নিজস্ব প্রতিবেদক : পরকীয়া সন্দেহে নিজ স্বামী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ভাড়া বাসায় বসবাসরত নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের গার্মেন্টস কর্মী ভিকটিম বুলবুলি বেগমকে। ঘরের দরজায় তালা দিয়ে চলে যায়। আসামি ঐ দিন রাতে ভিকটিম বুলবুলি হত্যার বিষয়টি ভিকটিমের বোন আছিয়া আক্তার টপিকে মোবাইলে ফোন করে জানায়।
অবশেষে পিবিআই গাজীপুর জেলা গত বৃহস্পতিবার ২৫ মে, বিকাল ৫ টা ১০ মিনিটের সময় গাজীপুর মহানগর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকা থেকে ভিমটিমের স্বামী আসামী মো: মাসুদ রানা (৩৮) গ্রেফতার করে।
ভিকটিম বুলবুলি বেগম (৩৪),স্বামী- মোঃ মাসুদ রানা, পিতা- আয় বাবু,মাতা- মোছাঃ খুকিনা, সাং-বামনসাতা,থানা- মহাদেবপুর,থানা-নওগাঁ কে ঘটনার ০৭ বছর পূর্বে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ করে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো।
গত ০২/০৯/২০২২ সালে সকাল অনুমান ৮ টার সময় বাদী মোঃ হাসান আলীর বোন ভিকটিম বুলবুলি বেগম গার্মেন্টস ডিউটিতে না গিয়ে তার স্বামী মাসুদ রানাসহ বাসায় ছিলো। ০২/০৯/২০২২ সালে রাত অনুমান ৯ টা ৪০ মিনিটের সময় বাদীর বোনের স্বামী মোঃ মাসুদ রানা রুমের বাহির হতে তালাবদ্ধ করে চলে যায়।
মাসুদ রানা বাদীর মেজো বোন আছিয়া আক্তার টপিকে ফোন করে দ্রুত রুমে যেতে বলে যে, বাদীর বোনের কি যেনো হয়েছে। বাদীর মেজো বোন আছিয়া আক্তার টপি ভিকটিমের বাড়ীতে গিয়ে বাহির হতে রুমের দরজা তালাবদ্ধ দেখে। স্থানীয় লোকজন কোনাবাড়ী থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশ রুমের দরজা ভেঙ্গে ভিকটিমের মৃত দেহ রুমের মেঝেতে ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ সংক্রান্তে ভিকটিম বুলবুলি বেগম এর ছোট ভাই বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানার মামলা নং-০১, তারিখ-০৩/০৯/২০২২, ধারা-৩০২/২০১ পেনাল কোড আইনে হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করেন। রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশ মামলাটির তদন্তভার পিবিআই গাজীপুরে ন্যাস্ত হয়।
অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান,বিপিএম এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জামাল উদ্দিন মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মোঃ মাসুদ রানা (৩৮), পিতা-মোঃ ফিরোজ সাকিদার, মাতা-মৃত মনোয়ারা বেগম, সাং- উত্তর রাজাপুর, পোঃ রানীনগর, থানা-রানীনগর, জেলা-নওগাঁ কে গত বৃহস্পতিবার ২৫ মে, বিকাল ৫ টা ১০ মিনিটের সময় গাজীপুর মহানগর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি মাসুদ রানা জানায় যে, সে একজন রিক্সা চালক। সে প্রথমে মোছাঃ সাবানা নামে একজনকে বিবাহ করে শ্বশুর বাড়ীতে বসবাস করতো। ভিকটিম বুলবুলি বেগম আসামির সমন্ধীর স্ত্রী ছিলো। শ্বশুর বাড়ীতে বসবাসের সুবাদে ভিকটিম বুলবুলির সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।
প্রায় ৭ বছর আগে ভিকটিম বুলবুলি বেগমকে ভাগিয়ে নিয়ে মহাদেবপুর থানার উত্তর গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সাল এর মাধ্যমে বিবাহ করে। সমন্ধীর স্ত্রী বুলবুলিকে বিবাহ করায় তার প্রথম স্ত্রী মোছাঃ সাবানা তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। আসামি মাসুদ রানা বিবাহের পর স্ত্রী বুলবুলিকে নিয়ে কোনাবাড়ী থানার দেওয়ালিয়াবাড়ী কলেজ গেইট মিজান এর বাড়ীতে ভাড়া থাকতো।
ভিকটিম চায়না গার্মেন্টর্সে হেলপার হিসাবে কাজ করতো। তার স্ত্রী প্রায় সময় বাইরের ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলতো। এই নিয়ে পরকীয়া সন্দেহে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। ঘটনার আগের দিন রাতে আসামি কাজ কর্ম শেষে বাসায় আসলে মোবাইলে কথা বলাকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের সাথে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার সময় ভিকটিম বুলবুলি তাকে মারপিট করে বাসা থেকে বের করে দেয়।
আসামি মনের কষ্টে তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পরের দিন সকাল ১০ টার সময় ভিকটিম বুলবুলি বেগমকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে চলে যায়। আসামি ঐ দিন রাতে ভিকটিম বুলবুলি হত্যার বিষয়টি ভিকটিমের বোন আছিয়া আক্তার টপিকে মোবাইলে ফোন করে জানায়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, বিপিএম বলেন এটি একটি হত্যা মামলা।থানা পুলিশ কর্তৃক তদন্তধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে ঘটনার সহিত সকল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। মূলত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরকীয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হয়।
আসামি মোঃ মাসুদ রানাকে গ্রেফতার পূর্বক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল শুক্রবার ২৬ মে, আদালতে সোপর্দ করা হলে উক্ত আসামি ভিকটিম বুলবুলি বেগমকে হত্যা কান্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।