সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে মুন্সীগঞ্জে ভোক্ত অধিকার কর্তৃক সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত 

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  সরকার  নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করতে মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজ তদারকি এবং আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুন্সগঞ্জ জেলার কোল্ড স্টোরেজ মালিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভা।


বিজ্ঞাপন

শনিবার  ১৬ সেপ্টেম্বর, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান-এঁর নেতৃত্বে মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মুক্তারপুর এলাকায় অবস্থিত রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজে আলুর মজুদ, সরবরাহ পরিস্থিতি , ক্রয় বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ ও পাকা রশিদ নিশ্চিত করতে সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিট থেকে দুপুর ১ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হয় । এসময় মহাপরিচালকের সাথে উপস্থিত মুন্সীগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন বিপিএএ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), উপজেলা নির্বাহী অফিসার সদর, এনডিসি, ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, সহকারী পরিচালক, ঢাকা জেলা ও মুন্সিগঞ্জ জেলা কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, মুন্সীগঞ্জ ও ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।


বিজ্ঞাপন

এসময় রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজের রসরাজ সরকার নামের একজন মজুদদার ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীকে প্রমাণসহ হাতেনাতে ধরা হয় এবং জেলা পুলিশের হেফাজতে সোপর্দ করা হয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা প্রশাসক অভিযানে কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন ।

পরবর্তীতে বিকাল ৩ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কোল্ড স্টোরেজ মালিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বর্ণিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মুন্সীগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুজাফর রিপন বিপিএএ। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন  আসলাম খান ,পুলিশ সুপার, মুন্সীগঞ্জ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদ এলাহী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), এনডিসি, জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শামীম মিঞা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, উপ-পরিচালক, কৃ্ষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা, এনএসআই, ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, মুন্সীগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, চেম্বার প্রতিনিধি, ক্যাবের প্রতিনিধি, এনএসআই এর প্রতিনিধি, প্রেস ক্লাব সভাপতি, কোল্ড স্টোরেজ মালিকবৃন্দ, পাইকারি ব্যবসায়ী, এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

মহাপরিচালক সভার শুরুতে সভা আয়োজন ও উপস্থিতির জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কৃষি বিপণন আইনে উৎপাদক, খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে কে কতটুকু লাভ করবে তার উল্লেখ আছে। তিনি ব্যবসায়ীদের সে মোতাবেক ব্যবসা পরিচালনা করতে এবং মুনাফা করার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের দায়িত্ব আছে; সে দায়িত্বের জায়গা থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ী এবং আলু সংরক্ষণকারীদের নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে ।সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে আলু ক্রয় বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে এবং পাকা রশিদ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে চান।

তিনি আরও বলেন, কোন কোল্ড স্টোর থেকে সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা মূল্যে আলু বিক্রয় না করলে উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ সংশ্লিষ্ট কোল্ড স্টোরেজের মালিকের মাধ্যমে আলু যার নামে মজুদ ছিল তার নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন সোনার বাংলা নির্মাণে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। পরিশেষে তিনি সকলের সমন্বিত সহযোগিতায় ভোক্তাবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব বাজার তৈরি হবে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

সভায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, মুন্সীগঞ্জে আলুর উৎপাদন উদ্বৃত্ত আছে।তিনি বলেন, কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলায় এ বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করা হবে।

আলোচনায় কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের মালিক প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন,তাঁর কোল্ড স্টোরেজে মূল্যের ব্যানার লাগিয়ে দিবেন এবং তাঁর কোল্ড স্টোরেজ থেকে যেসব ব্যবসায়ী আলু খালাস করবেন তাঁদের ক্ষেত্রে পাকা ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সরবরাহ নিশ্চিত করবেন।

সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজে সরকার নির্ধারিত মূল্য উল্লেখ করে ব্যানার টাঙ্গাতে হবে এবং পাকা রশিদ ছাড়া কোন কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের হবে না।

আলোচনায় সদর উপজেলার কমান্ডার, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাদের মোল্লা বলেন, সৎ ব্যবসায়ীদের উচিত অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা এবং তাদেরকে রুখে দেওয়া। এক্ষেত্রে তিনি ব্যবসায়ীদের সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।

সভায় মুন্সিগঞ্জ জেলা ক্যাবের প্রেসিডেন্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর সরকার মন্টু বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের জনবলের সংকট আছে, জনবল বৃদ্ধি করলে মনিটরিং কার্যক্রম আরো সুফল হবে। অবৈধ ব্যবসায়ীদের রুখে দিতে হবে।

আলোচনায় গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সহকারী পরিচালক ভোক্তা অধিদপ্তর, মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে গজারিয়ার দুইটি কোল্ড স্টোরেজ পরিদর্শন করা হয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আলু বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজর সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত যেন রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ থাকে যার ফলে মনিটরিং এ তথ্য প্রদান সহজ হবে।

সভায় জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আসলাম খান মুন্সীগঞ্জ বলেন, বর্তমানে নীতি-নৈতিকতা ভঙ্গের মহামারী চলছে। আমরা সবাই মিলে একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করতে চাই। মজুতদার আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং ভোক্তা অধিকার আইনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির যে বিধান আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল দেওয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে সরকার সবসময় সচেষ্ট এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।

পরিশেষে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক সভায় উপস্থিত সকলকে অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়নে সবাই সবার অবস্থান থেকে কাজ করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *