ক্যায়ছে হুয়া ক্রোড়পতি : বেকার যখন আপন পতি! 

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

ফাহমীদা সুলতানা সীমার নতুন বাড়ি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাল্বের চেয়ারম্যানের ভুঁড়ি ভোজের দৃশ্য।


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্বামী বেকার।তার সাথে সাথে থাকেন সর্বদা। অথচ সম্প্রতি দু’টি গাড়ি কিনেছেন। গাইবান্ধা শহরে নতুন একটি বাড়ি করেছেন। শহরে দু’টি বাড়ি ও একটি রাইস মিল।এই সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাহলে আয়ের উৎস কি কালবে লুটপাট-এটাই সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন। কেননা বিগত ৪ বছর হয়েছে তিনি কালবের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এর পরই আচমকা তার অর্থনৈতিক উন্নতি।এই পরিবর্তন দেখেই কালবের লোকজনের মধ্যে প্রশ্ন-ভাইস চেয়ারম্যান ক্যায়ছে হুয়া ক্রোড়পতি বেকার যখন আপন পতি!

সূত্রমতে,দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লিঃ (কাল্ব) দূনীতিতে ডুবতে বসেছে। অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে দূর্নীতির তকমা দিয়ে ফাহমিদা সুলতানা সীমার বিরুদ্ধে ই বড়দরণের  দূর্নীতির সাথে সম্পৃক্তার অভিযোগ উঠেছে । সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ইমপেলভিস্তা (৩/১১ হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭) নামের ১টি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মিঃকামরুল হাসান হলেন কাল্ব এর বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সীমার আপন বোন জামাই। বোন জামাইকে সহযোগিতা দেয়ার জন্য কালবএর চলমান অনলাইন সফটওয়্যার থাকা স্বত্ত্বেও নতুন করে সফটওয়্যার তৈরির নামে এপ্রিল ২০২১ সালে ৭২,৮৫,০০০ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার বাগিয়ে নেন। উক্ত কাজের মূল কারিগর ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সীমা। তাকে এ কাজের সহযোগিতা করেন কাল্ব এর কিছু অসাধু দূর্নীতিবাজ পরিচালক  ও কর্মকর্তা। পরবর্তীতে জানুয়ারী ২০২২ সালে একই সফটওয়্যারকে অফ লাইন বলে চালিয়ে দিয়ে ৩৯,০০,০০০ টাকার ওয়ার্ক অর্ডার বাগিয়ে নেন।

ফাহমীদা সুলতানা সীমার নতুন বাড়ি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাল্বের কর্মকর্তা ও  আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের ভুড়ি ভোজের দৃশ্য।

জানাযায় সফটওয়্যারে অনলাইন বা অফলাইন তেমন কোনপার্থক্য নেই। সামান্য কিছু পরিবর্তন মাত্র। এক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর্মীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা কোন প্রকার ক্রয় সংক্রন্ত  নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই উক্ত কর্ম  সম্পাদন করান। বাকপটু সীমা সকলকে দূর্র্নীতিগ্রস্থ বলে অন্যের উপর দূর্নীতির তকমা দিয়ে নিজেই দূর্নীতে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ফাহমিদা সুলতানা সীমা কাল্ব এর ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হিসবে গাইবান্ধা সদর উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এর একজন প্রতিনিধি/ডেলিগেট। তৎকালে মিসেস সীমা বা তার স্বামীর কোন সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে স্বামীর মালিাকানাধীন ২টি মাইক্রোবাস রয়েছে। ২টির ই কাগজপত্র অন্যদের নামে। যা নিজ নামে পরিবর্তনের জন্য তিনি ৩বার ঢাকায় বিআরটিএ অফিসে স্ব শরীরে যোগাযোগ করেছেন । গাড়ী ২টির নম্বর যথাক্রমে,  ঢাকা মেট্রো চ ১৩-৮৯৫৬ এবং ঢাকা মেট্রো চ ১৪-২১১৬। এমনকি কাল্বের বিগত তিন বছরের লুটপাটের টাকায় গাইবান্ধা শহরে একটি নতুন বাড়িও করেছেন।

গত ৩ জুন শনিবার কালবের ”অবৈধ” চেয়ারম্যান ঢাকা থেকে সদলবলে গিয়ে মহাআড়ম্বরে বাড়িটি উদ্বোধন করেন। ফাহমিদা সুলতানা সীমা কাল্ব এর ভাইস চেয়ারম্যান নতুন বাড়ি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশাল ভুরিভোজের আয়োজন করা হয় এবং ফাহমিদা সুলতানা সীমা স্ব গৌরবে নিজের হাতে আয়োজিত ভুঁড়ি ভোজের রান্না  করেন এবং রান্নর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও পোস্ট করেন।

ফাহমীদা সুলতানা সীমার পরম ও চরম যত্ন সহকারে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য নিজের হাতে রান্না করার দৃশ্য

গাজীপুর জেলাধীন কালীগঞ্জ থানার কুচিলাবাড়ীতে অবস্থিত কালব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হল কাল্ব এর একটি প্রজেক্ট। উক্ত রিসোর্টটিকে ফাদমিদা সুলতানা সীমা নিজের সম্পত্তি মনে করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত তিনি সভায় আসলে সাথে একাধিক নেতা, আত্মীয় স্বজন  স্বজন, প্রতিবেশী নিয়ে হাজির হন যাদের থাকা, খাওয়া এবং যাতায়াতের দায়ভার কাল্ব এর উপর বর্তায় । নাম প্রকাশ নাকরা শর্তে একাধিক ডিরেক্টর এ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। ব্যক্তিগত ভিজিটের যাবতীয় ব্যয় তিনি কালব হতে গ্রহণ করেন। ভাবসাবে মনে হয় কাল্ব ও কাল্বের সবকিছুই যেন ফাহামীদা সুলতানা সীমার পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিনত হয়েছে। বৃহত্তর ‘ক’ অঞ্চল হতে নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বাধীন এলাকায় মোট কর্মীর সংখ্যা ১৭২জন। কর্মীনিয়োগ, বদলীর সকল দায়-দায়িত্ব জিএম এর হলেও কাল্ব চেয়ারম্যানকে বিশেষ মন্ত্রে বশ করে ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা সীমা টাকার বিনিময়ে প্রতি ২/৩মাস পর পর কর্মী বদল করে বলে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রায় ১২৪ টি ক্রেডিট ইউনিয়নের মধ্যে ৬৪টি শিক্ষক ক্রেডিট ইউনিয়ন। উক্ত ক্রেডিট ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে বেশীরভাগ ক্রেডিট ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণসভায় ফাহমিদা সুলতানা সীমাকে বাধ্যতামূলক প্রধান অতিথি (তার কর্তৃক স্বঘোষিত  সিদ্ধান্ত) হিসেবে দাওয়াত দিতে হয়। উক্ত দাওয়াতে তিনি নগদ টাকা উপঠোকন হিসেবে গ্রহণ করেন, এছাড়াও উপরোন্ত  দাবী করে বসেন মাইক্রোবাস ভাড়া। আবার টাকা নিয়ে কালবে স্টাফ নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও উঠেছে  তার বিরুদ্ধে।

তিনি কাল্ব এর বিগত বোর্ডের ৫টি উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমান বোর্ডেও একাধিক উপ-কমিটির সদস্য। বিগত মেয়াদে ঋণ খেলাপী নিয়ন্ত্রণ উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাপী তিনি ট্যুর প্রোগ্রাম করছেন তার আত্মীয় স্বজন নিয়ে। যার সকল ব্যয় বহন করছে কালব। কাল্বের স্থানীয় পর্যায়ের বিল ভাউচার দেখলে অত্র অভিযোগের প্রমান মিলবে। বোর্ড ডিরেক্টর, স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে তিন ভয় দেখান, তার আত্মীয় স্বজন প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের লোক, তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার বাবা দীর্ঘদিনের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তার স্বার্থ পূরণ না হলে তিনি যে কারো ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করবেন। কথায় কথায় তিনি বলেন, কাল্ব না থাকলে বা আমি কাল্বে না থাকলে আমার কি?আমাকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে কাজ করতে হবে। না হয় তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে কাজ আদায় করে নিবেন। স্থানীয় জেলা পর্যায়ে কিছু অসাধু কর্মীদেরকে তিনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। বাকী কর্মীরা ভয়ে কোন কথা বলতে নারাজ।নিজে সকল অপ-কর্মের সাথে লিপ্ত হয়ে অন্যদেরকে দূর্নীতিগ্রস্থ বলছেন আবার সবাইকে বিশেষ মন্ত্রে বশ করে স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করছেন এ যেনো এক ধরনের  অরাজকতা।

বর্তমান বোর্ডে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আরো বেপরোয়া। ”অবৈধ”চেয়ারম্যানের ডান হাত তিনি। দুর্নীতিককে  আরো ত্বরান্বিত করার জন্যে কাল্বে তিনিই মাফিয়া আমদানী করেন। তার কারনেই কালবের নির্বাচনী ব্যবস্থা তচনছ হয়ে গেছে। নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যা ইতিপূর্বে কালবের নির্বাচনে কখনো ই  দেখা যায়নি। তাই বোর্ড সদস্য বা স্টাফদের তিনি কেয়ার করেন না।

উল্লেখিত বিষয়গুলোর বেশকিছু তথ্য আমাদের হাতে আছে এবং নিজস্ব প্রতিবেদক কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে। সমবায় অধিদপ্তর, স্থানীয় শিক্ষা অফিসার, দূর্র্নীতি দমন কমিশনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া সহ কাল্ব এর অভিজ্ঞ ডেলিগেটদের নিয়ে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
উল্লেখ্য, কালবের ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা সীমা সহ সদ্য সাবেক বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৌশলে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাত পূর্বক মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৪১১.০১০০৫.২০২২/২৯৬৮২ তারিখ-১১/৮/২০২২। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা: আবু সাঈদ,উপপরিচালক-দুর্নীতি দমন কমিশন। চলতি বছরের  ৫ জুলাই,  ফাহমিদা সুলতানা সীমাকে দুদকে তলব করে দুর্নীতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানাগেছে।

এতোদাসংক্রান্ত বিষয়ে ফাহমীদা সুলতানা সীমার  বক্তব্য জানাতে অদ্য ২৭ জুলাই, বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটের সময় আজকের দেশ ডটকম এর সম্পাদক ও প্রকাশক এর পক্ষ থেকে  তার ব্যেক্তিগত মোবাইলে ( মোবাইল নাম্বার – 01716385709))  যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, তার স্বামী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন  ঠিকাদার, তার বাবা এলাকার উপজেলা  চেয়ারম্যান ছিলেন  তাদের ৩০ বিঘা জমি আছে (পৈতৃক ভিটা-জায়গা)। সে জন্ম সুত্রে বড়োলোক তার গাড়ি ২ টা কেন ৪ টা থাকাও অস্বাভাবিক নয়। তার চাচা এলাকায় অনেক বছর ধরে চেয়ারম্যান এবং সে সারা দেশের চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি পদে আছেন। শুক্রবার ও সনিবার কাল্বের রিসোর্টে ছিলেন এটা স্বীকার করেন, কাল্বের চেয়ারম্যান বিদেশে যাওয়ার পূর্বে তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন কিনা এবিষয়ে তিনি কোন প্রকার মন্তব্য করেন নি, কাল্বের রিসোর্টে তিনি,তার স্বামী এবং নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস কাল্বের অর্থে ভুড়িভোজ করেছেন এবং রবিবার চেয়ারম্যানের গাড়ি নিয়ে সমগ্র গাজীপুর এলাকায় ট্যুর করেছেন কাল্বের টাকার তেল খরচ করেছেন, এবিষয়ে তিনি কোন প্রকার মন্তব্য করেন নি। তিনি এটাও বলেন আপনারা অনেক রিপোর্ট করেছেন করতে থাকেন আপনাদের সাথে কোন প্রকার কথা নাই বলে একপর্যায়ে ধমকের স্বরে   মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *