দুর্নীতির মধু কুমিল্লা বোর্ড ! দীর্ঘদিন কর্মরত থেকে বনে গেছেন ধনকুব

Uncategorized আইন ও আদালত


নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মূল পদ সরকারি কলেজ। কলেজে না পড়িয়ে বহু শিক্ষক তদবির করে শিক্ষাবোর্ডে প্রেষণে গিয়ে আর ফিরতে চান না নিজ পেশায়। বছরের পর বছর বোর্ডের পদ আঁকড়ে থেকে জড়িয়ে পড়ছেন দুর্নীতিতে। বোর্ডের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় কোটি কোটি টাকার কেনাকাটার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অর্থ। পরীক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। শিক্ষামন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দূরের কথা প্রেষণ বাতিল পর্যন্ত করছে না। অথচ ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তিন বছরের বেশি এবং চাকরি জীবনে দুই বারের বেশি কোনো শিক্ষক প্রশাসনিক পদে থাকতে পারবেন না।এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গণমাধ্যম বলেন, অস্বাভাবিক সময় ধরে বোর্ডে যারা কর্মরত আছেন তাদের তথ্য পেলে বদলি করা হবে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ না পেলে তো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না। কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল নাসের। তিনি ২০১৫ সালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক হিসাব নিরীক্ষা পদে যোগ দেন। পরে কলেজ পরিদর্শক পদে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের মার্চে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে তার পদায়ন হয়। আবার ২০২২ ঘুরে ফিরে তিনি কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা বোর্ডের সচিব নূর মোহাম্মদ এক যুগের বেশি সময় ধরে বোর্ডে কর্মরত। তিনি ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি উপ-সচিব (একাডেমিক) পদে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ তাকে সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে। উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর থেকে কর্মরত। উপ-কলেজ পরিদর্শক বিজন কুমার চক্রবর্তী ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর থেকে একই পদে আছেন। উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহিদুল হক ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে বোর্ডে আছেন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চমাধ্যমিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল থেকে বোর্ডে কর্মরত। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৬ মার্চ থেকে কুমিল্লা বোর্ডে কর্মরত। জানা গেছে, সারা দেশের সরকারি, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মূলত নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি, পাঠদানের অনুমতি, একাডেমিক স্বীকৃতি, অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা, বিভাগ ও বিষয় খোলা, আসন বৃদ্ধি বোর্ডের দায়িত্ব। বোর্ডের কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বোর্ডের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদন দেন। তবে বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এ কাজে বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোটা অংঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা হয়। এ কাজে বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, বোর্ডের কর্মকর্তারা টাকা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন করেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি অনুমোদনেও বোর্ডের কর্মকর্তাদের টাকা দিতে হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন, ভর্তি বাতিল, নিবন্ধন, শ্রেণি ছাড়পত্র, দ্বি-নকল রেজিষ্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহের কাজ টাকা ছাড়া হয় না। নাম ও বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রেও টাকা গুনতে হয় শিক্ষার্থীদের। বছরের পর বছর বোর্ডে কর্মরত থাকার সুযোগে একেক জন বনে গেছেন ধনকুবের বিপুল সম্পদের মালিক। সাবেক এক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বোর্ডের চাকরি সোনার হরিন। পৃথিবীর কোথাও এতো বোনাস নাই। বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারা বছর যা বেতন পায় তার চেয়ে বেশি বোনাস পান। নিবন্ধন, ফরম পূরণ, পরীক্ষার প্রস্তুতি, পরীক্ষা, ফল প্রকাশের কাজে বোনাস দেওয়া হয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গুদামে গেলেও ভাতা পান। বোর্ড নিজেরা আইন করে এসব সুবিধা নিচ্ছেন। এগুলো বাতিল হওয়া উচিত। বোর্ডে কেনাকাটায় সব চেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য যে, কুমিল্লা বোর্ডে মিটিং হলে বোর্ডে কর্মরত কর্মকর্তারা সিটিং এ্যালাউন্স পায়। যা সম্পূর্ণ বিধিঃবহিভূূত।
চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তরা মাসে ১০/১৫টা সম্মানী পায়। যাহা তাহার রুটিং মাফিক দায়িত্বের মধ্য পড়ে। আইনগত ভাবে তারা এ সুবিধা নিতে পারেনা। বোর্ডে অন্তত পক্ষে স্থায়ী কর্মচারীদের প্রায় সকলেই বিক্ষুপ্ত আকারে বলেছেন (ডেপুটি লেভেলের) কলেজগুলো থেকে এসে এখন শিকড় গেড়ে আছেন। যার কারনে আমাদের পদোন্নতি হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করা শর্তে- বোর্ডের একজন সাবেক অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এফএসএম শাখার দায়িত্বরত উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পুরাতন কাগজ বেচার নগদ টাকার সিংহ ভাগ ভাগ-ভাটোয়ারা হয় আর ছোট্ট একটি অংশ ব্যাংকে জমা হয়। অডিট কর্তৃপক্ষ এসকল বিষয়ে আপত্তি করলে সাধারন কর্মচারীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে অডিট নিষ্পত্তি করা হয়। কথিত আছে গত আগষ্টে বোর্ডে ৩সদস্য বিশিষ্ট অডিট টিমকে সচিবের নেতৃত্বে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। এখানেই বোঝা যায় কত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে কুমিল্লা বোর্ডে। আগস্ট মাসে যে অডিট হয়েছিল তা পুনরায় অডিট হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
বোর্ড অনুমোদিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষকের চূড়ান্ত বরখাস্ত অনুমোদনের জন্য আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটিতে উপস্থাপন করতে হয়। এ কমিটির অনুমোদন ছাড়া চূড়ান্ত বরখাস্তের সুযোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির সকল প্রমাণ পেলেও বোর্ডের কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে অনেককে বহাল রাখেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি (বাশিস) নজরুল ইসলাম রনি বলেন, বোর্ডে প্রেষণে একবার আসলে কেউ আর যেতে চান না। এখানে মধু আছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *