বিমানের ফাইল ফটো
নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পছন্দের ২৬ পাইলটকে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় নিয়োগের পর তাদের চাকরি বাঁচাতে ক্যাডেট পাইলট পদে নিয়োগের এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার খাতা কিংবা টেবুলেশনশিট ধ্বংসও করা হয়েছে।
আপাতত ২৬ পাইলটদের চাকরি রক্ষা পেলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা থেকে মুক্তি মেলেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদসহ দায়িত্বে থাকা তিন কর্মকর্তার।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন-সাবেক ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল হাই মজুমদার।
গতকাল মঙ্গলবার ১০ অক্টোবর, দুদকের জনসংযোগ দপ্তর মামলার বিষয়টি গণমাধ্যম কে নিশ্চিত করেছেন।
নিয়োগ পাওয়া ২৬ পাইলটের নাম যথাক্রমে : শেখ শিমন-আল-হাশেম, এরিক রেজা খন্দকার, শামির উদ্দিন আহমেদ, সারা শামসুল, অনিন্দা রেজা, আনোয়ার পারভেজ আকাশ, মো. মিরাজুল মুস্তাকিম পিয়াস, সালমান মোহাম্মদ আহসান, মো. মেহেদী হাসান, ইশতিয়াক আহমেদ, আদিব হাসিন, মো. শহীদ উল্লাহ, ইমতিয়াজ রেজা, হাসান আল জুবায়ের রনি, মাশরুফা করিম, মো. মেহেদী হাসান, ফারিহা তাবাসসুম,কাজী মাহাতাবুর রহমান, মো. শাহরিয়ার ইসলাম, তাসিন তাসনিম, এস এম রওনক ইসলাম, মো. মুখফিকুর রহমান, আতিফ আবরার খায়ের, মো. আবদুল মান্নান, আটিফ আরমান খায়ের ও শাহ তাজিন মাহমুদ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড ক্যাডেট পাইলট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যার বিপরীতে ১০৯ জন প্রার্থীর আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই করে ৮০ জন প্রার্থীর আবেদন নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বৈধ বলে বিবেচিত হয়। ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ৫৬ জন অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার খাতা দুদকের তলবেও হাজির করতে পারেনি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের জন্য ইনিশিয়াল স্ক্রিনিং, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষার জন্য পৃথক কমিটি গঠন করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে তিনটি কমিটি গঠনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালে ২৬ জন ক্যাডেট পাইলট পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ক্যাডেট পাইলট পদে নিয়োগের এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার খাতা ও পরীক্ষার ফলাফল (টেবুলেশনশিট) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড সরবরাহ করতে পারেননি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদ ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের জন্য প্রণীত অপারেশন ম্যানুয়াল পার্ট-১ অনুসরণ করে কোনো নিয়োগ কমিটি গঠন করেননি। তিনি নিজে স্বাক্ষর করে এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার একটি নম্বরপত্র তৈরি করেছেন। পরবর্তীতে ব্যবস্থাপক সুদীপ কুমার চক্রবর্তী তার একক স্বাক্ষরে ২৬ জন প্রার্থীর সম্মিলিত চূড়ান্ত ফলাফল শিট তৈরি করে।
তৎকালীন সহকারী ব্যবস্থাপক প্রশাসন (নিয়োগ) আবদুল হাই মজুমদারের স্বাক্ষরে পর্যায়ক্রমে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানের লক্ষ্যে নিয়োগপত্র ইস্যু করেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ২৬ জন ক্যাডেট পাইলট পদে নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদ, ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও সহকারী ব্যবস্থাপক প্রশাসন (নিয়োগ) আবদুল হাই মজুমদার নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ পরীক্ষার ৫৬টি এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার খাতা ও টেবুলেশনশীট ধ্বংস করে নিজেরা অবৈধভাবে লাভবান হয়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।