!! বিশেষ প্রতিবেদন !! শ্রেষ্ঠ জয়িতা পদক পেলেন নড়াইল লোহাগড়ার আলে

Uncategorized জীবনী বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি : আলেয়া বেগমের স্বামী আবদুল মান্নান ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল। অল্প বেতনের চাকরি। কিন্তু স্বামীকে সব সময় সৎ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আলেয়া। একজনের আয়ে পরিবার ও ছয় সন্তানের সব খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। তাই নিজে কিছু করতে চেষ্টা করতেন আলেয়া, যাতে পরিবারে কিছুটা আর্থিক সাহায্য হয়।


বিজ্ঞাপন

বাড়িতে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করতেন, শাকসবজির আবাদ করেও বাড়তি কিছু টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করতেন। এই টাকা দিয়েই সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ও চাহিদা মেটাতেন। তবে সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে আলেয়া বেগম ছিলেন কঠোর।

আর সেই কঠোরতার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। নিজে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও ছয় সন্তানকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন আলেয়া। সেই সন্তানেরা এখন আলো ছড়াচ্ছেন দেশের হয়ে। আর সেই সাফল্যের পেছনে থাকা মা আলেয়া বেগমকে ‘সফল জননী নারী’ হিসেবে পুরস্কৃত করেছে এবার জয়িতা ফাউন্ডেশন।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ ও শ্রেষ্ঠ জয়িতা পদক প্রদান ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলেয়া বেগমের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

আলেয়া বেগমের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। প্রথম ছেলে কর্নেল মোহাম্মদ মশিউর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়েছেন, এরপর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে বিইউপি থেকে এমএসসি করেছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ২৪ পদাতিক ডিভিশেনে কর্মরত। দ্বিতীয় সন্তান মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম উপপুলিশ পরিদর্শক হিসেবে ঢাকার মালিবাগের এসবি অফিসে কর্মরত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি।

তৃতীয় ছেলে মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে তিনি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’-এর সিইও। চতুর্থ ছেলে মো. আজিজুর রহমান পেশায় চিকিৎসক (সার্জারি)। বর্তমানে তিনি কর্মরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজিজুর রহমান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে এফসিপিএস (সার্জারি ও ইউরোলজি) করেছেন।

পঞ্চম ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন বর্তমানে বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদে চট্টগ্রামে কর্মরত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে পড়াশোনা করেছেন। আলেয়া বেগমের একমাত্র মেয়ে সাচিয়া সাজনিন অবশ্য কোনো চাকরি করছেন না। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসএস শেষ করেছেন। আর আলেয়া বেগমের স্বামী আবদুল মান্নান মোল্লা পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে অবসরে গেছেন।

দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন সফল জননী আলেয়া বেগমের সন্তানেরা। মায়ের এই সম্মাননাপ্রাপ্তিতে তাঁদের কেমন লাগছে? চিকিৎসক ছেলে আজিজুর রহমান বলেন, ‘মা-বাবাকে গর্বিত করার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! তবে বাবার সামান্য আয়ে মা যেভাবে ম্যাজিকের মতো আমাদের গড়ে তুলেছেন, সেটা ভাবলে এখন অসম্ভব মনে হয়। মা–বাবা দুজন বেঁচে থাকা অবস্থায় আমরা যে একেকজন একেক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, সেটা ভাবলেই আনন্দ লাগে।’

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সফল জননী আলেয়া বেগম বলেন, ‘নিজে পড়াশোনা করতে পারিনি, তাই সব সময় চেয়েছি, আমার সন্তানেরা যেন ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে সব সন্তানকে কখনো প্রাইভেট পড়াতে পারিনি। হয়তো দুই মাস দুজনকে প্রাইভেটে দিলাম, পরের দুই মাস অন্য দুজনকে। তবে পড়াশোনায় ঘাটতি যেন না থাকে, সেটা খেয়াল করতাম। এখন সন্তানেরা দেশের কাজে লেগেছে, সেটাই আমার জন্য আনন্দের। তাদের জন্য আমি কোনো দিন এমন সম্মান পাব, সেটা তো কখনো ভাবিনি। খুবই ভালো লাগছে।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *