“চলবে ওএমএস টিসিবি ভিজিডি” আবাদযোগ্য জমি পতিত নয় “কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই “এ বি সি ক্যাটাগরি মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন ” বিদেশি ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সতর্কতা ” ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি জানানোর নির্দেশ” রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও সুশাসনে জোর”
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ করোনা মহামারি-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আগামী বছরে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। এ কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যাতে অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ে, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের আগাম সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, খাদ্যের আপৎকালীন মজুদে হাত দেওয়া যাবে না। সংকট মোকাবিলায় দেশের আপৎকালীন মজুদ অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন সরকারি গুদামে মজুদের পরিমাণ ১৫ লাখ মেট্রিক টনের কম না হয়। বর্তমানে দেশে ১৬ লাখ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দেন। এতে সভায় খাদ্য সচিব ছাড়া অধিকাংশ সচিবই উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব, বিদ্যুৎ সচিব, আইন সচিব, জননিরাপত্তা সচিব, ভূমি সচিব, কৃষি সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিবসহ মোট ১৭ জন সচিব নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন বিষয়ে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আরও রয়েছে- দেশের খাদ্য নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। সংকট যেন না হয়, এজন্য আমদানি ও উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি আবাদযোগ্য জমি পতিত রাখা যাবে না। ওএমএস, টিসিবির ট্রাক সেল, ভিজিডিসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান রাখতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে। খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন বিদেশে থাকায় বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দেশের খাদ্য মজুদ ও উৎপাদন পরিস্থিতি তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বৈঠকের প্রধান আলোচ্যসূচিতে থাকা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয় মনোযোগ দিয়ে শোনেন সরকারপ্রধান। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,২০২৩ সালে কঠিন সময় যাবে।
আন্তর্জাতিক ভাবে এটা বলা হয়েছে। চীন ও রাশিয়ায় উৎপাদন কমেছে। এজন্য সংকট আসবে। আমরা এখনই যে বিপদে পড়েছি তা কিন্তু না। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে, আমার আগাম ব্যবস্থাটা নিতে হবে যেন ভবিষ্যতে কোনো বিপদে দেশ না পড়ে বা দেশের মানুষ না পড়ে। আমাদের সেই সতর্কতাটা একান্তভাবে দরকার এবং সেই সতর্কবার্তাটাই কিন্তু আমরা দিচ্ছি। আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের পাঁচ-ছয় মাসের হিসাব আছে। তার পরও এখন যা অবস্থা, তাতে আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে, আরেকটু সচেতন হতে হবে। সরকারি গুদামে আপৎকালীন মজুদ ১৫ লাখের কম রাখা যাবে না। প্রয়োজনে উৎপাদন ও আমদানি বাড়াতে হবে। খাদ্য, সার ও জ্বালানিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের সব পতিত জমি ব্যবহারের নির্দেশ দেন তিনি। উৎপাদন বাড়লে আমদানি কমবে বলে জানানো হয় বৈঠকে। এ সময় কৃষি সচিব সায়েদুল ইসলাম দেশের খাদ্য ও কৃষি পণ্যের উৎপাদন পরিস্থিতি তুলে ধরেন বৈঠকে। তিনি কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারের জোগান নিশ্চিত করার বিষয়টিও তুলে ধরেন। পাশাপাশি দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তুলে ধরে বক্তব্য দেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন ও বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান। ভূমির ই-রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল নামজারির বিষয়ের অগ্রগতি প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য দেন আইন সচিব গোলাম সারওয়ার। একইভাবে জঙ্গিবাদ, মিয়ানমার সীমান্ত ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান। ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তুলে ধরেন দুর্যোগ সচিব কামরুল হাসান। এ ছাড়া প্রয়োজনীয়তার নিরিখে প্রকল্প গ্রহণ ও উন্নয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরকারি সেবা প্রদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও ডিজিটালাইজেশন, প্রশাসনের সুশাসন নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা কথা বলেন। সচিব সভার বিষয়ে বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোগ্যপণ্য, ফল এসব ক্ষেত্রে খরচ কমাতে বলেছেন। প্রয়োজন ছাড়া প্রকল্প করা যাবে না। বিদেশি সাহায্য বা ঋণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে বা হবে, সেগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। নিজেদের খরচের প্রকল্পে নিরুৎসাহ করা হয়েছে বৈঠকে। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ১০ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি বিষয়ে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা যেন কারও সহায়তা ও অর্থ না পায়, এ নিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেছেন, সুশাসনের জন্য জনগণের ও রাষ্ট্রের চাহিদার সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। স্মার্ট গভর্ন্যান্সের দিকে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। সিটিজেন চার্টার, এনআইএস, তথ্য অধিকার আইন যেন ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, সেসব বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি সংকট আছে। ব্রুনাই থেকে আগামী বছর সিএনজি পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে, সেভাবে মানুষকে সঙ্গে নিজে কাজ করতে হবে।