নিজস্ব প্রতিবেদক : বাবা-মায়েদের সবচেয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শিশুদের চিকিৎসায় সম্পৃক্ত একজন নার্স। তসন্তানের প্রথম টিকা দেওয়া অনেক বাবা-মায়ের জন্য ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তবে আপনার ও শিশুর উভয়ের ক্ষেত্রেই এই মানসিক চাপ কমানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আমরা শিশুদের জন্য টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে এবং বাবা-মায়েদের সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে পেডিয়াট্রিক নার্স ড. শ্যানন ম্যাকডোনাল্ডের সঙ্গে কথা বলেছি, যিনি নিজেও একজন মা।
মিনি প্যারেন্টিং মাস্টার ক্লাস :
একজন মা হিসেবে আমি জানি, আপনার সন্তানকে টিকা দেওয়া অনেক উদ্বেগের কারণ হতে পারে। আপনি এমন কিছু করতে চান না যার কারণে আপনার শিশু আঘাত পেতে পারে। টিকার জন্য তাদের শরীরে সূচবিদ্ধ করার বিষয়টি তাই বাবা-মায়ের জন্য অনেক উদ্বেগের কারণ। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, এক্ষেত্রে আপনি কাজে লাগাতে পারেন এমন অনেক কৌশল রয়েছে।আমার নাম শ্যানন ম্যাকডোনাল্ড এবং আপনার শিশুকে প্রথম টিকা দেওয়ার বিষয়ে এটি আমার মিনি প্যারেন্টিং মাস্টার ক্লাস।
টিকা দেওয়ার সময় আপনি কীভাবে আপনার শিশুকে শান্ত থাকতে সহায়তা করতে পারেন?
একজন নার্স হিসাবে আমি অনেক বাবা-মাকে দেখেছি যারা নিজেরাই এই ঘটনা নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন থাকেন যে, এক্ষেত্রে শিশুর শান্ত থাকার কোনো উপায় থাকে না। তাই এক্ষেত্রে শুধু বাবা-মাকে কয়েকবার দীর্ঘ শ্বাস নিতে বলা এবং তাদের সঙ্গে শান্ত কণ্ঠে কথা বলা এই কাজের সবচেয়ে বড় অংশ, আর এটাই সত্যি।বাবা-মায়েদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজেদের শান্ত রাখা। কারণ বাবা-মা যদি উদ্বিগ্ন হন, তবে তা সন্তানের মাঝেও দেখা যায়।আর তারপর আপনি শিশুদের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, তাদের ব্যথা কমানোর জন্য টিকা দেওয়ার স্থানটি ক্রিম দিয়ে অবশ করা, টিকা দেওয়ার সময় শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো- এসব সত্যিই কার্যকর হতে পারে।এরপরের কাজ হলো, মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া; শিশুকে কেবল অন্য কিছু সম্পর্কে চিন্তা করতে, একটি বই বা পোস্টারের দিকে তাকাতে অথবা বুদবুদ ফোলাতে দেওয়া।
শিশুদের টিকা দেওয়া নিয়ে বাবা-মায়েদের কেন আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত?
আমি বুঝতে পারি যে, বাবা-মায়েরা টিকা সম্পর্কে অনেক ভীতিকর কথা শুনতে পান। আমি জানি, তারা ইন্টারনেটে বিভিন্ন জিনিস দেখেন এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ভীতিকর গল্প শোনেন। আমি শুধু তাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমাদের কাছে যে বিপুল তথ্য-প্রমাণ রয়েছে তা দেখায় যে, টিকাগুলো নিরাপদ ও কার্যকর। আর এগুলোই এখন পর্যন্ত শিশুদের রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার সর্বোত্তম উপায়। তাই অভিভাবকদের আশ্বস্ত করা যেতে পারে যে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী তাদের শিশুদের টিকা দেওয়ার সময় শিশুর জন্য সবচেয়ে যেটা ভালো ঠিক সে কাজটিই করছেন।
টিকা কীভাবে কাজ করে?
টিকাগুলো যা করে তা হলো, ভবিষ্যতে মুখোমুখি হতে যাওয়া জীবাণুর জন্য আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করা। এক্ষেত্রে ধারণাটি হলো- আপনার শরীরের রোগ প্রাতিরোধ ক্ষমতা জীবাণুকে সত্যিকারভাবে দুর্বল করে দেয় এবং ভবিষ্যতে আপনাকে সুরক্ষিত রাখে। ক্ষা করবে। শিশুকে টিকা দেওয়া এবং ভবিষ্যতে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের শরীর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকে। জীবাণুকে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়ার বদলে সেগুলোকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।
শিশুদের অল্প বয়সেই টিকা নেওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শিশুদের জন্য খুব অল্প বয়সে টিকা নেওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তখনই তারা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আপনি যদি প্রথম দিকে টিকা প্রদান করেন, তাহলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তারপর যখন তারা সেই রোগের সম্মুখীন হয়, তখন তারা লড়াই করতে সক্ষম হয়।আর যদি শিশুকে অল্প বয়সে টিকা দেওয়া না হয় অর্থাৎ তারা অরক্ষিত থাকে, তবে তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে বেশি। এসব রোগে ভোগার সম্ভাবনা শিশুদের অনেক বেশি থাকে এবং এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক সময় তাদের জন্য কঠিন হয়। তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ যেন তারা খুব অল্প বয়সেই টিকা পায়।
টিকা কি নিরাপদ?
আমাদের শৈশবকালীন নিয়মিত টিকাদানের সূচিতে যেসব টিকা চালু রয়েছে তার সবগুলোই খুব কঠোরভাবে পরীক্ষিত এবং মানুষের জন্য টিকা চালু করার পর সেই নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন প্রক্রিয়াও চালু রয়েছে।একটি টিকা তৈরির জন্য যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো শিশুদের গ্রহণের জন্য নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করতে সবগুলো উপাদানই সাবধানতার সঙ্গে পরীক্ষা করা হয়। বেশিরভাগ উপাদানই প্রাকৃতিকভাবে আপনার পরিবেশে তৈরি হয় এবং সেগুলোকে অতি অল্প পরিমাণে টিকায় ব্যবহার করা হয়।টিকাগুলো শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বিচলিত করে না। কারণ একটি শিশু আগে থেকেই তার পরিবেশে থাকা অনেক জীবাণুর সংস্পর্শে আসে এবং শিশুরা দৈনিক যে পরিমাণ জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, টিকাগুলো তার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। তাই এগুলো শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক নয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা সাধারণত কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আশা করতে পারেন?
টিকা দেওয়ার পর কোনো শিশুর মধ্যে সাধারণত খুব সামান্যই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যে কারণে স্কুল বাদ দিয়ে বাড়িতে থাকার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, সামান্য জ্বর বা যে স্থানে টিকা দেওয়া হয়েছে তার চারপাশে লালচে বা ব্যথা হওয়া। আর এগুলো এমন বিষয় যা আপনি ঘরে বসেই সামাল দিতে পারেন।এই ধরনের হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায় বা নিজে থেকেই চলে যায়। এগুলো দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না।
টিকার সূচিতে মেনে চলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
টিকার সূচি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সূচিগুলো তৈরি করেছেন বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা, যারা একটি টিকা গ্রহণের সর্বোত্তম সময় এবং শিশুরা কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে অরক্ষিত থাকে তা খুঁজে বের করেছেন।কিছু দেশে, উদাহরণস্বরূপ, কিছু রোগ খুব বেশি দেখা যায় এবং এ কারণে শিশুদের জীবনের শুরুতেই সেই টিকাগুলো নিতে হয়। তাই টিকার সূচি মেনে চললে তা আপনার শিশুর সেই রোগগুলো থেকে সুরক্ষা দেবে, যেসব রোগে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।”ধৈর্য, একাগ্রতা ও অনেক অনেক ভালোবাসা।” আপনার শিশুকে প্রথম খাবারের সঙ্গে কীভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, সে সম্পর্কে একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।