নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ২২ নভেম্বর বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সামনে মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) এর এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে অবৈধ হুন্ডি পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে সিআইডি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতি এদেশের অর্থনীতির উপর যে চাপ তৈরী করেছে তা মোকাবেলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর এই ঝুঁকি মোকাবেলায় সিআইডি হুন্ডি কার্যক্রমের উপর নজরদারী শুরু করে।
সিআইডি ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহপূর্বক MFS এর মাধ্যমে হুন্ডি পরিলক্ষিত হচ্ছে এরকম প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক MFS এজেন্ট একাউন্টের সন্ধান পায়। সিআইডির ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট ঢাকা ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে যৌথভাবে তিনটি অভিযান পরিচালনা করে সর্বমোট ১৬ (ষোল) জনকে গ্রেফতার করেছিলো।
এর ধারাবাহিকতায় গত সোমবার ২১ নভেম্বর এবং মঙ্গলবার ২২ নভেম্বর সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিট পুনরায় অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা ও ঢাকা হতে দুটি চক্রের সর্বমোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত চক্র হুন্ডি ব্যবসা করে এবং অবৈধভাবে হুন্ডির মাধমে বিদেশে অর্থপাচার ও বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে অর্থ পাচার করে আসছে।
সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে উক্ত বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমান মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে।
প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মূদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদেরকে দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় উক্ত অর্থ MFS এর এজেন্টকে প্রদান করে।
তৃতীয় গ্রুপ তথা MFS এর এজেন্ট কর্তৃক বিদেশে অবস্থানকারীর নিকট হতে প্রাপ্ত MFS নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। চক্রদুটি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে MFS ব্যবহার করে ক্যাশ ইন এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। গত এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র অনুমান প্রায় ৩ (তিন) কোটি টাকা হুন্ডি করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ খোরশেদ আলম (৪২) এর মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ জে এ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিম এর মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিআইডি সন্দেহজনক ২ (দুই) টি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে যার মাধ্যমে গত ৬ মাসে আনুমানিক ৩ (তিন) কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায়।
এই দুইটি সিম নিয়ে কাজ করতে যেয়ে এরকম আরো ১১ টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি যাদের মাধ্যমে এরকম সন্দেহজনক তথা ডিজিটাল হুন্ডির লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং সিআইডির অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তা হলো এ ২০০০ এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।
গ্রেফতারকৃতদের জিজিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় Freemdomflexi24.com ফ্রিডম ফ্লেক্সি ২৪ ডট কম এমন একটি সফটওয়্যার যার মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিগণ বাংলাদেশে যে নাম্বারগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিত এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশী হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত।
MFS এর এজেন্টদের সহযোগীতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিং এর ভার্চুয়াল মূদ্রা ক্রয়-বিক্রয়, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণচোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, মীর মোঃ কামরুল হাসান শিশির (২৮), (ফ্রিডম নেট ওয়েবসাইট পরিচালনাকারী) পিতা- মীর মোঃ আব্দুল মতিন, মাতা- রাজিয়া বেগম, সাং- টঙ্গিরপার, ইউনিয়ন- ছনুয়া, থানা- ফেনী সদর, জেলা- ফেনী, খোরশেদ আলম (৩৪), (ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ ম্যানেজার) পিতা – মৃত আব্দুর রাজ্জাক, মাতা-আমেনা খাতুন, ঠিকানা – সাং- দক্ষিণ নরপাটি, পোস্ট – ধমবাড়িয়া, থানা-লাকসাম, জেলা-কুমিল্লা, মোঃ ইব্রাহিম খলিল (৩৪), বিকাশ এজেন্ট, পিতা- মোঃ মামুন মিয়া, মাতা- সাজেদা বেগম, ঠিকানা- সাং- ভাকডডা, পোস্ট- আউশ পাড়া, থানা- লাকসাম, জেলা- কুমিল্লা, কাজী শাহ নেওয়াজ (৪৬), বিকাশ ডিএসও, পিতা – মৃত কাজী হাবিবুল্লাহ, মাতা-সাফিয়া খাতুন, ঠিকানা – গাজীরপার, পোস্ট – দক্ষিণ চাঁদপুর, থানা-লাকসাম, জেলা – কুমিল্লা, মোঃ আজিজুল হক তালুকদার (৪২), বিকাশ এজেন্ট, পিতা- মোঃ গোলাম হোসেন তালুকদার, মাতা- কুহিনুর বেগম, সাং- ৪৩০ কালিয়াজুরী, ওয়ার্ড নং- ০৩, থানা- কোতয়ালী, জেলা- কুমিল্লা এবং মোঃ নিজাম উদ্দিন (৩৫), বিকাশ এজেন্ট সহযোগী, পিতা- মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মাতা- ৭৪ ভাটপাড়া (খলিফা বাড়ী, ভাটপাড়া পুরাতন মসজিদের পিছনে), কবরস্থান রোড, ওয়ার্ড নং- ০১, থানা- কোতয়ালী, জেলা- কুমিল্লা।
উদ্ধারকৃত মালামাল সমুহের বিবরণ যথাক্রমে, মোবাইল- ১১ টি, সীমকার্ড- ১৮ টি, ল্যাপটপ- ০১ টি এবং ট্যাব – ০১ টি।
মামলার তথ্যসমুহের বিবরণ যথাক্রমে, পল্টন মডেল থানার মামলা নং ৩৮, তারিখঃ ২২ নভেম্বর ধারা- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৪(২)/ ৩০(২)/৩১(২)/৩৫(২) তৎসহ ৪০৬/৪১৭ পেনাল কোড রুজু করা হয়েছে। মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।