নিজস্ব প্রতিবেদক : তদন্তভার গ্রহণের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার ধর্মগঞ্জের লোমহর্ষক কবিরাজ আলামিন শেখ (৪৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী হাফিজুর রহমান@হাফিজ মাস্টার গ্রেফতার করেছে পিবিআই নারায়নগঞ্জ জেলা।
গত ৮ সেপ্টেম্বর, ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ চতলার মাঠ এলাকার পরিচিত মুখ কবিরাজ আলামিন শেখকে কে অজ্ঞাত আসামী/আসামীরা গলা কেটে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় নিহত আলামিনের ভাই মোঃ আলীম শেখ(৩২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ফতুল্লা থানার মামলা নং-২৫,তাং-০৮/০৯/২৩ খ্রিঃ,ধারাঃ ৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, টিভি চ্যানেলে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পিবিআই নারায়নগঞ্জ জেলাও ব্যাপক গুরুত্বের সাথে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।
অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই নারায়ণগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম,পিপিএম, এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটি গত ৯ সেপ্টেম্বর স্ব-উদ্যোগে গ্রহন করে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই (নিঃ) কামরুল হাসান এবং প্রত্যক্ষভাবে সহযোগী এস.আই (নিঃ) শাকিল হোসেন, এস.আই (নিঃ) মোঃ মাজহারুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন।
মামলাটি প্রথমে ক্লুলেছ হলেও পরবতীর্তে আমাদের লোকাল সোর্স এবং তথ্য প্রযৃুক্তির সহায়তায় অত্র মামলা একমাত্র আসামী হাফিজুর রহমান@হাফিজ মাস্টার(৩৮) কে ফতুল্লার পাগলা,নয়ামাটি এলাকার নিজ ভাড়া বাসা হতে গত ১০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখিত আসামী সূত্রে বর্নিত মামলার ঘটনার সহিত জড়িত বিধায় মামলাটি গভীরভাবে তদন্তকালে ও আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে তাহার দেখানো মতে ভিকটিমকে জবাই করার কাজে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। উক্ত আসামী’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের কাছে ঘটনার দায় স্বীকার করে এবং স্বেচ্ছায় আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকাররোক্তিমূলক প্রদান করে।
পিবিআই এর প্রাথমিক তদন্তে, আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা প্রকাশ পায়, আসামী হাফিজুর রহমান@হাফিজ মাস্টার (৩৮) লাইট জাহাজের মাস্টার হিসেবে এবং ভিকটিম একই জাহাজে বাবুর্চি হিসেবে চাকুরী করার সুবাদে তাদের অনুমান ১ বছর পূর্বে পরিচয় ঘটে। মৃত ভিকটিম এর ব্যবহার কথা বাতার্ জাহাজের মাস্টার আসামী হাফিজুর রহমানের খুব ভাল লাগে। তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক খুব ভাল বন্ধুত্বে রূপ নেয়। সম্পর্কের সুবাদে আসামী হাফিজুর রহমান@হাফিজ মাস্টার (৩৮) বেশ কয়েকবার ভিকটিম আলআমিন শেখের বাসায় রাত্রি যাপন করেছে। এভাবে চলতে চলতে সম্পর্কের এক পর্যায়ে আসামী হাফিজুর রহমান জানতে পারে ভিকটিম আলআমিন কবিরাজি,যাদু মন্ত্র, এবং বিভিন্ন ঝাড় ফুকের কাজ, কুফরি কালাম দিয়ে মানুষ কে বশ করার কাজ করেন।
আসামী হাফিজুর রহমান বাল্যকালে মাদ্রায় পড়াশোনা করেছে এবং সে তার বন্ধুর এমন কবিরাজি ঝাড় ফুকের কাজ খুবই অপছন্দ করতো।আসামী হাফিজুর রহমান ভিকটিম কে বিভিন্ন সময় এগুলো হতে সরে আসার অনুরোধ করলেও ভিকটিম এই পথ থেকে সরে না এসে বরং আসামীকে এই পথে চলে আসার আহবান করে। আসামী হাফিজুর রহমান এগুলো কিছুতেই মানতে পারে না এবং তাদের সম্পর্ক দিন কে দিন খারাপ হতে থাকে। আসামী হাফিজুর ধারনা হয় ভিকটিমের দ্বারা সমাজের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, মানুষ প্রতারনার শিকার হচ্ছে।
যখন আসামী হাফিজুর কিছুতেই তাকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারল না তখনই সে তার আদর্শগত দিক হতে তার পূণ্যে হবে এই ধারনায় ভিকটিম কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামী ঘটনা ১/২ দিন আগে বায়তুল মোকার্রম মার্কেট হতে ৪০০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কিনে রাখে। ঘটনার দিন ৭ সেপ্টেম্বর আসামী হাফিজ ভিকটিমের সাথে মোবাইলে কথা বলে রাত্রি ১০ টার সময় ভিকটিমে কবিরাজি রুমে আসে। ভিকটিমের স্ত্রী তাদের রাতের খাবার খেতে দেন এবং তারা খাবার খান।
ঐদিন পূর্ব হতেই ভিকটিমের শশুড় শাশুড়ী ভিকটিমের বাসায় ছিল এবং রাত্রি অনুমান ১২ টার সময় ভিকটিম তার শশুড় শাশুড়ী কে সাইনবোর্ডে এসে তাদের নিজ বাড়িতে যাওয়ার গাড়ীতে তুলে দেন। রাত্রি অনুমান ৩ টার সময় ভিকটিম তার শশুড় শাশুড়ী কে গাড়ীতে তুলে দিয়ে ফতুল্লার বাসায় চলে আসে। তখন আসামী এবং ভিকটিম একটু কথা বাতার্ বলে তাদের কবিরাজি ঘরে এবং ভিকটিমের স্ত্রী পার্শ্ববর্তী বাদীর বোন(ফারজানা আক্তার) এর রুমে ঘুমিয়ে পড়ে ।
ভিকটিম খুব ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লে রাত্রি অনুমান ৪ টা থেকে সাড়ে ৪ টার সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী হাফিজ তার বন্ধু আলামিন শেখ কে পূর্বেই কিনে রাখা চাকু দ্বারা কে ঘুমন্ত অবস্থায় গলায় কেটে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
আসামী পলায়নের সময় ভিকটিমের দুটি মোবাইল, ভিকটিমের মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে ১৫০ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। হত্যাকান্ড শেষে আসামী হাফিজুর ফতুল্লা পাগলা মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করে। পরবতীর্তে তদন্তাকালে আসামীর দেওয়া তথ্য মতে ভিকটিম কে জবাই করার কাজে ব্যবহার করা সুইচ গিয়ার চাকু এবং চিুর করা ভিকটিমের ব্যবহার করা একটি ওয়ালটন মোবাইল উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী তদন্তকাজ চলমান আছে।