সামরিক ঘাঁটি বানাতে বাংলাদেশের কাছে আমেরিকার আবদার দেশের একমাত্র প্রবলদ্বীপ সেন্টমার্টিন

Uncategorized আন্তর্জাতিক চট্টগ্রাম জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সারাদেশ

দেশের একমাত্র প্রবলদ্বীপ সেন্টমার্টিন যা দেশের সৌন্দর্যকে আরও সমৃদ্ধশালী করেছে। এই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কে টার্গেট করেছেন জে বাইডেন প্রশাসন।


বিজ্ঞাপন

বিশেষ প্রতিবেদক :  দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এখন মুখ্য আলোচনায়। আমেরিকা বাংলাদেশের কাছে আবদার দেশের একমাত্র প্রবলদ্বীপ  সেন্টমার্টিন চায়। তারা সেখানে সামরিক ঘাঁটি বানাবে। দক্ষিণ এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে নজরদারির স্বার্থে বিশ্বের সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষমতাধর দেশটির এমন ইচ্ছা দীর্ঘদিনের, তারা সেখানে সপ্তম নৌঘাঁটি স্থাপন করার লালিত স্বপ্ন দেখছেন।

সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আরো বেড়েছে।এ কারণে দ্বীপটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা নেয়ার পর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে রাজনৈতিক মহলে।কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সর্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে বাংলাদেশের জন্যে যে ভিসানীতি করেছে সেটিও সেন্টমার্টিনকে ঘিরে।   এসব আলটিমেটাম মুলত বাংলাদেশের একমাত্র প্রবলদ্বীপ  সেন্টমার্টিন কৌশল বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন চলছে । বঙ্গোপসাগরের ওপর কৌশলগত নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মেরিন একাডেমির নামে কার্যত মার্কিন সৈন্যদের ঘাঁটি করার কৌশল বলে মনে করেন কেউ কেউ। এই কৌশল বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ধীরে চলো নীতিতে চললেও এখন খুব জোরালোভাবে অগ্রসর হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দেয়া হচ্ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরীক দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারাও জাতীয় সংসদে কথা বলেছেন। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে তার মতামত জানালেন। গতকাল বৃহস্পতিবার  ২২ জুন  সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু সেটা তার (শেখ হাসিনা) দ্বারা হবে না। তিনি দেশের কোনো সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চান না। কাকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা নেই, সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত কিছু না বললেও কারো বুঝতে বাকি নেই যে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকেই ইঙ্গিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এমন হুঁশিয়ারিও এসেছে, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে তিনি খেলতে দেবেন না, ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো কিংবা কাউকে আক্রমণ করার মতো কাজ তিনি হতে দেবেন না। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি শান্তিতে বিশ্বাস করেন, শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করেন।

প্রধানমন্ত্রীর এমন অবস্থান প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, বহুমাত্রিক পৃথিবীতে এক দেশের খবরদারি এখন আর নেই। কোনো দেশ কারো ওপর কিছু চাপিয়ে দেবে এটা কেউ চায় না। তার মতে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে এমনটা বলেছেন। আগে বাংলাদেশের মাটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ভারতের মণিপুরসহ কয়েকটি রাজ্যে অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই সুযোগ কেউ আবারো পায় সেটা হয়তো প্রধানমন্ত্রী চান না। পাশাপাশি ভারতের একটি বিষয় তো রয়েছেই। এ বক্তব্যের মাধ্যমে ভারত হয়তো কিছুটা স্বস্তি বোধ করবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. তৌহিদ হোসেন অবশ্য বিষয়টি রাজনৈতিক বলে মনে করেন। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, আমেরিকা এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। বরং তারা অস্বীকার করছে। আমেরিকা কংক্রিট কিছু বললে তখন এ নিয়ে কথা বলা যাবে।

এ নিয়ে গত ১৪ জুন জাতীয় সংসদে কথা বলেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন। তার ভাষায়- যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। বাংলাদেশকে তারা বাগে রাখতে এর আগে স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এটা শুধু দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের রেজিম চেঞ্জের কৌশলের অংশ। বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণের ভূখণ্ড টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটারের মতো দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপটি স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা বা দারুচিনি দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। আরব নাবিকরা প্রথম এ দ্বীপে বসবাস করেন। তারা এর নাম দেন জাজিরা।

ব্রিটিশ শাসনের সময় টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল দ্বীপটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে সময়ে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তারপরও সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

এর আগে ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে বর্মী রাজার যে যুদ্ধ হয় তাতে বিতর্কের ইস্যুগুলোর মধ্যে এ দ্বীপের মালিকানাও ছিল অন্যতম। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় আট বর্গকিলোমিটার। এর সঙ্গে সংলগ্ন ছেঁড়া দ্বীপটি মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ভাটার সময় দুটি দ্বীপ এক হলেও জোয়ারের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছুদিন আগে মিয়ানমার তার দেশের মানচিত্রে সেন্টমার্টিনকে অন্তর্ভুক্ত করে। এ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া পূরণ করতে গেলে সাংঘর্ষিক পরিবেশের সৃষ্টি হবে যা বাংলাদেশ কখনো চায় না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *