নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারি চাকরিজীবী এম আর রহমান। জরুরি প্রয়োজনে যান রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে। পকেটে নগদ টাকা নেই। গাড়ি ভাড়া দেবেন বলে ইউসিবির ভিসা কার্ড দিয়ে ব্যাংক এশিয়ার এলিফ্যান্ট রোডের বুথ থেকে টাকা তুলতে যান। কিন্তু টাকা তুলেই বিপাকে পড়েন রহমান। কারণ বুথ থেকে যে ৫০০ টাকার নোট বের হয়েছে তা ছেঁড়া। নোটের কোনার একটা অংশ নেই। উপায় না পেয়ে এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে গাড়িভাড়া পরিশোধ করেন তিনি।
বেসরকারি ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এক গ্রাহককেও বুথ থেকে টাকা তুলে বিপাকে পড়তে হয়। গত ১৭ অক্টোবর ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের বুধ থেকে টাকা তুলে ওই ব্যাংকেরই একটি শাখায় জমা দিতে যান নজরুল ইসলাম। ওই শাখা দুটি নোট জাল হিসেবে শনাক্ত করে। পরে পাঞ্চ করে ফুটো করে দেয়া হয় নোট দুটি। নজরুল ইসলাম বলেন, আমি যখন বলি যে, আপনাদের বুথ থেকেই মাত্র টাকা তুলেছি। তখন অফিসার বলেন, বুথগুলো ম্যানেজমেন্ট করে থার্ড পার্টি। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
এভাবে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিকারও মিলছে না। ভোগান্তিতে পড়া রহমান বলেন, গত ৬ অক্টোবর ইউসিবির ভিসা কার্ড দিয়ে ব্যাংক এশিয়ার এলিফ্যান্ট রোডের বুথ থেকে টাকা তুললে ছেঁড়া নোট বের হয়। নোটের কোনার ছোট একটা অংশ ছিল না। সেখানে আলাদা কাগজের টুকরা লাগানো ছিল। সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলে তারা বলে, আপনার উচিত ছিল বুথের ক্যামেরার সামনে নোটটা ধরে রাখা। যেহেতু করেননি তাহলে নিকটস্থ ব্রাঞ্চে যান, তারা নোটের অবস্থা দেখে বলতে পারবেন এবং বদলে দিতে পারেন। কিন্তু পাশে কোনো শাখা না পাওয়ায় আমি বদলাতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, ত্রুটি নোট বুথের ক্যামেরার সামনে ধরা, সংশ্লিষ্টদের জানানো- এত ঝামেলা না করে সেবা উন্নত করলেই পারে। কারণ তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা। সবাই তা-ই করে। এ কারণে ব্যাংকের উচিত বুথে জাল, ছেঁড়া ও ত্রুটিপূর্ণ নোট না রাখা। তাহলে গ্রাহক এ ধরনের সমস্যায় পড়বে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনের তাগিদে এটিএম বুথে লেনদেন বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে ভোগান্তিও। কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া, বুথে জাল ও ছেঁড়া নোট, সবসময় পর্যাপ্ত টাকা না থাকাসহ নানা জটিলতা রয়েছে এটিএম বুথগুলোতে। যেহেতু গ্রাহক তাৎক্ষণিকভাবে লেনদেন করেন তা-ই সেবার মান নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন।
বুথ-সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোকে ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। অবহেলা বা প্রতারণার অভিযোগের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা ও কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ নিয়মিত পরিদর্শন করি। এখন পর্যন্ত বেশকয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের জাল ও ছেঁড়া নোট না দেয়াসহ সেবার মান বাড়াতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিএম সেবার মান বাড়াতে কঠোর হয়েছে। যদি কোনো ব্যাংকের এটিএম সেবা নিয়ে অবহেলা বা প্রতারণার অভিযোগ আসে এবং তা প্রমাণ হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা ও কর্মকর্তাকে শাস্তি আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিএম সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকগুলো চেষ্টা করছে। আশা করি, আগামীতে এটিএম সেবার মান আরও উন্নত হবে।
এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এটিএম বুথের সেবা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যেহেতু এ সেবার আওতা বেড়েছে, কিছু সমস্যাও হচ্ছে। তবে কিছু ব্যাংক তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে এ সেবা দিচ্ছে। তাদের ভুলের কারণে অনেক সময় সমস্যা তৈরি হয়। আমরা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।
আশা করছি, গ্রাহক আগামীতে আরও ভালো সেবা পাবে- বলেন ব্যাংক নির্বাহীদের এ নেতা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্থাপিত ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইস বাংলাদেশের (এনপিএসবি) চ্যানেল ব্যবহার করে এক ব্যাংকের গ্রাহক আরেক ব্যাংকের বুথ থেকে সহজে টাকা তুলতে পারেন। তবে নিজ ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে টাকা তুলতে বার্ষিক চার্জের বাইরে কোনো খরচ হয় না। এক ব্যাংকের গ্রাহক আরেক ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে টাকা তুললে প্রতি লেনদেনে ১৫ টাকা চার্জ দিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এনপিএসবির আওতায় রয়েছে ৫১টি ব্যাংকের এটিএম বুথ।
সবশেষ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ রয়েছে ১০ হাজার ৭২২টি। গত আগস্টে এক ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে আরেক ব্যাংকের গ্রাহক ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে এক হাজার ৭৮০ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন।