গাজীপুরে পাশবিক নিযার্তনের শিকার শিশু সিহাব হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করলো পিবিআই

Uncategorized আইন ও আদালত



নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গাজীপুর মাজুখানে পাশবিক নিযার্তনের শিকার শিশু ভিকটিম সিহাব হত্যার রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িত আসামী মোঃ নাসির মিয়া (২৮), পিতা-মোঃ কামাল মিয়া, মাতা-নাসিমা বেগম, সাং- সোনাপুর জমিদারহাট (পাক মুন্সীর হাট),থানা-কবিরহাট জেলা-নোয়াখালী বর্তমানে- সাঈদ এর বাড়ির ভাড়াটে, ময়দার মিল সংলগ্ন, সাং- মাজুখান বাগের টেক, থানা- পুবাইল, জিএমপি গাজীপুর কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ দুপুর অনুমান ১ টার পর হতে ভিকটিম সিহাব হোসেনকে খোঁজা খুঁজি করে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে জানতে পেরে ভিকটিমের দাদী সহ পরিবারের লোকজন সিহাবকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।

এক পর্যায়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ সকাল অনুমান সাড়ে ৭ টায় লোকমুখে ভিকটিমের দাদী নাছিমা বেগম শুনতে পায় যে, পূবাইল থানাধীন মাজুখান সাকিনস্থ উত্তরপাড়া এলাকায় জনৈক হাজী সালাম মুন্সির বসত বাড়ি বিল্ডিং এর সামনে একটি ছেলের লাশ পাওয়া গেছে।

সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের দাদী, তাঁর ছেলে, ছেলের স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যেয়ে বাদীনির নাতী ভিকটিম সিহাব হোসেন (৬) এর লাশ সনাক্ত করে এবং মৃতদেহ তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যায়।

পরে সংবাদের ভিত্তিতে পূবাইল থানা পুলিশ ভিকটিমের দাদী নাছিমার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ দুপুর অনুমান ১ টার পর হতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ সকাল অনুমান সাড়ে ৭ টার মধ্যবর্তী যে কোন সময় কতিপয় অজ্ঞাতনামা/দুষ্কৃতিকারী ব্যক্তিগণ একই উদ্দেশ্যে ভিকটিম সিহাব (৬)কে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতঃ খুন করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ফেলে রেখেছে।

উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের দাদী নাছিমা বাদী হয়ে জিএমপি’র পুবাইল থানার মামলা নং-১৫ তারিখ- ২৬/০৯/২০২১, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করে। অতঃপর পুবাইল থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে কোনো রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে।

অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম তদন্ত করেন।

গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাকালে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামি নাসির মিয়া(২৮) মাজুখান উত্তরপাড়ায় ফারুকের মুরগীর দোকানে কর্মচারি হিসেবে কাজ করতেন। বেশির ভাগ সময় মালিক দোকানে থাকতেন না। নাসির নিজেই মুরগী ও ফিড বেচা কেনা করতেন।

পাশের গলির জুয়েলের ছেলে ভিকটিম সিহাব মাঝে মধ্যে তাঁর কাছে দোকানে আসতো। ফিড খেয়ে ফেলার সময় মুরগী তাড়ানোর জন্য দোকানদার খেলনা পিস্তল ব্যবহার করতেন। খেলনা পিস্তলের ছোড়া গুলি ভিকটিম সিহাব কুড়িয়ে আনতো।

নাসির মাঝে মধ্যে সিহাবকে চিপস্ কিনে দিতেন। ভিকটিম সিহাব নাসিরকে মুরগী চাচ্চু বলে ডাকতো। এভাবে ভিকটিম সিহাবের সাথে নাসিরের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আসামি নাসির একই মহল্লায় ইমনদের বাসায় ভাড়া থাকতেন।

ঘটনার দিন নাসির বাসায় নিজ কক্ষে ল্যাপটপে নীল ছবি দেখছিলেন। দুপুর ১২ টা থেকে সাড়ে ১২টায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সময় ভিকটিম সিহাব নাসিরের রুমে যায়।

তখন নাসিরের মাথায় বিকৃত চিন্তা আসে এবং সিহাবকে বলৎকার করতে চাইলে চিৎকার দেয় আসামি নাসির মুখ চেপে ধরলে ভিকটিম শিশু সিহাবের দেহ নিথর নিস্তেজ হয়ে যায়। সিহাবের মৃতদেহ খাটের নিচে রেখে দরজা লাগিয়ে নাসির বাইরে চলে যায়।

পরবর্তীতে ভোর রাতে ভিকটিম সিহাবের মৃতদেহ সালাম মুন্সীর বাড়ির পাশে ফেলে রাখে। ঘটনার ৩ দিন পরে নাসির এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যায়। ২দিন পরে চিটাগাং থেকে ফিরে আসে। এরপর ১ সপ্তাহ পরে আসামি নাসির ৪০ দিনের জন্য চিল্লায় (তাবলিগে) চলে যায়।

এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম আজকের দেশ ডটকম কে জানান, ঘটনায় জড়িত একমাত্র আসামি বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন। ল্যাপটপে নীল ছবি দেখে উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম শিশু সিহাবকে বলৎকারের চেষ্টাকালে পাশবিক নিযার্তন পূর্বক হত্যা করে।

আসামি এ মামলার ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে গতকাল ১৯ জানুয়ারি আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *