কক্সবাজার প্রতিনিধি : আজ শনিবার, ১১ নভেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ঢাকা- কক্সবাজার ট্রেন চলাচল প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের মাধ্যমে জনগণের দীর্ঘ দিনের কাঙ্খিত স্বপ্ন আজ পূরণ হবে সেই সাথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে পর্যায়ক্রমে কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইকনিক স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন।
আজ শনিবার ১১ নভেম্বর কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা – কক্সবাজার ট্রেন চলাচলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রেলপথ মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন ,পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেনে আসার জন্য দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক বাস্তবায়িত দোহাজারী-কক্সবাজার নবনির্মিত ডুয়েলগেজ রেলপথে ট্রেন চলাচল এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব।
তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত মানচিত্রের সাথে আমরা একটি খন্ডিত ও ক্ষতিগ্রস্ত রেলওয়ে নেটওয়ার্ক পাই। বঙ্গবন্ধু অতিদ্রুত বিধ্বস্ত রেলওয়ে নেটওয়ার্ক পুনর্বাসন করেন। এর পর রেলের উন্নয়নের পরিবর্তে রেলকে ধ্বংস করা হয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছরে অপশক্তির ঘৃন্য চক্রান্তে চরমভাবে অবহেলিত হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে; ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ধ্বংসন্মূখ রেলওয়ের ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভুত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগের সিদ্ধান্ত হওয়ারপর থেকে শুরু হয় রেলওয়ের উন্নয়ন । পরবর্তীতে, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার রেলওয়েকে গণপরিবহনে রুপান্তরের লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে। উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, নিরাপদ, আরামদায়ক, সময়োপযোগী, কৃষক বান্ধব ও পরিবেশ বান্ধব পরিবহন হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর।
মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার সেকশনে নব নির্মিত ডুয়েলগেজ রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। উপনিবেশিক শাসনামলে যে কক্সবাজার রেলপথ হবার কথা ছিল শতবছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকায় রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে। প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে ১০২ কি.মি. ডুয়েলগেজ মেইন লাইন ও ৩৯ কি.মি. লুপ ও সাইডিং লাইন।
প্রকল্পের আওতায় রেললাইন ছাড়াও পর্যটন নগরী কক্সবাজারে একটি আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনসহ ৯টি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। ০৬ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে একাধিক এসকেলেটর, লিফট । পর্যটকদের ভ্রমন সুবিধাদি প্রদানের জন্য উন্নত বিশ্বের আদলে আইকনিক ষ্টেশনটিতে ট্রেন পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হোটেল, শপিংমল প্রভৃতি পরিচালনার সুবিধা রাখা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ৩৯টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪ টি ছোট/মাঝারী কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে; ৯টি স্টেশনে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিগনালিং ব্যবস্থা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচররন নিশ্চিত করণের জন্য বেশ কিছু উদ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে।
তন্মধ্যে এশিয়ান হাতিদের নির্বিঘ্ন বিচরনের জন্য নির্মিত হয়েছে ১টি ওভারপাস ও ২টি আন্ডারপাস। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উভয় পার্শ্বে রোপন করা হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষাধিক বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ ও ঔষধি বৃক্ষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সাথে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সরাসরি রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এতে সহজে, কম সময়ে ও কম খরচে পর্যটক ও স্থানীয় জনগনের জন্য নিরাপদ আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী মুল্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ করতে পারবেন। অন্যদিকে এ অঞ্চলে উৎপাদিত লবন, মৎস্য ও বনজ সম্পদ দ্রুত দেশের অন্যান্য এলাকায় পরিবহন করা সম্ভব হবে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সাথে সংযোগ স্থাপন হবে। রেলওয়েকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে এবং ট্রেন চলাচল বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমানে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের করা হচ্ছে।