বিনোদন প্রতিবেদক : চঞ্চল চৌধুরী একজন ভার্সেটাইল অভিনেতা। চঞ্চলের সুনিপুণ অভিনয় যত দেখি মন ভরেনা।ইচ্ছা করে শুধু দেখে যাই তার অভিনয়। চঞ্চল চৌধুরীর টপ টু বটমে শুধু অভিনয় আর অভিনয়। আমি কখনো বোর হইনি তার অভিনয় দেখে। চঞ্চল একজন বহুরূপী অভিনেতা। যেকোনো চরিত্রেই তিনি সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠেন। ইদানীং আমার হিন্দি সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করেনা।
চরকি, বিঞ্জ, হইচই’র কল্যাণে ডায়নামিক সব ওয়েব সিরিজ/ওয়েব ফিল্ম দেখতে দেখতে হিন্দি ফিল্মের প্রতি উন্নাসিক হয়ে পড়েছি। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় ছিল মনে রাখার মত।পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্ত নিঃসন্দেহে ট্রিমেন্ডাস স্টোরি লাইন অ্যাডোপ্ট করতে চেয়েছেন। কিন্তু তার স্টোরি অ্যাডোপশন খাপছাড়া মনে হয়েছে কয়েকটি জায়গায়।
সিরিজের পটভূমি হচ্ছে ক্ষমতা। বঙ্গোপসাগরের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নাম “ছেঁড়াদিয়া”! এই দ্বীপে বন্দুকের নল দিয়ে মুড়ি মুড়কির মত গুলি ফোটে। সেই সাথে আছে নিকশ কালো আঁধারের হাত ধরে চলে অবাধ যৌনতা। খুন মারামারি হানাহানি হিংস্রতা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে ছেঁড়াদিয়া দ্বীপকে। বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয় ছেঁড়াদিয়ার নীল জলরাশির বুকে।
এই দ্বীপ চিংড়ি এবং লবণের বাণিজ্যকেন্দ্র। টাকা আর জমি দখলের কারবার সেখানে। সেখানে প্রভাব বিস্তারের রাজনীতি থাকবেই। দুই প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে শত্রুতা হানাহানি সহিংসতার সম্পর্ক। ছেঁড়াদিয়ায় আইনের শাসন বলে কিচ্ছু নেই। চঞ্চল চৌধুরী বন্দুক ঘুরিয়ে ছেঁড়াদিয়া শাসন করেন। দুই পরিবারের মধ্যে জাতি শত্রুতা চরম পর্যায়ের।
এই দ্বীপে আছে এক হেরেমখানা (পতিতাপল্লী)। হেরেমখানার রূপসী আনারকলি (সোহানা সাবা) তার অপূর্ব দেহসৌষ্ঠব আর ঝলমলে রুপ দিয়ে ক্ষমতাবানদের কামলিপ্সা মেটায়। আনারকলির আবার বেশ প্রভাব আছে চঞ্চল চৌধুরীর উপর। চঞ্চলের মনোরঞ্জন করে বেশ খানিকটা ক্ষমতা ব্লাউজের ভেতর রেখে চলে সোহানা সাবা। বেশ কয়েকজন দেহপসারিনী আছে তার। চঞ্চল চৌধুরীর ডানহাত তার কাজিন ব্রাদার শাহজাহান বলি (নাসির উদ্দীন খান)। চর জমি জবরদখল করার কারিগর নাসির উদ্দীন খান। চঞ্চল তার এই হিংস্র দানব ভাইয়ের উপর বেশ সন্তুষ্ট।
ভাতিজা জিয়াউল হাসান পলাশও গুন্ডাগিরিতে সিদ্ধহস্ত। একটা দৃশ্য আছে এমন- নারীর শরীরের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে হায়েনা হয়ে উঠা নাসির উদ্দীন খান সোহানা সাবার হেরেমকুঞ্জ থেকে তুলে নেয় অষ্ঠদশী তরুণীকে। মেয়েটি এই পেশায় নতুন এসেছিল। শাহজাহান বলি’র লোলুপ দৃষ্টি থেকে সোহানা মেয়েটিকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও পারেনা। লুটেরা শাহজাহান বলি পতিতা সোহানার আস্তানা থেকে ভোগ করার জন্য মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায়।
চঞ্চল চৌধুরী সোহানার সাথে রাত্রিযাপন করতে এলে সোহানা নাসির উদ্দীন খানের নারীকান্ডের ঘটনা চঞ্চলকে বলে দেয়। শুনে চঞ্চল ক্ষুব্ধ হয়ে নাসিরের ছেলে পলাশকে ডেকে তার বাপের কুকীর্তি বন্ধ করতে বলেন। মেয়েটিকে আনারকলির আস্তানায় রেখে আসতে বলে দেন। এরপরের দৃশ্যে দেখা গেল শাহজাহান বলি পাশবিকতা নিয়ে চড়াও হয়েছে মেয়েটির উপর।
একসময় আবিস্কার করে, মেয়েটির নিথর শরীর। অর্থাৎ মেয়েটি তার কোমল শরীরে চেপে বসা হায়েনাকে সহ্য করতে পারেনি। দম ছেড়ে দেয় মেয়েটি। শাহজাহান বলির চরিত্রে আমাদের চাটগাঁইয়া বদ্দা নাসির উদ্দীন খান অসাধারণ ছিলেন। সত্যিই আমি চাটগাঁইয়া বদ্দার বিগ ফ্যান হয়ে গেছি।সোহানা সাবা অভিনয়ের চেয়ে অঙ্গসৌষ্ঠবের সৌন্দর্য প্রকাশের দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন।
“বলি” সিরিজে আরেকটা দিক ফুটে উঠেছে, দেহপসারিনীদের কোনো জাতপাত ধর্ম নেই। এদেরকে যেকোনো পাত্রে রাখলে সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। সাবার অভিনয় প্রসঙ্গে বলব, প্রশংসা কুড়ানোর মত অভিনয় করতে পারেননি তিনি। আমার মনে হল সাবা অভিনয়ের চাইতে বাহ্যিক সৌন্দর্যে টইটম্বুর থাকতে বেশি স্বাচ্ছদ্যবোধ করেন। শুধুমাত্র “সুন্দর মুখ” দেখিয়ে টিকে থাকা যায়না।
অভিনয়ের কলা রপ্ত করা জানতে হয়। সাবা তার চরিত্রের উপর ফায়দা তুলতে পারেননি। তার অভিনয় ছিল খুবই গড়পড়তা মানের। সাবা এখন টিকটক সুন্দরী। অভিনয়ে অপারঙ্গম এইসব টিকটক সুন্দরীদের সিরিয়াস ওয়েব সিরিজে কাস্ট করার আগে পাঁচবার ভেবে নেয়া উচিত।
রুস্তুমের চরিত্রে সোহেল মন্ডলের অভিনয় কয়েক জায়গায় খুব বিরক্তিকর মনে হয়েছে। আমি আসলে সোহেল মন্ডলের অভিনয়ে কোনো কমফোর্ট জোন খুঁজে পাইনি। নিষ্ঠুর সন্ত্রাসীর চরিত্রে জিয়াউল হক পলাশের অভিনয় দেখে মনে হয়েছে নাট্যজগতে ভালোভাবেই টিকে গেছেন।
আর চঞ্চল চৌধুরী…হোয়াট এ্যা ইউনিক ট্যালেন্ট! চঞ্চলের ডায়নামিক অ্যাপিয়ারেন্সের কথা কি আর বলব? ভয়ংকর রোলে নতুন এক চঞ্চল চৌধুরীকে ভালো লেগেছে। মাওলানার চরিত্রে ইরেশ যাকের সুন্দর অভিনয় করেছেন।
প্রচুর স্ল্যাং ইউজ করা হয়েছে। যদিও গল্পে স্ল্যাং ডার্ক ল্যাঙ্গুয়েজ অপ্রাসঙ্গিকভাবে আসেনি। সিরিজের শুরুতেই সেক্স আর ভায়োলেন্স সম্পর্কিত সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। তবে যৌনতা নিয়ে সতর্কবার্তার তুলনায় যৌনতা প্রকাশ পেয়েছে যৎসামান্য। তার জন্য এতবড় অ্যালার্ট করার দরকার ছিলনা।
গল্প কয়েক জায়গায় রীতিমতো ঝিমিয়ে পড়েছিল। দেখার আগ্রহ কমে যাচ্ছিলো কয়েকবার। কিন্তু শেষটা কি হয় দেখব বলে নিজের আন্তরিকতা দিয়ে একরকম জোর করে দৃষ্টি স্থির রেখেছি টিভির স্ক্রিনে।এটা সুস্পষ্টভাবে বলছি- দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা ছিলোনা ‘বলি’র !!