কক্সবাজারে বিজিবি’র সাড়াশি অভিযান পরিচালনায় ১৪.৭৭৮ কেজি ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ আইস এবং ৩,৯০,০০০ পিস ইয়াবাসহ ৩ জন আটক

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত চট্টগ্রাম জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিনিধি : কক্সবাজারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ  বিজিবি’র অভিযানে ১৪.৭৭৮ কেজি ভয়ংকর মাদক  ক্রিস্টাল মেথ আইস এবং ৩,৯০,০০০ পিস ইয়াবাসহ ৩ জন আটক হয়েছে, এ খবর নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র কক্সবাজার রামু ব্যাটালিয়নের সেক্টর সদর দপ্তরের সেক্টর কমান্ডার, কর্নেল মোঃ মেহেদি হোসাইন কবির।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে,  বর্তমান সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি যথাযথ বাস্তবায়নকল্পে মাঠ পর্যায়ে বিজিবি’র গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযানিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) ও কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) তাদের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করে ১৪.৭৭৮ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস এবং ৩,৯০,০০০ পিস ইয়াবাসহ ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

বিজিবি’র কক্সবাজার রিজিয়ন ও রামু সেক্টরের আওতাধীন টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) গতকাল বুধবার  ১০ মে,  রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, অত্র ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ দমদমিয়া বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বড়ইতলী এলাকা দিয়ে মাদকের একটি বড় চালান মায়ানমার হতে বাংলাদেশে আসতে পারে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের ব্যাটালিয়ন সদর ও দমদমিয়া বিওপি হতে তিনটি টহলদল উল্লেখিত যায়গায় হিয়ে একটি টহলদল বেড়ীবাঁধের আঁড় নিয়ে কৌশলগত অবস্থান করে  এবং অপর দু’টি টহলদল নাফ নদীতে টহলরত অবস্থায় থাকে।

আনুমানিক রাত ৯ টা ২০ মিনিটের সময় টহলদল দুইজন ব্যক্তিকে একটি কাঠের নৌকাযোগে মায়ানমার হতে সীমান্তের শূণ্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতে দেখে বিজিবি নৌ টহলদ্বয় বর্ণিত নৌকাটিকে চ্যালেঞ্জ করে।

বিজিবি’র উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকায় আরোহিত ব্যক্তিরা মায়ানমারের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবি টহলদল দ্রুত ধাওয়া করে নৌকাসহ ২ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে বিজিবি টহলদল নৌকাটিকে নাফ নদীর তীরে এনে তল্লাশি করে নৌকার মধ্যে রাখা জালের ভিতরে অভিনব পদ্ধতিতে লুকায়িত অবস্থায় পলিব্যাগে মোড়ানো দুইটি পোটলা থেকে ৭.৩৮২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ৩০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

এসময় অবৈধ মাদকদ্রব্য বহনের জন্য ব্যবহৃত কাঠের নৌকা এবং ১০০ কেজি সুতার জাল জব্দ করা হয়। আটকৃত ব্যক্তিরা যথাক্রমে,  মোঃ রবি মোল্লা (২৩), পিতা-মৃত আঃ ছালাম, গ্রাম-প্রামপুর, থানা-মংডু, জেলা-বুচিডং, মায়ানমার এবং  মোঃ আয়াছ (২৫), পিতা-আবুল কালাম, গ্রাম-প্রামপুর, থানা-মংডু, জেলা-বুচিডং, মায়ানমার।

অন্যদিকে, বিজিবি’র কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধিনায়ক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ক্রিস্টাল মেথ আইসসের একটি চালান মায়ানমার হতে বাংলাদেশে এনে সীমান্ত এলাকায় গুদামজাত করবে।

উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে অধিনায়কে দিকনির্দেশনায় রেজুপাড়া বিওপির একটি চৌকষ টহলদল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাধীন ঘুমধুম সীমান্তের ফুটেরঝিরি নামক স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে পরিত্যক্ত অবস্থায় মালিকবিহীন ৭.৩৯৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) গতকাল বুধবার ১০ মে, রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, অধীনস্থ সাবরাং বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ দক্ষিণ নোয়াপাড়া এলাকা দিয়ে মাদকের একটি চালান মায়ানমার হতে বাংলাদেশে পাচার হতে পারে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে সাবরাং বিওপি’র একটি টহলদল উল্লেখিত এলাকায় গমন করতঃ বেড়িবাঁধের আঁড় নিয়ে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে। আনুমানিক রাত ১০টা ৪৫ মিনিটের সময়  টহলদল দুইজন ব্যক্তিকে একটি পোটলা হাতে নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতে দেখে।

তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক পরিলক্ষিত হওয়ায় টহলদল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলে উক্ত ব্যক্তিরা বিজিবি’র উপস্থিতি অনুধাবন করা মাত্রই তাদের হাতে থাকা একটি পোটলা মাটিতে ফেলে অন্ধকারের সুযোগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের দিকে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে টহলদল উল্লেখিত স্থানে পৌঁছে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে তাদের ফেলে যাওয়া পোটলার ভেতর হতে ৫০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করে।

এছাড়া একই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উক্ত  ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ নাজিরপাড়া বিওপি’র টহলদল জানতে পারে যে, দায়িত্বপূর্ণ আলুগোলা এলাকা দিয়ে মাদকের একটি চালান মায়ানমার হতে বাংলাদেশে আসতে পারে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে নাজিরপাড়া বিওপির একটি টহলদল নাফ নদী সংলগ্ন কেওড়া বাগানের মধ্যে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে।

আনুমানিক রাত ১১ টা ৪০ মিনিটের সময়  টহলদল ৪/৫ জন ব্যক্তিকে একটি কাঠের নৌকাযোগে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাফ নদীর কিনারায় আসতে দেখে বিজিবি টহলদল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে। বিজিবি টহলদলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা মাত্রই তারা নৌকা হতে নাফ নদীতে লাফিয়ে মায়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে বিজিবি টহলদল উক্ত স্থানে পৌঁছে নৌকাটি তল্লাশি করে পাটাতনের নীচে লুকায়িত দুইটি প্লাষ্টিকের বস্তার ভেতর হতে ২,০০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করে।

এছাড়াও বৃহস্পতিবার  ১১ মে,  সকালে অত্র ব্যাটলিয়নের অধীনস্থ টেকনাফ বিওপি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, দায়িত্বপূর্ণ নাইট্যংপাড়া ট্রলারঘাট এলাকা দিয়ে মাদকের একটি চালান মায়ানমার হতে বাংলাদেশে আসতে পারে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ বিওপি’র একটি টহলদল বর্ণিত এলাকায় গমন করতঃ কেওড়া বাগানের আঁড় নিয়ে কৌশলগত অবস্থান করে।

আনুমানিক সকাল সাড়ে ৮ টায়  বিজিবি টহলদল ৩/৪ জন ব্যক্তিকে একটি ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকাযোগে ট্রলার ঘাটের দিকে আসতে দেখে এবং তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক পরিলক্ষিত হওয়ায় বিজিবি টহলদল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে।

উক্ত ব্যক্তিরা দূর হতে বিজিবি’র উপস্থিতি অনুধাবন করা মাত্রই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের মধ্য হতে একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। অপরজন নাফ নদীতে লাফিয়ে মায়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে বিজিবি টহলদল আটককৃত ব্যক্তির দেয়া তথ্যমতে নৌকা ও মাছ ধরার জাল তল্লাশি করে জালের ভিতরে অভিনব পদ্ধতিতে লুকায়িত পলিব্যাগে মোড়ানো দুইটি পোটলা হতে ১, ১০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ২০০ কেজি সুতার জাল জব্দ করে। আটককৃত ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে,  মোঃ জাহিদ হোসেন (২২), পিতা-আমির হোসেন, গ্রাম-নাইট্যংপাড়া, থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার।

আটককৃত ২ জন মায়ানমার নাগরিক এবং ১ জন বাংলাদেশী নাগরিকের বিরুদ্ধে অবৈধ মাদক বহন ও পাচারের দায়ে নিয়মিত মামলার মাধ্যমে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কক্সবাজার রামু ব্যাটালিয়নের সেক্টর সদর দপ্তরের সেক্টর কমান্ডার, কর্নেল মোঃ মেহেদি হোসাইন কবির জানান জাতীয় ও জনস্বার্থে দেশের যুব সমাজ কে মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে বিজিবি’র এধরণের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *