রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে লিটন হত্যা কিলারদের প্রশিক্ষণ চলে এক বছর

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র

আদালতের পর্যবেক্ষণ

 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, রাজনৈতিক কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, এমপি হওয়ার লোভের জেরেই লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আবদুল কাদের খাঁন। হত্যাকা- অংশ নেওয়া কিলারদের এক বছর অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণসহ অর্থ ও নানা প্রলোভন দেন তিনি। তিনটি অস্ত্র ব্যবহার করে ঘরে ঢুকে এমপি লিটনকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে চার খুনি। এই বীভৎস হত্যাকা-ে সারাদেশের মানুষকে হতবাক করেছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক এই রায় ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে ছয় জনের উপস্থিতিতে রায় পড়েন তিনি। এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামিরা নিস্তব্ধ হয়ে রায় শোনেন। এর আগে, সকাল ১১টা ১৮ মিনিটে জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। প্রধান আসামি আবদুল কাদের খাঁনকে হাসিমুখে আদালতে আসতে দেখা যায়।
দ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, একই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ডা. আবদুল কাদের খাঁন, তার পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়িচালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, গৃহকর্মী শাহীন, রানা ও চন্দন কুমার। হত্যাকা-ে অভিযুক্ত আটজন আসামির মধ্যে কসাই সুবল কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। আর চন্দন কুমার ভারতে পলাতক রয়েছেন। সুবল ছাড়া বাকি সাত জনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে।
আলোচিত এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের প্রায় ১৮ মাস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। গত ১৯ নভেম্বর এই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও নিহতের স্বজনসহ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। রায়ের পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি বলেন, লিটনকে হারিয়ে যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরণ হবে না। ঘটনার প্রায় তিন বছর পর আদালতে ন্যায়বিচার পেলাম। খুনিদের সর্ব্বোচ শাস্তিতে আমরা খুশি। পলাতক আসামি চন্দনকে গ্রেফতার করে দেশে এনে দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রত্যেকের অপরাধ বিবেচনা করেই আদালত মৃত্যুদ-ের রায় দিয়েছেন। মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এ রায় নজির হয়ে থাকবে।
অন্যদিকে রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আসামিদের স্বজন ও আইনজীবীরা। এ মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল হামিদ বলেন, আদালতে আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের করবো আমরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুলের মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খাঁনসহ আট জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয় আদালতে।
২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর। এ মামলার বাদী, নিহতের স্ত্রী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিখ-ন শেষে রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
এছাড়া লিটন হত্যার ঘটনায় অস্ত্র আইন মামলায় চলতি বছরের গত ১১ এপ্রিল আবদুল কাদের খাঁনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *