সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত র‍্যাবের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না যুক্তরাষ্ট্র-মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে

Uncategorized আন্তর্জাতিক



!! র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা একটি ছোট বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন !!


নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে জানিয়েছেন, সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা একটি ছোট বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে তাঁরা এই মন্তব্য করেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠান শেষে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, “র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা একটি ছোট বিষয়। তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে শত শত সম্পর্ক রয়েছে আমাদের। তারা স্বীকার করেছে র‍্যাব ভালো কাজ করছে।” তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক রেখে কাজ করতে চায়।”

গত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা একের পর দেশে এসে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “তাঁদের দেশে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার জন্য। সব ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা উভয় দেশের চাওয়া।”

রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরানো বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য-এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন দেশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আমেরিকা ও কানাডা সহ বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নিজেদের দেশে নেবে বলেও জানিয়েছে।”

‘দায়বদ্ধতা’ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, গত বুধবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডেরেক শোলে বলেন, “সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‍্যাবের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না।”

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বরে র‍্যাব ও এর বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছেন তাঁদের মধ্যে শোলে অন্যতম জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
“যদি কোথাও গণতন্ত্র ক্ষয়িষ্ণু হয়, সেটি আমাদের যৌথ পথ চলাকে সীমাবদ্ধ করে দিতে শুরু করে,” বলেন শোলে।
র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে আইনের শাসন ও নিরাপত্তা জোরদার করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যতক্ষণ না আমরা দায়বদ্ধতা দেখতে পাচ্ছি, যতক্ষণ না আমরা টেকসই সংস্কার দেখতে পাচ্ছি, ততক্ষণ আমরা এই বিষয়ে পাতা উল্টাতে পারব না।”

মানবাধিকার সংগঠন গুলোর হিসাবে, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা এবং ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ বঞ্চিত করে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে।

কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়টি বাংলাদেশ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

অবশ্য সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ সত্য নয়। প্রতিটি বন্দুকযুদ্ধের পর একটি তদন্ত কমিটি হয় এবং তদন্তে কারো দোষ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

নিষেধাজ্ঞা ছোট বিষয়?
র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আসলেই ছোট বিষয় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক গণমাধ্যমে বলেন, “মন্ত্রী কী বিবেচনায় এটিকে ছোট বিষয় বলেছেন তা আমার জানা নেই। তবে আমার জানা মতে সরকার বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখছে না।” নিষেধাজ্ঞার ফলে বাহিনীর সদস্যদের ওপর এর বড়ো প্রভাব পড়েছে দাবি করে সাবেক এই পুলিশ প্রধান বলেন, “সদস্যরা মনে করে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাঁরা আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলোতে প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হবেন।”
“সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে, এ রকম নিষেধাজ্ঞা দেশের জন্য ভীষণ লজ্জার। তাই এটিকে সরকার ছোট বিষয় হিসেবে দেখছে বলে আমি মোটেও মনে করি না,” বলেন তিনি।

এর আগে গত মাসে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সফরকালে একটি বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমে বলেছিলেন, “র‍্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
উনি আমাকে বলেছেন, অবরোধ প্রত্যাহার একটি জটিল প্রক্রিয়া। তবে আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই প্রক্রিয়া শেষে অবরোধ প্রত্যাহার হবে।”
সঠিক পথ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমেরিকায় আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছি এবং এ সংক্রান্ত মার্কিন সরকারের সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। ডোনাল্ড লু আমাদের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।”


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *