নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় হলি আর্টিসান মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে শুনানি চলাকালে একপর্যায়ে আদালত রিগ্যানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, আইএসের টুপি কোথায় পেয়েছিলেন? উত্তরে রিগ্যান আদালতকে বলেন, পথিমধ্যে (কারাগার থেকে আদালতে আসার পথে) একজন টুপি দেয়।
ট্রাইব্যুনালের পেশকার রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আইএসের টুপি কোথা থেকে এলো- বিষয়টি তদন্তে কমিটিও গঠিত হয়। ইতোমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগার থেকে ওই টুপি আসেনি।
হলি আর্টিসান মামলার রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় জঙ্গি সংগঠন ‘আইএসের টুপি’ দেখা যায়। রিগ্যান ছাড়াও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর হোসেনের মাথায়ও আইএসের টুপি দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বমহলে সমালোচনা শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, কারাবেষ্টনীর মধ্যে কীভাবে আসামিদের মাথায় এ ধরনের টুপি এলো?
মঙ্গলবার রাজধানীর হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি রাকিকুল হাসান রিগ্যানকে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জেকেট পরিয়ে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। একই সঙ্গে, হলি আর্টিসান মামলার আরও পাঁচ আসামিকেও আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়।
আদালতে কোনো সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এদিন কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পলাতক আসামি আজাদুল কবিরের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। এর আগে ১৮ জুলাই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আজাদুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, পলাতক আসামি আজাদুলের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার আদালতের পুলিশের উপ-কমিশনার জাফর হোসেন বলেন, বিচারকের নির্দেশে মঙ্গলবার আদালতে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
গত ১১ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১০ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট জমা দেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- রাকিকুল হাসান রিগ্যান (২১), সালাহ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরুল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩) ও হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)।
তাদের মধ্যে শরীফুল ইসলাম খালেদ, মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন ও আজাদুল কবিরাজ এখনও পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এছাড়া ওই আস্তানায় রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী পরিকল্পনা করলেও ঘটনার সময় নিহত নয়জন এবং নারায়ণগঞ্জে নিহত তামিম চৌধুরী ও আশুলিয়ায় নিহত সরোয়ার জাহানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে ‘জাহাজ বিল্ডিং’-এ রাতভর অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকালে এক ঘণ্টার মূল অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হন রিগ্যান নামে আরও একজন। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) সদস্য বলে জানায় পুলিশ।
অভিযানের দুদিন পর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহ জালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়।
গত ২৭ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলা মামলার আট আসামির মধ্যে সাতজনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।