মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
অন্ধকার থেকে মুক্ত করুক একুশের আলো এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতি বছরের নেয় এবছরও নড়াইলে ভাষা শহীদদের স্মরণে জ্বালানো হয়েছে লাখো মঙ্গল প্রদীপ মোমবাতি। (২১ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার সন্ধ্যায়,নড়াইল একুশের আলো সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের কুড়িরডোব মাঠে ভাষা শহীদদের স্মরণে এ আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের সময় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসক মো: হাবিবুর রহমান তার সৌজন্যমূলক বক্তব্য দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে লাখো মঙ্গল প্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন উদ্বোধন করেন। এসময় শহীদ মিনার,জাতীয় স্মৃতিসৌধ,বাংলা বর্ণমালা,আল্পনাসহ গ্রাম বাংলার নানা ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় এ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে ভাষা দিবসের ৭২তম বার্ষিকীতে ৭২টি ফানুষ ওড়ানো হয়। সন্ধ্যায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীদের‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি’এই গান পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শুরু করেন,আয়োজক কারী’রা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোসা.সাদিরা খাতুন,নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো:রবিউল ইসলাম,পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা,একুশের আলো, নড়াইল এর সহ-সভাপতি অ্যাড.ওমর ফারুক,সাধারণ সম্পাদক কচি খন্দকার,নড়াইল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুমার কুণ্ডু,সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান,সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা’র গর্বিত পিতা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপনসহ নড়াইলের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ প্রমূখ। বিগত ২৬ বছর ধরে এই জমকালো ঐতিহাসিক আয়োজনে দূর-দূরান্ত জেলা থেকে লাখ লাখ মানুষ নড়াইলের কুড়িরডোপ পাঠে জড়ো হন। বাবা-মায়ের সঙ্গে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন দেখতে আসা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ইউশা বলেন,ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আগে কখনো একসঙ্গে এতো মোমবাতি জ্বলতে দেখিনি,আন্ধকারের মধ্যে এই আলো দেখতে খুবই ভালো লাগছে। মানিকগঞ্জ জেলার বাসিন্দা চিকিৎসক সোহেল রানা ও ঢাকা জেলার বাসিন্দা শিক্ষক কবির বলেন,মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলনের এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি,এমন আয়োজন বাংলাদেশে কোন দিন দেখিনি,ভাষা শহীদদের স্মরণ করার পাশাপাশি আশা করবো এই আলোর সঙ্গে কেটে যাবে সমস্ত অন্ধকার।আয়োজক’রা জানান,নড়াইল একুশ উদযাঁপন পর্ষদের আয়োজনে ভাষা শহীদদের স্মরণে ১৯৯৭ সালে নড়াইলে এই ব্যতিক্রমী আয়োজন শুরু হয়। প্রথমবার ১০ হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হলেও প্রতি বছর এর ব্যবহার বেড়েছে। একুশের আলো উদযাঁপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ও নাট্যব্যক্তিত্ব কচি খন্দকার বলেন,বিগত ২৬ বছর ধরে আমরা এখানে ভাষা শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন করছি,লাখো মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আমরা কুসংস্কার,ধর্মীয় গোঁড়ামিসহ অন্ধকার থেকে মুক্ত হতে চাই,যা আমাদের ভাষা শহীদ’রা চেয়েছিলেন। সব কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে দুদিন ধরে প্রায় হাজার খানেক স্বেচ্ছাসেবী’রা লাখো মোমবাতি দিয়ে সাজিয়ে তোলে পুরো মাঠ। এসব কাজে সহযোগিতা করেন,জেলা প্রশাসন। সন্ধ্যায় মোমবাতি গুলো জ্বালিয়ে আলোকিত করা হয় পুরো এলাকা।মোমবাতির আলোয় দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে চারদিক,প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারসহ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আয়োজক’রা এমনটাই জানান।