বুলবুল’র হানায় বিধ্বস্ত জনপদ

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ

আজকের দেশ রিপোর্ট : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে উপড়ে গেছে বহু গাছ, বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের ক্ষেত। অনেক জায়গায় পোল ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দমকা হাওয়ায় গাছ ও ঘর চাপা পড়ে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে দশ জেলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা, বরগুনা ও গোপালগঞ্জে দুজন করে এবং পটুয়াখালী, ভোলা, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, মাদারীপুর, বরিশাল ও বাগেরহাটে একজন করে মারা গেছেন।
এর বাইরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামে আবুল কালাম নামে ৪০ বছর বয়সী এক মাছ চাষী শনিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১২৫ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৯টায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।
পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসার পর সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের কাছ দিয়ে এ ঝড় পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে। তারপর রোববার ভোর ৫টার দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছায়। বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে সকালে বুলবুল পরিণত হয় গভীর স্থল নিম্নচাপে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে চার থেকে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরপরে বিভিন্ন জেলা থেকে ঘরবাড়ির পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এসেছে।
আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উপকূল অতিক্রম করার পর সাতক্ষীরায় ঝড়ের দাপট শুরু হয় ভোর পৌনে ৪টার দিকে। প্রবল ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় ভারী বর্ষণ।
সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮১ কিলোমিটার।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ঝড়ে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব অঞ্চলে মাছের ঘের ও ফসলি জমির পাশাপাশি রাস্তঘাটেরও ক্ষতি হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ধান, ১২ শ হেক্টর জমির সবজি, ৫০০ হেক্টর জমির সরিষা, ২০০ হেক্টরের কুল ও ১২০ হেক্টর জমির পান নষ্ট হওয়ার তথ্য পাওয়ার কথা বলেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস।
এ জেলায় মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষকে ঝড়ের আগে আশ্রয় কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। উপকূলীয় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার ম-ল বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে আমার ইউনিয়ন ল-ভ- হয়ে গেছে। বাতাসের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে অধিকাংশ গাছ উপড়ে গেছে। কাঁচা ঘর সব নষ্ট হয়ে গেছে, ঘরের টিন ও বেড়া উড়ে গেছে। চিংড়ি ঘের ও ধানের জমি পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
ওই এলাকার কিছু বেঁড়িবাধ ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, নদীতে পানি বাড়ায় সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে আমরা বাঁধ মেরামত করার চেষ্টা করছি। এখন জোয়ার চলছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।
শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, তার এলাকার অধিকাংশ কাঁচা ঘর ঝড়ে নষ্ট হয়েছে। মাছের ঘের ও ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। গাছ ভেঙে পড়ে কিছু এলাকায় সড়ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গাছ সরিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা হলেই উদ্ধার কাজ শুরু হবে।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী মাসুদুল আলম বলেন, আমার ইউনিয়নের চার হাজার ঘর ভেঙে গেছে। মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। অনেক গাছ উপড়ে গেছে।
রাতে ঝড়ের মধ্যে গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামে আবুল কালাম নামে ৪০ বছর বয়সী এক মাছ চাষী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, তার মৃত্যুর সাথে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কোনো সম্পর্ক নেই।
রাস্তার ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও। শ্যামনগরের খানপুর, চ-িপুর, সদর, উত্তর বাঁধঘাটা, ইসমাইলপুর, হাইবাতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গাছ সরাতে কাজ করছেন।
পিরোজপুর : ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার সকাল ১১টা থেকে ভারি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে এই জেলায়। ঝড়ো বাতাসে বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়াসহ কয়েকটি ঘর ভেঙে গেছে। বৃষ্টির কারণে প্লাবিত হয়েছে বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী কিছু এলাকা।
বরগুনা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তা-বে বরগুনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একটি ট্রলারসহ ১৫ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। ঘরচাপা ও গাছ পড়ে আহত ১৭ জনকে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যার পরে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন। তিনি জানান, সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের বানাই গ্রামের মোজাফ্ফর আলীর স্ত্রী হালিমা খাতুন শনিবার রাতে ডিএন কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ছোট লবণগোলা গ্রামের মহিবুল্লাহ রোববার বিকাল ৪টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত গাছের ডাল কাটছিলেন। এ সময় তিনি গাছ থেকে পড়ে আহত হলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা গেছেন।
খুলনা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাছপালা। অসংখ্য ছোট-বড় গাছ ভেঙে পড়ায় উপকূলীয় জনপদে সবুজ বেষ্টনীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। রোববার ভোর ৫টা থেকে খুলনা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। তবে ঝড়টি সুন্দরবনে প্রথম আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় উপকূলের মানুষ। অবশ্য বুলবুল অতিক্রম করার পর এ অঞ্চলের প্রকৃতিতে রেখে যায় তার বিরূপ প্রভাব। ভেঙে পড়ে ফলজ-বনজসহ ছোট-বড় অসংখ্য গাছ। ফলে রোববার সকাল থেকে কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছার অভ্যন্তরীণ সড়কে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এক ঘণ্টা সময়ের পথ অতিক্রম করতে লেগেছে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত। ভোগান্তিতে পড়ে সড়কপথে যাতায়াতকারীরা।
তারা বলেন, প্রায় সব গাছই ভেঙে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গাছ সরানোর কাজ করছে। আমরাও তাদের পেছনে পেছনে রাস্তা পার হচ্ছি। বাড়িঘরেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে।
সড়কগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুলনা থেকে দাকোপ পর্যন্ত সড়কে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে ফেলার কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। এর আগে খুলনাঞ্চলে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগে এত গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
খুলনা সদর ফায়ার স্টেশনের অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আরও কত গাছ যে সরাতে হবে আমরা জানি না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুর্ণিঝড়ে অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়ায় প্রকৃতিতে কার্বন সমতার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জীবজন্তুর আবাসস্থলের ক্ষতি হবে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে গাছের একটা প্রভাব আছে। গাছ কার্বন আটকায়। বিভিন্ন পাখির বাসা থাকে। বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল হিসেবেও কাজ করে গাছ। বড় বড় গাছগুলো পড়ে যাওয়ায় এদের একটা সমস্যা হবে এখন।
এজন্য দীর্ঘমেয়াদে উপকূলীয় এলাকায় বৃক্ষ রোপণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাগেরহাট : বাগেরহাটের রামপালে ঝড়ের মধ্যে ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে সামিয়া খাতুন (১৫) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার ভরসাপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বসতবাড়িতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহত সামিয়া একই উপজেলার দর্পনারায়ণপুর গ্রামের বাবুল শেখের মেয়ে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে ঝড়ো হাওয়ায় টিনের ঘরের উপর একটি মেহগনি গাছ উপড়ে পড়ে। ওই গাছের ভারে ঘরটি দুমড়ে মুচড়ে চাপা পড়ে একজন নিহত ও দুইজন আহত হন। বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানান, ঝড়ো হাওয়ার কারণে উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হলেও ঝড় তীব্রতা কমে যাওয়ার পর আবার সঞ্চালন শুরু হয়।
পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দমকা হওয়ায় গাছ উপড়ে বসত ঘরের ওপর পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের উত্তর রামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সরোয়ার হোসেন জানান। নিহত হামেদ ফকিরের বয়স ৬৫ বছর। পেশায় তিনি ছিলেন একজন মৎস্যজীবী।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, রাতে দমকা হাওয়া শুরু হলে একটি রেইন্ট্রি ও একটি চাম্বল গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়লে চাপা পড়েন ওই বৃদ্ধ। তাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ভোলা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভোলায় ভোর রাতে শুরু হওয়া দমকা হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টি সকালের পর কমতে শুরু করে। ঝড়ের প্রভাবে এই দ্বীপ জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, মনপুরা উপজেলার চর মোজাম্মেল, কলাতলির চর ও তজুমুদ্দিন উপজেলার চর জহিরুদ্দিনের নিন্মাঞ্চল ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়।
ঝড়ের প্রভাবে ভোলায় শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এদের মধ্যে গুরুতর পাঁচজনকে চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ভোলা সদরের ইলিশা এলাকায় মেঘনা নদীতে ২৪ জন জেলে নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে যায়। এ ঘটনায় ১০ জন জেলে জীবিত উদ্ধার এবং একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ১৩ জন জেলে।
এদিকে জেলার লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় ঝড়ো বাতাসে ২২টি ঘর বিধ্বস্ত হয়ে ১৫ জন আহত এবং বেশকিছু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ, ধলিগৌর নগর ও লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়ন এবং চরফ্যাসনের ওসমানগঞ্জ ও এওয়াজপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। আহত কয়েকজনকে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেছেন, যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের ঘর নির্মাণ করার জন্য দুই বান্ডল টিন ও ৬ হাজার করে টাকা এবং চাল দেওয়া হবে। এছাড়া গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্যে নগদ ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বেলা সোয়া ১২টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাটিয়াগড় এবং কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি গ্রামে এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার খাটিয়াগড় গ্রামের মৃত বাবন কাজীর স্ত্রী মাঝু বিবি (৬৭) এবং কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি গ্রামের সেকেল হাওলাদার (৭০)। দু’জনই গাছ চাপা পড়ে নিহত হন।
কোটালীপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘুর্ণিঝড় বুলবুল বয়ে যাওয়ার সময় কোটালীপাড়ার বান্ধাবাড়িতে সেকেল হাওলাদার নামে এক বদ্ধ গাছচাপা পড়ে নিহত হন। এছাড়া এ উপজেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি, পোল্ট্রি খামার বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আমরা ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ করছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা করব।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী বর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান খান জানান, রান্না করার সময় রান্নাঘরের উপর গাছ পড়ে মাঝু বিবি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। ঝড়ে সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে।
লক্ষ্মীপুর : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে ২৫টি ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রোববার সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে সেই সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। কিছু জায়গায় বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ার এবং গাছ ভেঙে পড়ার খবর খবর পাওয়া গেছে।
চাঁদপুর : চাঁদপুরে রোববার বিকেলে বয়ে যায় প্রচ- ঝড়ো হাওয়া। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে বসতঘর ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঝড়ে চাঁদপুর শহরের হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে নির্মিতব্য বিজয়মেলা মঞ্চের বেশ ক্ষতিসাধন হয়। এছাড়া সদর উপজেলার আশিকাটি, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বসতঘর ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অপরদিকে হাইমচর উপজেলার হালদারকান্দি গুচ্ছ গ্রামে ৩৮টি বসতঘর, নুর বাজার, মাঝির বাজার, ঈশানবালাসহ বিভিন্ন এলাকায় বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা শাহ্ মোহাম্মদ শোয়েব জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে রোববার বিকেল পৌনে ৪টায় চাঁদপুরের উপর দমকা হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টা ৮৩ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার। চাঁদপুর জেলায় শনিবার ১৯ মিলিমিটার এবং রোববার ৪৭ মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *