথক নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান। এই অপরাধের সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড।

ইয়াবা ও আইস (ক্রিস্টাল মেথ) এর প্রভাবে মানব দেহে যে সকল প্রভাব বিস্তার করে তা যথাক্রমে উল্লেখ করা হলো, ইয়াবা ও আইস (ক্রিস্টাল মেথ) এর মূল উপাদান অ্যামফিটামিন। ইয়াবায় সাধারণত ২০-২৫ ভাগ অ্যামফিটামিন থাকে, তবে নতুন আইসে (ক্রিস্টাল মেথ) শতভাগ অ্যামফিটামিন থাকে।
ইয়াবা ও আইস (ক্রিস্টাল মেথ) এর সাইকোঅ্যাকটিভ প্রভাব সাংঘাতিক৷ নিয়মিত সেবনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, শরীরে কিছু চলাফেরার অস্তিত্ব টের পাওয়া, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন-অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে। অ্যামফিটামিনে অভ্যস্ততার প্রভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা, হ্যালুসিনেশন ও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *