সাভার প্রতিনিধি : ঢাকার সাভারে চাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী চুন্নু ও তার পরিবারের ওপর হামলা মারধর ও লুটপাটকারি শীর্ষ সন্ত্রাসী মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুমকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার সহ হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
রোববার ১৪ মে, দুপুরে সাভার উপজেলা স্ট্যান্ড এলাকায় ভুক্তভোগী পরিবার, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর আয়োজনে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন সাভার উপজেলার কয়েকশ মানুষ। মানববন্ধন থেকে অভিযুক্ত সদ্য সাময়িক বহিষ্কৃত সাভার পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুমকে স্থায়ী বহিষ্কার সহ জড়িতদের বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল শনিবার ১৩ মে, বিকালে সাভার পৌরসভার আনন্দপুর এলাকায় পিস্তল উচিয়ে চাঁদার দাবিতে ফিল্মি স্টাইলে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও মারধর করে ‘বিসমিল্লাহ ওয়াস ফ্যাক্টরি’র ক্যাশ থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় রবিবার রাতে নানা অপকর্মের হোতা মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুমকে প্রধান আসামি করে নয় জনের নাম উল্লেখসহ ছাত্রলীগের অঙ্গ-সংগঠনের ২১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা নেয় সাভার মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীসহ পরিবারের ছয়জন গুরুতর আহত হন।
তবে, এ ঘটনায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও প্রধান আসামি মাসুম দেওয়ান সহ সহযোগীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ওই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন এলাকাবাসী।
মামলার আসামিরা যথাক্রমে, নামাগেন্ডা মহল্লার হোসেন আলীর ছেলে সাভার পৌর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম (২৫), একই এলাকার ইমান আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর হোসেন ওরফে টেন্ডার আলমগীর (৩০), হাবু মিয়ার ছেলে নাদিম দেওয়ান ওরফে গুণ্ডা নাদিম (২৪), হানিফ মিয়ার ছেলে সজীব (২৪), কাতলাপুর এলাকার বাসিন্দা বাবু ওরফে রড বাবু (২৮), একই এলাকার পলাশ ওরফে খাটা পলাশ (৩০), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা ওরফে ধর্ষক রানা (৩৩), উলাইল এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে টিপু ওরফে বালু টিপু (২৮), মজিদপুর এলাকার বাসিন্দা তোতলা পাভেল ওরফে চাঁদাবাজ পাভেল(৩৫)সহ অজ্ঞাত ১২ জন। মামলা ছাড়াও হামলায় অংশ নেওয়া ব্যানারে লেখা অভিযুক্তরা হলেন, টিপু, শামীম, সাহিদ, হাকিম, অনিক, ইসমাইল ও আরিফ। তারা সবাই সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের অনুসারী।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও মামলার বাদী ইউসুফ আলী চুন্নু বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রলীগ নেতা মাসুম দেওয়ান আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় এর আগেও তারা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। শনিবার বিকালে মুরগি মাসুমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী একটি নোহা গাড়িতে এসে ফিল্মি স্টাইলে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
এ ঘটনায় আমিসহ ছয়জন গুরুতর আহত হই। পরে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ফিল্মি স্টাইলে হামলার ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যমান। আপনারা ফুটেজ দেখলে বুঝতে পারবেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একটি নোহা গাড়ি নিয়ে একদল সন্ত্রাসী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মহোরা দিয়ে যাচ্ছে। এ সময় মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীবাহী গাড়ি থমকে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী মহাসড়কে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা চালায়।এ সময় আশপাশের পথচারীরা এমন দৃশ্য দেখে একটি পেট্রলপাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে পেট্রল পাম্পের এক শ্রমিক প্রতিবেদককে বলেন, যে গাড়ি দিয়ে সন্ত্রাসীরা এসেছে ওই গাড়ির মালিক সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেল। তিনি মাঝেমধ্যেই এখানে গাড়ির পেট্রল নিতে আসেন। রুবেল সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের স্ত্রীর বড় ভাই। সে নতুন করে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে।
থানায় জমা দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাস খানেক যাবত সাভার পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লার বিসমিল্লাহ ওয়াশ ফ্যাক্টরিতে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন ছাত্রলীগ নেতা মাসুম দেওয়ান ও তার অনুসারীরা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শনিবার বিকালে মাসুমের নেতৃত্বে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ আলী চুন্নুকে চর থাপ্পড় মারে। পরে ভুক্তভোগীর ছেলে আবির এগিয়ে আসলে মাসুম দেওয়ান তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে চোখের পাশে আঘাত করে। এ সময় অন্য সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে।
খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এলে তাদেরও এলোপাতারি আঘাত করা হয়। পরে সন্ত্রাসীরা ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় গুলি ছুড়তে ছুড়তে এলাকা ত্যাগ করে। পরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে ছয়জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চাঁদাবাজির ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পরও প্রধান আসামি সাভার পৌর ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি মো. মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ‘ভাঙবো কিন্তু মচকাবো না’ । এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
এসব ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হলে ঘটনার দুই দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের প্যাডে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারন সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাসুম দেওয়ানকে বহিস্কার করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্ল্যেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরী সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সংগঠন বিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে মাসুম (সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সাভার পৌর শাখা) কে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হলো এবং কেন আপনাকে স্থায়ী বহিস্কার করা হবেনা তার উপযুক্ত কারনসহ জবাব আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ এর দপ্তর সেলে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ বলেন,‘মামলার পর থেকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা পালিয়ে আছেন।তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আশা করছি খুব শিগগির মাসুম দেওয়ান সহ বাকিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।