১৪ দলকে ম্যানেজ করলেও দল ভাঙছে মেননের

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দলের ভেতরে বাইরে বিপদ পিছু ছাড়ছে না রাশেদ খান মেননের। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দিয়ে ক্ষমতাসীন ১৪ দলের মধ্যে চাপে পড়া শুরু মেননের। তোপের মুখে প্রথমে নিজ বক্তব্যের ব্যাখ্যা এবং পরে দুঃখপ্রকাশ করে চিঠি দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্ষম হয়েছেন প্রবীন এ রাজনীতিক। জোট ম্যানেজ করে নিলেও নিজের দল ওয়ার্কার্স পার্টি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তার দলে আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত রোববার বরিশালে দেয়া বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ১৪ দলের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের কাছে চিঠি দেন মেনন। ১৪ দল মেননের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ১৪ দলের শরিক দলের নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে চিঠি দিয়েছিলাম।
তিনি নির্বাচন নিয়ে ১৪ দলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তারপর তিনি তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমরা তার জবাবে সন্তুষ্ট হয়েছি। যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান ঘটেছে।
সোমবার ১৪ দলের সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান প্রমুখ।
তবে এরপরই খবর আসে, মেননের দলের ছয় নেতা আসন্ন কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা হলেন পলিটব্যুরো সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাকির হোসেন হবি, মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু, অনিল বিশ্বাস ও তুষার কান্তি দাস। মেননকে ছেড়ে যাওয়া নেতারা ইতিমধ্যে তারা নতুন দল গঠনেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপিÍ পাঠিয়ে এই নেতারা কংগ্রেসে অংশ না নেয়ার কথা জানান। তাদের মতো আরও কয়েকজন নেতা কংগ্রেসে অংশ না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অবশ্য এর আগে সোমবার রাশেদ খান মেননের সঙ্গে দলীয় বৈঠকে একসঙ্গে ছিলেন তারা। যদিও তাদের এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এই নেতাদের দল ছাড়ার মধ্য দিয়ে চীনপন্থি কয়েকটি কমিউনিস্ট পার্টি এক হয়ে ১৯৯২ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনের পর এ নিয়ে তৃতীয় দফায় বড় ভাঙনের মুখে রয়েছে দলটি।
এর আগে মেননের রাজনৈতিক দর্শনের প্রশ্ন তুলে গত মঙ্গলবার পার্টি ছেড়ে যান দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস। এরপর থেকে ওয়ার্কার্স পার্টিতে ভাঙনের বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।
এর আগে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বেরিয়ে সাইফুল হক আলাদা দল গঠন করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার পর হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে একদল ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে সিপিবিতে যোগ দিয়েছিলেন। আগামী ২-৫ নভেম্বর দশম কংগ্রেস করতে যাচ্ছে ওয়ার্কার্স পার্টি। সভাপতির একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য বাম দলটি মেননের দল হিসেবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত।
গঠনের পর ওয়ার্কার্স পার্টি প্রথমে সিপিবি নেতৃত্বাধীন বাম ফ্রন্টে ছিল। পরে ১১ দল গঠন হলে সেই জোটেও ছিল দলটি। কিন্তু দেড় যুগ আগে আওয়ামী লীগকে নিয়ে গঠিত ১৪ দলে ওয়ার্কার্স পার্টি যোগ দিলে সিপিবি, বাসদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে।
মেননকে ছেড়ে যাওয়া নেতা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, জনগণ সব সময় চেয়েছে ঐক্যবদ্ধ পার্টি। আমরা ‘৯২ সালে কংগ্রেস করে ঐক্যবদ্ধ পার্টি করেছি। এখন পার্টির মূল রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে যারা রয়েছে, তাদেরকে নিয়ে লেট কমিউনিস্ট ইউনিটির যে প্রক্রিয়া সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হব।
নতুন দল গঠনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমরা ওই লক্ষ্যেই যারা আদর্শবাদী পার্টির ভেতরে রয়েছে তাদেরকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি- আসেন আমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কমিউনিস্ট আন্দোলন, বাম ঐক্যকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
দ্রুতই রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপ করে নতুন দলের নাম ঠিক করা হবে বলেও জানান তিনি। বিমল বিশ্বাসের মতো ইকবাল কবির জাহিদরাও বর্তমান নেতৃত্বে বিরুদ্ধে আদর্শচ্যুতির অভিযোগ তুলে বলছেন, ওয়ার্কার্স পার্টি বর্তমানে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে সংস্কারবাদী, সুবিধাবাদী পার্টিতে পরিণত হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্ব রাজনৈতিক দুর্নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক দুর্নীতিতে আক্রান্ত।
এদিকে দলের শীর্ষ নেতাদের এমন সিদ্ধান্তকে আমলে নিচ্ছেন না ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন। নতুন দল হলেও তা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন বলে জানিয়েছেন। তার আশা শেষ মূহুর্তে এই নেতারা কংগ্রেসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।
তিনি বলেন, আমাদের কংগ্রেস হবে। উনি বা উনারা কংগ্রেসে না এলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রশ্ন আসবে। সেগুলো তখন বিবেচনা করব। মূলত যশোরের কয়েকজন এটা করছে। চারজনই তো যশোরের। আমরা মনে করি, কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধভাবেই হবে। দলও ঐক্যবদ্ধ থাকবে আশা করি।
অতীতে দল ভাঙ্গার বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, অতীতে অনেকে দল ছেড়ে অন্য দলে গেলেও সুবিধা করতে পারেননি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *