নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ প্রচন্ড গরমে একটু তৃষ্ণা মেটাতে এক চুমুক ঠাণ্ডা কোমলপানীয় বা এনার্জি ড্রিংকসের চাহিদা বেড়েই চলেছে। পার্টি, পিকনিক সব জায়গায় কোমলপানীয় সঙ্গে থাকে। এসব ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য শুধু ক্ষতিকর নয় বরং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
কোল্ড ড্রিংকসের পুষ্টিমূল্য প্রায় কিছুই নেই। না আছে কোনো খনিজ, না আছে ভিটামিন, না আছে কোনো ফাইবার! কোল্ড ড্রিংকস বা নরম পানীয়গুলো কতটা ক্ষতিকর এই সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই সম্পূর্ণভাবে জানেন না। কোল্ড ড্রিংকসের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানলে, আপনার মনোভাব পাল্টালেও পাল্টাতে পারে। কারণ, এই কোল্ড ড্রিংকস নীরবে ক্ষতি করে চলেছে আপনার শরীরের। আপনি কম পরিমাণে কোল্ড ড্রিংকস পান করুন বা বেশি পরিমাণে, প্রতিটি চুমুকই ক্ষতিকর।
কোমলপানীয়র ইতিহাস অর্ধশতকালের। পানি, চিনি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লেবুর জুস দিয়ে প্রথম তৈরি করা হয় এনার্জি ড্রিংকস। কালের বিবর্তনে এতে এসেছে উপাদানগত পরিবর্তন। যোগ হয়েছে ক্যাফেইন, কখনো বা ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল, অপিয়েট। ক্যাফেইন যোগ করার কারণ হলো, এটি মস্তিষ্ক উত্তেজিত করে। ফলে নিজের মধ্যে ভালো লাগা শুরু হয়।
কার্বন ডাইঅক্সাইডকে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে পানির মধ্যে দ্রবীভূত করে এই কোমলপানীয় তৈরি করা হয়। সেই কারণেই এ থেকে বুদবুদ উঠতে থাকে। এই পানি খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
উল্লেখ্য, কোমল পানীয়তে ফসফরিক এসিড, ক্যাফেইন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কৃত্রিম চিনিসহ নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণ থাকে। খাদ্য হজমে কৃত্রিম পানীয়ের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়, কিন্তু কৃত্রিম পানীয় সাময়িক স্বস্তি দিলেও এটি প্রকৃতপক্ষে পাকস্থলীর ভারসাম্য নষ্ট করে। তাছাড়া এই ধরনের পানীয় শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা পরবর্তীতে হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা সৃষ্টি করার পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, অম্লতা বা অ্যাসিডিটি, দাঁতের ক্ষয় বা মেদবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কোমলপানীয় যাতে সহজে জমে যেতে না পারে কিংবা বরফে রূপান্তরিত না হতে পারে সেজন্য কৃত্রিম পানীয়তে ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিক উপাদানটি শরীরে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে যার অন্যতম হচ্ছে কিডনিতে পাথর হওয়া।
এছাড়া নিয়মিত কোমলপানীয় পান করলে টাইপ-টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। আমেরিকান ডায়েট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা অনুযায়ি, নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব, তবে পুরোপুরি নাকচ করা সম্ভব হয় না।
কোমলপানীয় ‘মেটাবলিক সিন্ড্রোম’ বা বিপাকীয় প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, যা ক্রমেই ঠেলে দেয় হৃদরোগের দিকে। আছে উচ্চ রক্তপচাপের আশঙ্কাও।
ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, হৃদরোগের মতো ক্রনিক রোগগুলো ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত। একইভাবে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার ক্ষেত্রে কোল্ড ড্রিংকস পান করাও সম্পর্কিত। তাছাড়া কোল্ড ড্রিংকসে ব্যবহৃত স্যাকারিন, সোডিয়াম সাইক্লামেটসহ বিভিন্ন কৃত্রিম রং ও মিষ্টি ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
কোল্ড ড্রিংক খেলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আসলে সব কোম্পানির কোল্ড ড্রিংকেই প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। আর চিনি শরীরকে ভারী করে দেয়। কোল্ড ড্রিংকের মাধ্যমে এই অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি খেলে আমাদের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোল্ড ড্রিংক যে শুধু শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয় কিংবা দাঁতের ক্ষতি করে তাই নয়, অতিরিক্ত পরিমাণে কোল্ড ড্রিংক খেলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। কোল্ড ড্রিংকে এক ধরনের সোডা থাকে, যা আমাদের খাবার হজমের সাহায্য করে। কিন্তু খাবার হজমের পাশাপাশি এই সোডা আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। যা আমাদের মৃত্যুর পর্যন্ত কারণ হতে পারে।
গরমের দিনে আপনার দেহের পানির অভাব পূরণ করতে পান করতে পারেন ডাবের পানি, লেবুর শরবত ও স্যালাইন, যা আপনাকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। কোল্ড ড্রিংকস না পান করে বেশি করে পানি পান করুন যা আপনার কিডনীকে পরিষ্কার রাখবে, আপনাকে নানা ধরনের রোগ থেকে রাখবে নিরাপদ। নিজে স্বাস্থ্য সচেতন হোন, অন্যকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করুন।