নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের ১০ সদস্য গ্রেপ্তার

Uncategorized আইন ও আদালত


নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ বিপুল অস্ত্র ও বিস্ফোরক সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম এলাকায় ১০ অক্টোবর থেকে টানা অভিযানের পর শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানিয়েছে, অস্ত্র প্রশিক্ষণের বিনিময়ে জামায়াতুল আনসারের কাছ থেকে মাসে তিন লাখ টাকা পেত কেএনএফ। এরই মধ্য দিয়ে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সাথে প্রথমবারের মতো পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যোগসূত্র পাওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানা গেলো।

গত শুক্রবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যম কে জানান, সংগঠন দুটির মধ্যে ২০২১ সালে সম্পাদিত দুই বছর মেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী কেএনফ সদস্যদের খাবার খরচও বহন করত জঙ্গি গোষ্ঠীটি। গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে জামায়াতুল আনসারের সাতজন এবং কেএনএফের তিন সদস্য রয়েছেন বলে জানান তিনি।

“ইসলামি জঙ্গিদের সঙ্গে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই সখ্য দেশের জন্য বড়ো হুমকি” বলে শুক্রবার গণমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অপরাধ বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক।

“এক্ষেত্রে মতাদর্শের তুলনায় ঐক্যবদ্ধভাবে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার বিষয়টিই তাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে,” উল্লেখ করে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “তাদের এই সংঘবদ্ধতাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।”

তাঁর মতে, ইসলামি জঙ্গিদের সাথে যেমন মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর যোগ থাকতে পারে, তেমনি পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো ও খিয়াং জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাই মূলত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্য, যারা প্রধানত খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। অন্যদিকে জামায়াতুল আনসার কট্টর ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী।
র‍্যাবের অনুবাদ অনুযায়ী জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার বাংলা হচ্ছে- ‘পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার’।

তাদের তরুণ সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে ছাড়াও পটুয়াখালী, ভোলা সহ বিভিন্ন এলাকার ‘সেইফ হাউজে’ আত্মগোপন করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলেও জানায় র‍্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, পার্বত্য অঞ্চলের ওই শিবিরে অর্ধশতাধিক জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে।

কমান্ডার মঈন গণমাধ্যমের কাছে বলেন, “অস্ত্র চালনা সহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য তারা বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকাকে বেছে নেয়।”

“কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামক সশস্ত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাথাং বমের সাথে ২০২১ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার আমিরের সম্পর্ক হয়।

এরপর পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফের ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে মারুফ আহমেদ ওরফে মানিক সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার হত্যা মামলার আসামি হাফেজ নাঈমের অনুজ বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।
র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তিন পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী কেএনএফের সামরিক শাখা কেএনএ-র (কুকি-চীন ন্যাশনাল আর্মি) সদস্য। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে একটি আলাদা স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট।

আদর্শ ও ধর্মীয় দিক থেকে কেএনএফ ও জামায়াতুল আনসারের মধ্যে কোনো মিল না থাকলেও “একে অপরের কাছ থেকে সুবিধা পেতেই” দুটি সংগঠন একসাথে কাজ করছে বলে গণমাধ্যমে জানান নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে হোলি আর্টিজান বেকারি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বাংলাদেশের তিন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসার আল-ইসলাম এবং হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলাম বাংলাদেশের (হুজি-ব) নেটওয়ার্ক ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
“ওই তিন জঙ্গি সংগঠনের কিছু সদস্য একত্রিত হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি গঠন করেছে,” বলেন আব্দুর রশীদ।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *