গোপালগঞ্জে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক স্কুলের উন্নয়নের  বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ  

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা বিশেষ প্রতিবেদন

মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী, (গোপালগঞ্জ) : গোপালগঞ্জে হাসিনা শিকদার নামের এক প্রধান শিক্ষক কর্তৃক স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামত ও উন্নয়ন বরাদ্দ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ১২৭ নম্বর আমেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।


বিজ্ঞাপন

আত্মসাৎ করা বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে, (পিইডিপি-৪) ক্ষুদ্র মেরাম ২০২১-২২ অর্থবছরের ২ লক্ষ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের স্লিপের ৫০ হাজার টাকা ও খেলনা ক্রয়ের ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও  পূর্ববর্তী কয়েকটি অর্থ বছরের বিভিন্ন বরাদ্দ কৃত টাকার সঠিক ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ রয়েছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শুধু অর্থ আত্মসাৎই নয় পূর্বে দায়িত্বে থাকা কালীন সময়ে ৩৯ নং ঘোষেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তানজিলা খাতুন নামের এক সহকারী শিক্ষকের চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন এবং ৯৩ নং বেদগ্ৰাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছথেকে বাড়তি টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের দুজন সহকারী শিক্ষক, স্কুল মহল্লার এক মুদি ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, হাসিনা শিকদার ২০২০সালে ১২৭ নম্বর আমেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই স্কুল পরিচালনাসহ সকল বিষয়ে বেআইনি ভাবে একক সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের সিদ্ধান্তকে মূল্যায়ন করেন না। কমিটির কাছে স্কুল উন্নয়ন বরাদ্দের সঠিক হিসাব দেন না। তিনি তার মনগড়া মত নাম মাত্র কাজ করে ভুয়া বিল ভাউচার করে অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এসকল অভিযোগ বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের অধিকাংশ সত্যতা পাওয়া যায়। পিইডিপি-৪ এর আওতায় (ক্ষুদ্র মেরাম) ২০২১-২২ অর্থবছরের ২ লক্ষ টাকার নাম মাত্র কাজ করিয়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের স্লিপের ৫০ হাজার টাকার কোন কাজ না করে নকল বিল ভাউচ করে  স্কুলে সংরক্ষণ করছেন। ক্ষুদ্র মেরামত ও স্লিপের টাকার সঠিক ব্যবহার না হলেও খেলনা ক্রয়ের ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ দিয়ে দোলনা ও স্লিপারসহ মোট তিনটি খেলনা ক্রয় করেছেন।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদ্যসাবেক সভাপতি হাসিবুর রহমান (হাছিব) সাংবাদিকদের বলেন, এটি আমার মায়ের নামিও প্রতিষ্ঠান, আমি অনেক চেষ্টা করেও প্রধান শিক্ষিকা হাসিনা শিকদারকে দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে ফেরাতে পারিনি। আমার স্বাক্ষর জাল করে নকল বিল ভাউচার বানিয়ে বিদ্যালয়ের বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছে। শিক্ষা কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হয়েও ন্যায়বিচার পাইনি। শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তাগন একই ডালের দুটি ফুল। একটি পর্যায়ে গিয়ে আমি নিরুপায় হয়ে আত্মসম্মান বাঁচাতে  নিজেকে গুটিয়ে ফেলি।

৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্কুল কমিটির সদস্য নাজমুল হক (নাজিম) বলেন, প্রধান শিক্ষক হাসিনা শিকদার একজন বেপরোয়া ও অসদআচরণের মানুষ। তিনি কমিটির কোন সদস্যের কথাই আমলে নেয়না। আমার এবং সাবেক সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন।

স্কুলের উন্নয়ন বরাদ্দ আত্মসাৎ করার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক হাসিনা শিকদার বলেন, এখন আমার কাছে শুধু ২০২২-২৩ অর্থ বছরের স্লিপের টাকা গচ্ছিত আছে, বৃষ্টির কারণে রং করাতে পারছিনা। আমি ভাল কাজ করি তাই সবাই আমার নামে অপপ্রচার চালায়। তবে অর্থ বছর শেষ হয়ে কয়েকমাস পার হলেও কোন নিয়মে সরকারি অর্থ নিজের কাছে রেখেছে তার সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ওই প্রধান শিক্ষক।

সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) সুব্রত কুমার সাহা বলেন, সরকারি টাকা  নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খরচ না করে বেআইনি ভাবে কাছে রাখা  অপরাধ। কাজ না করে উন্নয়ন বরাদ্দ আত্মসাৎ করা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে সদ্যযোগদানকৃত  উপজেলা শিক্ষা অফিসার পরিমল চন্দ্র বালা বলেন, আমি পর্যায়ক্রমে  উপজেলার সকল স্কুল ভিজিট করবো অনিয়ম পেলে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *