নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের জয়দেবপুরে পিতার কর্তৃক মাদকাসক্ত ছেলে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত পিতাকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা। গত ৭ মে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত একমাত্র আসামি ওমর ফারুক @সবুজকে নেত্রকোনার জেলার কেন্দুয়া থানাধীন কান্দুরা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
ভিকটিম আশরাফুল আলম তার পিতা-মাতার স্বপরিবারে জয়দেবপুর থানাধীন বানিয়ারচালা উত্তরপাড়া সাকিনে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করত। সে একজন উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির লোক। সে সদা সর্বদাই নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে বাসায় এসে পুনরায় নেশা করার জন্য তার মাতা পিতার নিকট টাকা-পয়সা দাবী করতো। টাকা-পয়সা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সে তার মাতা-পিতাকে প্রায় সময়ই শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিলো।
এমতাবস্থায় গত ৫ মে, রাত অনুমানসাড়ে ৮ টায় ভিকটিম আশরাফুল আলম স্থানীয় বাজার হতে একটি ধারালো চাপাতি ক্রয় করে তাদের ভাড়া বাসায় এসে তার পিতা মোঃ ওমর ফারুক এর নিকট শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য ৭০০০ টাকা চায়। তার তাকে টাকা দিকে অপারগতা প্রকাশ করলে সে তার ক্রয়কৃত চাপাতি দিয়ে তার মাতা-পিতাকে খুন করে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে।
গত ৫ মে, রাত অনুমান সাড়ে ৯ টায় ভিকটিম বাসায় আসার দরুন রুমের স্বল্পতার কারনে ভিকটিমের মাতা মোছাঃ দিলুয়ারা আক্তার @ আঙ্গুরা তাদের বর্তমান ভাড়া বাসার পাশের রুমের ভাড়াটে জনৈকা মোছাঃ শ্রাবনী আক্তার (১৮) এর রুমে রাত্রী যাপন করার জন্য যায়।
এমতাবস্থায় গত ০৬ মে ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান সাড়ে ৩ টায় ভিকটিমের মোঃ ওমর ফারুক @ সুবজ (৬০) তার স্ত্রী অর্থাৎ ভিকটিমের মাকে মোবাইল করে দ্রুত ঘরের বাইরে আসতে বলে। সে ঘরের বাইরে আসলে তাঁর স্বামী তাকে নিয়ে দ্রুত বাসা হতে বের হয়ে জয়দেবপুর থানাধীন শিরিরচালা বাঘের বাজার বাস স্ট্যান্ডে আসলে তার স্ত্রী তাকে কোথায় যাবে এবং কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় যে, তাঁদের ভাড়াকৃত রুমে তাদের ছেলে আশরাফুল আলমকে ঘুমন্ত অবস্থায় আশরাফুলের ক্রয়কৃত চাপাতি দ্বারা জবাই করে হত্যা করেছে।
সংবাদ পেয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিমের সূরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গাজীপুর মর্গে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনাশ ভিকটিমের মা মোছাঃ দিলুয়ারা আক্তার @ আঙ্গুরা (৫১) বাদী হয়ে তাঁর স্বামী মোঃ ওমর ফারুক এর বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানার মামলা নং-০৯ তারিখ-০৭/০৫/২০২৩ খ্রিঃ ধারা-৩০২ পেনাল কোড আইনে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সূত্রে বর্ণিত মামলার ঘটনার পর থেকে পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে।
মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত হওয়ায় পিবিআই গাজীপুর জেলা মামলাটি অধিগ্রহণ করলে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম এঁর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম নেতৃত্বে পিবিআই গাজীপুরের চৌকস টিম গত ৭ মে, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত একমাত্র আসামি ওমর ফারুক @সবুজকে নেত্রকোনার জেলার কেন্দুয়া থানাধীন কান্দুরা এলাকা হতে গ্রেফতার করে।
প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি জানায় যে, ভিকটিম আশরাফুল আলম আসামির বড় ছেলে। চাকরির সুবাদে গাজীপুরের জয়দেবপুরে বাসা ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম আশরাফুল তাদের সাথে মাঝে মধ্যে বসবাস করতো।আশরাফুল নিজে নিজে ৭/৮ টি বিবাহ করে।
বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে। সে তাঁর ছেলে আশরাফুল আলমকে প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময় তাকে ও তার স্ত্রী মারপিট করে। ঘটনার দিন রাতে ভিকটিম আশরাফুল আলম একটি ধারালো চাপাতি কিনে এনে তার প্রাপ্ত বেতনের ৯০০০ টাকা হতে ৭,০০০ টাকা দাবী করে। উক্ত টাকা না দিলে ভিকটিম আশরাফুল
তাকে কেটে টুকরা টুকরা করবে বলে হুমকি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
তার স্ত্রী মোছাঃ দিলুয়ারা আক্তার @ আঙ্গুরা (৫১) ছেলের ভয়ে পাশের ভাড়াটে জনৈকা মোছাঃ শ্রাবনী আক্তার (১৮) এর রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আসামী ওমর ফারুক বিষয় গুলো মেনে নিতে না পেরে ক্ষোভে দুঃখে গত ৬ মে রাত অনুমান সাড়ে ৩ টায় তার ছেলে আশরাফুল আলমকে তার পাশে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম বলেন ঘটনায় জড়িত এজাহার নামীয় একমাত্র আসামি ওমর ফারুক@ সবুজ ও ভিকটিম আশরাফুল সম্পর্কে পিতা পুত্র। মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচার নিযার্তন সইতে না পেরে ক্ষোভে দুঃখে পিতা তাঁর ঔরসজাত সন্তানকে জবাই করে হত্যা করেছে।
গত ৭ মে, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত একমাত্র আসামি ওমর ফারুক @সবুজকে নেত্রকোনার জেলার কেন্দুয়া থানাধীন কান্দুরা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার ছেলে জবাই করে হত্যা করার কথা স্বীকার করলে তাকে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদানের লক্ষে সোমবার ৮ মে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।