এবার নির্বাচনে না আসলে আগামীদিনে বিএনপির নাম-নিশানাও থাকবে না ———-শেখ ফজলুল করিম সেলিম

Uncategorized জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি

বিশেষ প্রতিবেদক ঃ   ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে আগামীদিনে বিএনপির নাম-নিশানাও থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।


বিজ্ঞাপন

গতকাল  সোমবার ৪ ডিসেম্বর, বিকেলে দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন প্রাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, শেখ ফজলুল হক মণি’র ৮৫তম জন্মদিবসের স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ মন্তব্য করেন।


বিজ্ঞাপন

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “মাওলানা ভাসানী ন্যাপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনি মুরব্বি মানুষ। আমি ওনার সমালোচনা করতে চাই না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চায়না যে রকম ইঙ্গিত দিয়েছিলো উনি সে মোতাবেক চলতেন। এর আগে পাকিস্তান ও আইয়ুবের প্রশংসাও গেয়েছিলেন। সত্তরের নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মাওলানা ভাসানী ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামে সাইক্লোনে অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন নাই। বঙ্গবন্ধু বলেছিল, যে দশটি জায়গায় সাইক্লোন হয়েছে সেখানে নির্বাচন পরে হবে। কিন্তু নির্বাচন না হলে পাকিস্তান তো আরো বেনিফিটেড হবে। তখন বঙ্গবন্ধু বললো, আমি নির্বাচনে যাবো। এই বাংলায় কে নেতৃত্বে দেবে? সবাই বড় নেতা। অহিদুজ্জামান বড় নেতা। ছবুর খান বড় নেতা। ফকা চৌধুরী বড় নেতা। শাহ আজিজ বড় নেতা। তারা মুসলিম লীগের সাথে ছিল। ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলে। তোমরা ইলেকশনে আসো বা না আসো। তোমরা সত্তরেও আসে নাই। তাতে কি হয়েছে? মাওলানা ভাসানীর ওই দলটা এখন আর আছে? এই দলই তো নাই। একইভাবে এবার যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে, তাহলে, ইনশাল্লাহ — সামনের দিনে তোমাদের নাম-নিশানা-ঠিকানাও থাকবে না।”

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালিত করতে বিএনপি গঠন করেছিল মন্তব্য করে শেখ সেলিম বলেন, “বিএনপির জন্ম কোথা থেকে হয়েছে? না, ক্যান্টনমেন্ট থেকে না। এটা হয়েছে — আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তানী ভাবধারায় চলবো, সেই চিন্তা-চেতনা থেকে। বিএনপির সমর্থক ছিল যত রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস। আরেকটা হল মাওলানা ভাসানী পার্টি — ন্যাপ । জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে। মোস্তাক হলো ন্যাপের সমার্থক। জিয়াউর রহমান যখন পার্টি গঠন করছে তখন ফখরুল ইসলাম, খোকা, মান্না ছাত্র ইউনিয়ন করতো। এটা নিয়েই সে বিএনপি করছে। এদের উদ্দেশ্য হলো বঙ্গবন্ধু ও এদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।”

সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ও শেখ ফজলুল হক মণি’র ছোট ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস তাঁর প্রয়াত পিতাকে বাংলাদেশের চে গুয়েভারা হিসেবে অভিহিত করেন।

 

শেখ মণি বাংলার চে গুয়েভারা ছিলেন ———ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস

বিশেষ প্রতিবেদক ঃ    ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস বলেন, “স্বাধীনতার পর শেখ মণি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বাংলার বাণীকে একটি আধুনিক ও জনপ্রিয় পত্রিকায় রূপান্তরিত করেন। সেই পত্রিকায় তিনি নিজেই সম্পাদকীয়সহ প্রবন্ধ লিখতেন। সেক্ষেত্রে তিনি সরকারকেও ছাড় দেননি। তিনি বিপ্লবী চেতনার মানুষ ছিলেন। যদি তৎকালীন সমসাময়িক নেতৃবৃন্দের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় — তৎকালীন সবচেয়ে মেধাবী, প্রজ্ঞাবান নেতা ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। আর যদি সারা বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে — তিনি বাংলার চে গুয়েভারা ছিলেন। বিপ্লবী জননেতা ছিলেন। বিপ্লবই তার চেতনা এবং রক্তে ছিল। তাই তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, যে বিশাল বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে সেই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রতি-বিপ্লব হবেই। তাই তিনি লিখেছিলেন, বিপ্লবের পর প্রতি-বিপ্লব আসবেই। তিনি এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সরকারের উচ্চ মহলকে সতর্ক করেছিলেন।”

শেখ মণি’র নেতৃত্বে গঠিত মুজিব বাহিনী সারাবিশ্বের অন্যতম গেরিলা ফোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “শেখ মণি যেমনি হুলিয়া মাথায় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে নিউক্লিয়াস হিসেবে সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন, মেধাবী ছাত্রনেতা তৈরি করেছেন তেমনি ২৬ শে মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পরেই আগরতলা গিয়ে মুজিব বাহিনী গঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু সবাইকে যুদ্ধের নকশা, পরিকল্পনা সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন। ভারতে গিয়ে কোন বাসায় উঠতে হবে? কার সাথে দেখা করতে হবে? কিভাবে যুদ্ধ হবে? কিভাবে দেশ স্বাধীন হবে? সব কিছু তিনি বুঝিয়ে দিলেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দ বেরিয়ে গেলেন। তারপরে বাবার কাছে বঙ্গবন্ধু একটা চিরকুট দেন। সেই চিরকুটের বদৌলতে বাবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে এককভাবে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ভারত সরকার মুজিব বাহিনীকে সকল রকম অস্ত্র, প্রশিক্ষণ সবকিছুই দেন এবং মুজিব বাহিনী হয়ে ওঠে সারাবিশ্বের মধ্যে ঐতিহাসিক একটি গেরিলা ফোর্স। মেজর জেনারেল মালেকশ ছিলেন মুক্তিবাহিনী তথা পুরো যৌথবাহিনীর প্রধান। গেরিলা ফোর্স পরিচালনার জন্য ভারত সরকার আরেকজন চিফ নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ছিলেন জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ ফজলুল হক মণি সম্পাদিত ‘বাংলাদেশে গণহত্যা’ এর ইংরেজি ভার্সন এবং স. ম. ইফতেখার মাহমুদ ও মাহমুদুল আলম তারেক সম্পাদিত ‘শেখ মণি’র কথামালা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বক্তব্য পর্ব শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ ফজলুল হক মণি, শামসুন্নেছা আরজু মণিসহ ১৫ অগাস্ট কালরাতে শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্চাসেবক লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি সাধারণ-সম্পাদকবৃন্দ, করপোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *